সুরাইয়া, সাতঘরা–কানখুলি, মহেশতলা#
বাজারে এখন সব জিনিস মেহঙ্গা। সবজির কী অবস্থা! চল্লিশ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। আমাদের ঘরে সাতটা পেট। ঠিকে কাজের দু-আড়াইশো টাকা মাইনেতে কিছু হয়? সবজি কিনতে গেলে কেজিখানেক দরকার, যাই নিই কমপক্ষে পাঁচশো তো নিতেই হবে। এখন লোকের বাড়িতে দু-বেলা ঠিকে কাজ করে কত পাই? মাস গেলে আড়াইশোটা টাকা। দিনে দশ টাকাও হয় না। বেলা হিসেবে ধরলে পাঁচ টাকাও যদি হয়, বলো তো পাঁচ টাকায় আজকের দিনে কিছু হয়? তাহলে সংসারটা চালাতে হলে কত বাড়িতে কাজ ধরতে হবে, বলো তো তোমরা? এখন কেউ পাঁচ বাড়ি করে, কেউ বেশি করে। সাত বাড়িতে ঠিকে কাজ করতে গেলে সেই সকাল থেকে লেগে সন্ধ্যে হয়ে যায় ঘরে ফিরতে।
এই জন্য তো আমাদের পাড়ার সব মেয়েরা ঠিকে কাজ ছেড়ে দিচ্ছে। ওস্তাগরের কাছে (জিন্সের প্যান্টের) সুতো কাটার কাজ করলে ডেলি ষাট টাকা পাওয়া যায়, সঙ্গে দশ টাকা টিফিনের। কোথাও কোথাও আশি টাকাও পাওয়া যায়। ওয়াশ ফ্যাকট্রিতেও মেয়েরা যাচ্ছে। বেশিরভাগ জিন্সের (কেমিকাল ধোলাইয়ের) কাজ হয়। ছেলেরা মেশিনে কাজ করছে, মেয়েরা কাপড় শুকোতে দিচ্ছে। আরও সব মেয়েরা দল বেঁধে পাঁচুড়ে আর কোথায় কোথায় দর্জি-কারখানায় কাজ করতে যাচ্ছে। পদিরহাটিতে, খালধারীর ভিতরে বিরাট সব ফ্যাকট্রি হয়েছে। সেখানে একশো টাকা রোজ। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা অবধি ডিউটি। মাঝখানে এক ঘণ্টা ভাত খাওয়ার ছুটি। তাও লোকের বাড়ি ঠিকে কাজের চেয়ে ঢের ভালো। কেউ আর নতুন করে ঠিকে কাজ নিতে চাইছে না।
এই তো একটা মেয়ে তিন বাড়িতে ঠিকে কাজ করত এই পাড়ায়। সে চলে যাচ্ছে সল্টলেকে। মাসে ছ-হাজার টাকা মাইনে আর দু-বার বাড়িতে আসতে পারবে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ডাক্তার, তাদের রান্নার লোক, ঠিকে লোক সব আছে। একে ওই বাড়িতে থেকে সব কাজ দেখাশুনা করতে হবে।
Leave a Reply