কুণাল গুহ রায়, কলকাতা, ১৮ নভেম্বর#
১৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত্রিবেলা বালি জগাছার জলাশহিদ তপন দত্তর ভাগনে পিন্টু ধর (২৫) কাজকর্ম সেরে বাড়ি ফিরছিল। ও মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভের কাজ করে। সেই সময় ডাক্তারদের সঙ্গে মিটিং করে বাড়ি ফিরছিল। সেই সময় বালি জোড়া অশ্বত্থ তলা লেভেল ক্রসিং-এর কাছে যেখানে তপন দত্তকে আঘাত করা হয়েছিল, সেই জায়গাটার পাশেই একটা ক্লাব আছে। সেই ক্লাবের সামনে কয়েকটা ছেলে রাত আটটা নাগাদ প্রথমে ওকে বলে, এই কালু (ডাকনাম) দাঁড়া, আস্তে চালা। ও গাড়ি আস্তে করে। এরপর চার পাঁচজন এসে ওর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হেলমেট খুলে মাথায় চপার দিয়ে আঘাত করা হয়। ওর মোটরবাইকের পেছনে ওর এক বন্ধু ছিল। আমাদের মনে আছে, তপন যেদিন এখানে খুন হয়, সেদিন তপনের মোটরবাইকের পেছনেও তপনের এক বন্ধু ছিল। পিন্টুর বন্ধু কিন্তু কোনওভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি, যেমন সেদিন তপনের সহকর্মী কোনওভাবে আহত হয়নি। কিন্তু তপনের ভাগনে পিন্টুকে ব্যাপক মারধোর করা হয়।
বেশ কিছুদিন ধরেই ওকে ফোনে ভয় দেখানো হচ্ছিল — ণ্ণবেশি বাড়াবাড়ি করিস না, তোর মামিমা-কে বল, মামলা তুলে নিতে।’ ণ্ণবেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু সব সমেত উড়ে যাবি’ … এইসব। কিন্তু প্রতিমা দত্তর ছিল মোদ্দা বক্তব্য, আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। যদি মারা যেতে হয়, যাব। এত বড়ো অন্যায়, এত বড়ো অবিচার মেনে নেওয়া যায় না। তাই হাইকোর্টে চলা তপন দত্তর হত্যা মামলা উনি চালাবার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন, প্রয়োজন হলে সুপ্রিম কোর্টেও যাবেন বলে ঠিক করেন। এবং ওনার সহকর্মী ও সহযোগী পরিবেশকর্মীরা ওনার সাথে একমত হয়ে ওনার সাথেই আছেন। সেটাই প্রতিমা দত্তর মনের জোর। ফলে তপন দত্তের হত্যাকারীদের চাপ বাড়ছে, উত্তেজনা বাড়ছে। পরিবারটাকেই শেষ করে দেব বলে চেষ্টা চরিত্র হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বালি জগাছার পরিবেশ কর্মী তপন দত্ত বালির জয়পুর বিল বুজিয়ে কর্পোরেট প্রকল্প হওয়া রুখতে এলাকার মানুষকে নিয়ে আন্দোলন করতে করতে ২০১১ সালের ৬ মে খুন হয়ে যায়। তাঁর খুনে অভিযুক্ত ষষ্ঠী গায়েন, অসিত গায়েন, রমেশ মাহাত প্রমুখরা সবাই এলাকার তৃণমূল পার্টির কর্মী বলে পরিচিত। তারা এখন জামিনে মুক্ত। তপন দত্তও তৃণমূল পার্টির কর্মী ছিলেন।
আমার মতো যারা পরিবেশকর্মী, তাদের একটা মোদ্দা বক্তব্য, একজন মুখ্যমন্ত্রী একটি পরিবারকে রক্ষা করতে সক্ষম না, তাহলে গোটা রাজ্যের পরিবেশ কি করে রক্ষা করবেন? পরিবেশকর্মীদের এই সঙ্কটের সময়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির কাছে সমর্থন চাওয়া দরকার — তোমরা সবাই মিলে এই খুন, এই অন্যায়, একটা পরিবারকে শেষ করে দেওয়ার যে চেষ্টা হচ্ছে, তা রুখতে আমাদের সাথে তোমরাও নামো।
১৭ নভেম্বর সুনন্দ সান্যাল গিয়েছিলেন প্রতিমা দত্তের বাড়ি। তাছাড়া এপিডিআর গিয়েছিল।
প্রতিমা দত্তর পরিবার পিন্টুকে মারধোর দেওয়ার জন্য যে ব্যক্তির (ববি ওরফে বাবুসোনা) বিরুদ্ধে থানায় ডায়রি করেছিল খুনের চেষ্টা (৩০৭ ধারা),ভয়ঙ্কর অস্ত্র দিয়ে আঘাত (৩২৬ ধারা), অনেকে মিলে সংগঠিত করা অপরাধ (৩৪ ধারা) ধারায়। সেই ববি ঘটনার দু’দিন পর ১৭ নভেম্বর থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করে আহত পিন্টু ধরের বিপক্ষে। অথচ পুলিশ ববিকে গ্রেফতার করল না। এটি একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ঘটনা।
Leave a Reply