সুব্রত ঘোষ, চাকদহ, ৩ নভেম্বর#
‘স্বপ্নকে পরিপার্শ্বের কাঠ-খড়-রোদের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে’ ১৫তম ‘শিশুকিশোর বিকাশ মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল নদীয়ার চাকদহের ধনিচা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ২৮অক্টোবর -৩রা নভেম্বর —৭দিনের এই মেলায় পশ্চিমবঙ্গের ১৬টি জেলা থেকে ১৬৫ জন অংশগ্রহণ করেন। তারমধ্যে ৭০ জন ছিল শিশু-কিশোর। বাকিরা ছিলেন বড়ো বা মেজ — যারা এই কর্মযজ্ঞ সামাল দেন প্রতিবছর।
৭ দিনের এই কর্মশালায় নাটক-কে সামনে রেখে চলেছে শিশু-কিশোরের স্বপ্নের পৃথিবী তৈরির প্রক্রিয়া। শুধুই নাটক না —-ছিল প্রাতঃভ্রমণ, ব্যায়াম, গান, থিয়েটার গেমস, ছবি আঁকা, লেখা, ফেলে দেওয়া কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসে তৈরি হাতের কাজ।আরো ছিল আমন্ত্রিত নাট্যাভিনয়, যেমন খুশি সাজো, প্রাথমিক চিকিৎসার ঘরোয়া উপায় সংক্রান্ত আলোচনা। এমনকি কারো সঙ্গে কথা না বলে চুপ করে নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলার ব্যবস্থাও ছিল !
পুনরাবৃত্তির আশংকায় উদ্যোক্তারা প্রতিবছর-ই চেষ্টা করেন পুরাতন উদ্যোগকে নতুনকরে সাজিয়ে নেওয়ার। ‘প্রকৃতি’ ছিল এবারের ভাবনা-চিন্তার কেন্দ্রে। প্রকৃতিকে সামনে রেখেই গাওয়া হয়েছে গান, নাটক বানিয়েছে ছোটোরা। উল্লেখযোগ্য, এত বড় মেলায় ছিলনা কোনো লিখিত দায়িত্ব-বন্টন-ব্যবস্থা। মেলার সহজ সুরে ধরা দিয়েই সাতদিনের আয়োজন সামলেছেন ছোটো-বড় প্রত্যেকে।
সক্রিয় ভাবে নাটকের কাজে যারা অংশগ্রহণ করে বয়স অনুযায়ী তাদের ৫টি দলে ভাগ করে নিয়ে এবারের মেলায় মোট ৪টি ছোটোদের নাটক ও ১টি ছোটো-বড় সকলের উপযোগী নাটক বানানো হয়। মেলার ঐতিহ্য অনুযায়ী শেষ দিন ৩রা নভেম্বর এলাকার মানুষ ও মেলার সকলের কাছে পরিবেশিত হয় নাটক, গান ও হাতের কাজ।
সমাপ্তি অনুষ্ঠানের একেবারে শুরুতেই ছিল মেলার সকলের মিলিত গান। গানের পরে কচিকাঁচাদের নাটক জ্ঞকিচির মিচিরঞ্চ সহজেই দর্শক মনকে স্পর্শ করে। এরপরে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে শ্রী তীর্থঙ্কর চন্দ জানান, ‘আমাদের স্বপ্ন গুলোকে এই নদী-প্রস্তর-পর্বতসংকুল পৃথিবীর উপযুক্ত করার আকাঙ্খায় আমরা একটি বুদবুদ সমান দুঃসাহস দেখিয়েছিলাম ১৯৯৮-এ। সরবেড়িয়া-য়। সেই শুরুর দিনগুলিতে যারা আমাদের সাথে ছিলেন তাদের অনেকেই আজ আমাদের মধ্যে নেই। অনেকেই বৃদ্ধ হয়েছেন। তবু এটাই এই মেলার বিশেষত্ব যে, কেউ না কেউ এগিয়ে এসে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে শিশু মেলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’
পরিবেশিত নাটকগুলির মধ্যে ‘সেদিন’ নাটকটি মেলার এবারের ভাবনা ও বর্তমান সময়ের সমস্যাকে দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরে। মেজদের নাটকটি বৃষ্টির কারণে মাঝপথেই থামিয়ে দিতে হয়।
মেলার শেষে কথা হল কিশোর ইমন-এর সাথে। সে কথায় কথায় জানালো ,
আমি মেলায় প্রথমবার এলাম। এসেছিলাম সার্টিফিকেটের আশায়। এসে দেখলাম এখানে সে ব্যবস্থা নেই। তবু এই সাতদিন আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। —-জীবনে একগ্লাস জল গড়িয়ে খাইন, একা একা নিজেকে অন্যদের মাঝে আবিষ্কার করিন, যে আমি অন্যের কথা মন দিয়ে শুনতে চাইনি কোনোদিন, সেই আমি শিশুমেলায় খাবার পরিবেশন করেছি, নিজেই নিজের থালা ধুয়েছি, ভাইদের ছড়া লিখতে হেল্প করেছি।
এমন একটি উদ্যোগ নিঃশব্দে ১৫ বছর পথ হাঁটছে কোনো সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য ছাড়াই, একেবারেই সদস্যদের সম্মিলিত উদ্যোগ ও নিরলস পরিশ্রমে। জয় হোক।
Leave a Reply