ভারতবর্ষের এক সমৃদ্ধ জৈব-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে; একই সঙ্গে রয়েছে দশ হাজার বছরের কৃষিকাজের ইতিহাস আর নানান স্থানীয় জলবায়ু ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই বিপুল বৈচিত্র্যময় শস্য ও বহু গুণ ও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শস্যের ধরন। কিন্তু বিগত মাত্র চার-পাঁচ দশকে ‘সবুজ বিপ্লব’-এর সূত্রপাতের মধ্য দিয়ে আমাদের কৃষি-জীববৈচিত্র্য হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে তা চিরতরে লোপ পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তার ফলে আমাদের ভবিষ্যত খাদ্য নিরাপত্তা ও কোটি কোটি চাষির জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।
বীজ উৎসবের উদ্দেশ্য হল জনসচেতনতা বাড়িয়ে তোলা এবং এই অমূল্য কৃষি-জীববৈচিত্র্য ও তার সঙ্গে যুক্ত যাবতীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যকে সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও আদান-প্রদান করার বিষয়ে নীতিগত সহায়তা করা। এর ওপরেই আমাদের দেশের মানুষের বেঁচে থাকা ও উন্নতি নির্ভরশীল, বিশেষত তা এমন এক সময়ে যখন শক্তি, বিশুদ্ধ জল ও উর্বর জমির অভাব ক্রমবর্ধমান অস্থির বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার উঠানামার ফলে বেড়ে গেছে।
মুম্বই বীজ উৎসব (১৯-২১ ফেব্রুয়ারি ২০১২) ছিল এমন এক প্রারম্ভিক উদ্যোগ, যা ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের গোষ্ঠীগুলিকে একত্রিত করেছে যারা শস্য বীজের বৈচিত্র্যকে সংরক্ষিত ও প্রসারিত করার কাজে ব্যাপৃত রয়েছে। এক হাজারের বেশি বিচিত্র বীজের প্রদর্শনী ওখানে ছিল। বহু বই ও পোস্টারও সেখানে রাখা হয়েছিল। এছাড়া ছিল সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলিতে ফিল্ম-শো, আলাপ-আলোচনা, পাশাপাশি ছিল তিনটি বড়ো অ্যাকাডেমিক ও গবেষণা কেন্দ্রে কিছু চিন্তাউদ্দীপক সেমিনার।
মুম্বই বীজ উৎসবের উষ্ণ ও উৎসাহব্যাঞ্জক সাড়া পেয়ে আমরা স্থির করি দেশের অন্য অঞ্চলের মানুষের কাছে যাব। কলকাতা বীজ উৎসব হল এই সূত্রে দ্বিতীয় উদ্যোগ। এর বিষয় হল কৃষি-জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ-সহায়ক কৃষিকাজ, দুটি বিষয়ই ঘনিষ্ঠভাবে আন্তঃসম্পর্কিত। একদিকে আমাদের কৃষি-জীববৈচিত্র্যের ওপর আঘাতকে প্রতিহত করতে হবে, অন্যদিকে এর কার্যকর সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবনের জন্য এক বিস্তৃত সামগ্রিক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
কলকাতা বীজ উৎসবে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের, বিশেষত পূর্ব ভারতের কমপক্ষে দশটি বীজরক্ষা-গোষ্ঠী অংশ নেবে। সাংগঠনিকভাবে এটি একটি ব্যাপক সহযোগিতামূলক উদ্যোগ। এতে পরিবেশ, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের বিষয়গুলির সঙ্গে যুক্ত বহু গোষ্ঠী ও ব্যক্তি শামিল হবে।
বীজ উৎসবের সংগঠকদের প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি, কলকাতা, ১৪ এপ্রিল। যোগাযোগ ভরত মনসাটা (০৩৩-২২২৯৬৫৫১)
Leave a Reply