শমিত। শান্তিপুর। ২৩ অগাস্ট, ২০২০।#
বর্ষার দুপুরে কথা হচ্ছিল টোটো রিক্সাচালক মুফুভাই এর সঙ্গে। বাড়তি রোজগারের জন্য আংশিক সময়ে টোটো চালায় মুফু। হররোজ দুপুরে শান্তিপুরের মুন্সির পুল অঞ্চলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে খদ্দেরের আশায়। কথায় কথায় মুফুর কাছ থেকে জানা গেল বর্তমানে রোজগারপাতির হালহকিকত। পরিবারে চারজন সদস্য। মুফু একমাত্র রোজগেরে। একবেলা পারিবারিক বিঘা চারেক জমি চাষ আবাদ করলেও সংসার চালাতে বছর পাঁচেক আগে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একখানা টোটো গাড়ি কেনে। তখন ভালোই প্যাসেঞ্জার পাওয়া যেত। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টাকা রোজগার হতো। করোনাকালে প্রায় মাস তিনেক গাড়ি রাস্তায় নামেনি। এখন দুপুর থেকে সন্ধে অবধি পাঁচ সাত জন প্যাসেঞ্জার পাওয়া যায়। খুব বেশি হলে ১০০ থেকে ১২০ টাকা রোজগার হয়। ব্যাটারি চার্জের জন্য প্রতিদিন ৫০ টাকা ব্যয় হয়। গাড়ি ফেলে রাখলে ব্যাটারি বসে যেতে পারে- এই আশঙ্কায় প্রতিদিন রাস্তায় বেরতে হয়, অথচ প্যাসেঞ্জার খুবই কম। বেশিরভাগই একজন প্যাসেঞ্জার নিয়ে টোটো গাড়িগুলো ছুটছে। ন্যূনধিক ভাড়া মাথাপিছু দশ টাকা। রাস্তায় টোটো গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু খদ্দের কোথায়? আবার চাষের কাজেও লাভ দেখা যাচ্ছে না। ৪ বিঘা জমি। ২ বিঘার পাট কাটতে পেরেছে। এখনও ২ বিঘা জমির পাট মাঠেই রয়েছে। পাটের দাম এবার কী দাঁড়াবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে মুফুর মনে। তবে পাট উঠলে সর্ষে, ধনে অথবা মুসুরি কিছু একটা ফসলে লাগাবে তা জানা গেল। মুফু জানালেন, সরকার চাল দিচ্ছে বলে কোনোরকমে সংসার চলে যাচ্ছে। চালের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে সরকার ঠিক কাজ করেনি মত দিলেন মুফু।
পেয়ারা আর পাতিলেবু বিক্রি করেন। খুব কম লাভ রেখে। আজ পেয়ারা দশ টাকা কিলো আর পাতিলেবু দশ টাকায় দশটা। আগে পাওয়ারলুম বুনতেন। কারিকর পাড়ায় বাড়ি। ভোর পাঁচটা থেকে সাড়ে তিনটে চারটে পর্যন্ত কাজ করেন। ১০০/১৫০ টাকা রোজগার হয়। স্টেশন এলাকা থেকে শুরু করে বাইগাছিপাড়া, ঘুরতে ঘুরতে থানার মোড় হয়ে ঘুরতে ঘুরতে বাড়ি। প্রায় পুরো শান্তিপুর শহরের সিংহভাগটাই। প্রায় এগার ঘন্টা সাইকেলে ঘুরে বিক্রি করেন। মোহাব্বৎ।
ছবি ও প্রতিবেদন ৫ অগাস্ট, জয়ন্ত ব্যানার্জির সক্রিয়তায়
Leave a Reply