সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ১৫ এপ্রিল, এনএপিএম-এর প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ছবিতে ৫ এপ্রিল মুম্বইয়ের থানেতে একটি বিল্ডিং ভেঙে পড়ার ঘটনায় আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে যাওয়া এবং পরে উদ্ধার হওয়া একটি শিশু। ছবিসূত্র রয়টার#
মহারাষ্ট্রে দানবাকৃতি বিল্ডার-কনট্রাক্টর কোম্পানি এবং সরকারের মধ্যে দালালি-আঁতাত এক অসহ্য জায়গায় পৌঁছেছে। এই দুর্নীতির চেহারাটা প্রকাশ পেয়েছে খুব করুণ ভাবে, যখন দেখা গেল মুম্বইয়ের থানেতে ২-৩ মাসের মধ্যে তৈরি হওয়া একটি আটতলা বিল্ডিং ভেঙে পড়ে মারা গেল ৭০ জন। আর এই সবের মূলে আছে সরকারি স্লাম রিহ্যাবিলিটেশন অথরিটি বা বস্তি পুনর্বাসন কর্তৃপক্ষ (SRA).
সারা দেশেই বস্তি উন্নয়নের নামে যেটা চলছে তা হল বস্তির জায়গায় উঁচু উঁচু বিল্ডিং বানিয়ে তাতে বস্তিবাসীদের ঢুকিয়ে দিয়ে বাকি খালি হয়ে যাওয়া জমি বিশাল দামে বেচেবুচে দেবার কারবার। আর এটা সরকারি সংস্থা করছে না বলাই বাহুল্য। এসআরএ এই কাজের জন্য বরাত দিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন প্রাইভেট বিল্ডারদের।
এই দুর্নীতিতে সবচেয়ে বড়ো মদত জুগিয়েছে বস্তি পুনর্বাসন আইনের কয়েকটি ধারা, যেখানে বলা আছে, অন্তত ১৯৯৫ সাল থেকে যারা বস্তিতে আছে, তাদের কেবল পুনর্বাসন দেওয়া হবে; একটি বস্তির ৭০ শতাংশ ঘর যদি পুনর্বাসনে রাজি হয়ে যায়, তাহলে বাকিদের সম্মতি না থাকলেও বস্তি পুনর্বাসনে হাত দেওয়া যাবে। এই দুটি ধারার ফাঁক দিয়ে বিল্ডাররা গুণ্ডা লাগিয়ে জোর করা থেকে শুরু করে নথি জাল করা — সবই করে চলেছে। এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও চলছে বিভিন্ন বিল্ডার-প্রোমোটার দানবদের। যেহেতু ফাঁকা জমির বাজারদর আকাশছোঁয়া, তাই বস্তিবাসীদের প্রলুদ্ধ করা হচ্ছে কখনো কখনো বিশাল অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে। অর্থাৎ এসআরএ কর্পোরেটদের একটি প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়েছে।
যদিও মুম্বইয়ের ৬০ শতাংশ অধিবাসীই বস্তিবাসী। টেক পার্ক থেকে হাইওয়ে — বিভিন্ন বড়ো প্রকল্পের কারণে নিয়ত উচ্ছেদ হয়ে এইসব বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তাই ১৯৯৫ সালের সীমাটিই বেআইনি।
২০০৪ সাল থেকেই মুম্বইয়ে বস্তি উচ্ছেদ শুরু হয় জোরকদমে, তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিলাস রাও দেশমুখ। কেলেঙ্কারিও শুরু হয় তখন থেকেই। আদর্শ হাউসিং কেলেঙ্কারি, হিরানান্দানিদের জমি দখল এসবেরই প্রমাণ। খার গোলিবারেও এরকম ১৪০ একর জমিতে ৪৬টি সোসাইটির ২৬ হাজার পরিবারকে উচ্ছেদের (বা পুনর্বাসনের) প্রক্রিয়া শুরু হয়। এসআরএ-এর আইনের একটি স্পেশ্যাল ধারা (৩ কে) ব্যবহার করে এই পুরো প্রকল্পটিই একটি কর্পোরেটের হাতে দিয়ে দেওয়া হয়, যার নাম শিবালিক ভেনচার। ফলে টেন্ডার ডাকার আর প্রয়োজন হয়নি, বাসিন্দাদের কে কতটা সুবিধা দিতে পারবে এই পুনর্বাসনের সময় — তার প্রতিযোগিতায় বাসিন্দাদের যে ক্ষতিপূরণে সুবিধা হয় তাও মেলেনি এক্ষেত্রে।
গোলিবার সোসাইটির বাসিন্দাদের ডাকে ২০১১ সালের মে মাসে ৯দিনের অনশনে বসেছিল মেধা পাটেকর-এর নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রের ণ্ণঘর বানাও আন্দোলন’. সেই অনশনের মধ্যে দিয়ে তৈরি হয়েছিল দুটি সরকারি কমিটি, একটি বস্তির নথিভুক্তকরণ প্রক্রিয়াটি দেখভাল করার জন্য, আরেকটি এসআরএ-এর দুর্নীতি দেখভাল করার জন্য। কিন্তু দুটির কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি।
২০১৩ সালের শুরুতেই আজাদ ময়দানে একটি গণ অবস্থানের মধ্যে দিয়ে আরও একটি তদন্ত কমিটি তৈরি হয়। বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দারা এক হয়ে মিছিলও সংগঠিত করে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ৬টি এসআরএ প্রকল্প পুনর্বিবেচনার ব্যবস্থা হয়। ৭-৮ ফেব্রুয়ারি এসআরএ অফিসে ওই প্রকল্পগুলি নিয়ে শুনানি শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, শুনানি চলাকালীন কোনো বস্তি ভাঙচুর হবে না। কিন্তু সেই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ২-৩ এপ্রিল গোলিবারের গণেশ ক্রুপা হাউসিং সোসাইটিতে ভাঙচুর শুরু করে শিবালিক বিল্ডার্স। এমনকী কেন্দ্রীয় আবাসন মন্ত্রী চিঠি লিখে এই ভাঙা বন্ধ করার কথা বললেও কেউ কর্ণপাত করেনি। ফলে ৪ তারিখ থেকে ফের অনশনে বসেন মেধা পাটকর এবং মাধুরী শিবকর.
৮ দিন অনশন চলার পর ১২ এপ্রিল বস্তিবাসীদের একটি মিছিল মুখ্যমন্ত্রীর বাংলার সামনে মিচিল করে গিয়ে তাঁর কাছে দাবিসনদ পেশ করে আসে। মুখ্যমন্ত্রী নিম্নলিখিত বিষয়ে সম্মতিজ্ঞাপন করেন : গণেশ ক্রুপা সোসাইটিতে বাসিন্দাদের সম্মতি ছাড়া সেখানে ভাঙচুর করা যাবে না। শর্ত নিয়ে শীঘ্র মিটিং হবে। পুনর্বাসন করা হয়েছে সামরিক বাহিনীর জমিতে, ফলে সামরিক বাহিনী যদি আদালতে জিতে ওই জমির দখল নিয়ে নেয়, তাহলেও কেউ ঘরছাড়া হবে না। ৬টি এসআরএ প্রকল্পের সম্পূর্ণ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত (১৫ মে-র মধ্যে তদন্ত সম্পূর্ণ করার কথা বলা হয়েছে) কোনো বস্তিতে ভাঙচুর হবে না ইত্যাদি।
১৩ এপ্রিল অনশন প্রত্যাহার করা হয়।
Leave a Reply