কুশল বসু, কলকাতা, ১৪ সেপ্টেম্বর, এএফপি-র তোলা ছবিতে কায়রোয় মার্কিন দূতাবাসে বিক্ষোভ#
পয়গম্বর মহম্মদ-কে নিয়ে ফের একটি মার্কিন ব্যঙ্গ চলচ্চিত্রের কারণে আরব দুনিয়ায় মার্কিন দূতাবাসগুলিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মিশর, লিবিয়া বা ইয়েমেনের মতো দেশগুলিতে এই বিক্ষোভকারীরা সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও তাদের মারমুখী মেজাজ এবং মার্কিন দূতাবাসে হামলার কারণে তা দেশ-বিদেশের মিডিয়ার মূল খবরে পরিণত হয়েছে।
২০১১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার হলিউডে বানানো চলচ্চিত্র ‘ইনোসেন্স অফ মুসলিমস’ এবছর জুন মাসে প্রকাশ পেলেও তা খুব একটা চলেনি। জুলাই মাসে ইন্টারনেটের ভিডিও প্রচার করার ওয়েবসাইট ইউটিউবে ওই সিনেমাটির একটি ট্রেলার বা সংক্ষিপ্ত অংশ তুলে দেন এক ব্যক্তি, নিজেকে স্যাম বাসিল, এবং মার্কিন-ইজরায়েলি বলে পরিচয় দিয়ে (যদিও এই নামে কোনও ব্যক্তি নেই বলে জানিয়েছে মার্কিন এবং ইজরায়েলি কর্মকর্তারা)। ৪ সেপ্টেম্বর ওই একই ব্যক্তি ট্রেলারটি আরবি ভাষায় ণ্ণডাব’ করিয়ে ইউটিউবে তুলে দেন। মিশরে এই আরবি অনুবাদটি বড়ো মিডিয়ার নজরে আসে এবং তাদের মধ্যে গোঁড়া মুসলিম বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক চ্যানেল এবং অনুষ্ঠানগুলো এই ভিডিওটি সম্প্রচার করতে শুরু করে। যেমন খালেদ আবদাল্লা বলে একজন ৮ সেপ্টেম্বর এটি সম্প্রচার করে একটি চ্যানেলে। পরে জানা যায়, মুসলিম বিদ্বেষী মার্কিন নাগরিকরাও, যেমন টেরি জোনস ( যিনি ফ্লোরিডাতে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান প্রকাশ্যে পুড়িয়েছিলেন এবং যার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বে বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গা হয়েছিল ২০১০ সালে), এই ভিডিওটি আমেরিকায় দেখানোর পরিকল্পনা করেছিল এবছর ১১ সেপ্টেম্বর। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন মুলুকে এতাবৎ কালের সবচেয়ে বড়ো সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছিল। যার অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলি এখনও সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে আফগানিস্তান এবং ইরাকে।
এই সিনেমাটির প্রতিবাদে এবং সিনেমাটির সম্প্রচার বন্ধ করার দাবি নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর মিশরের রাজধানী কায়রোর মার্কিন দূতাবাসে প্রথম বিক্ষোভ দেখায় প্রায় ৩০০০ মিশরীয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দূতাবাসের দেওয়ালে উঠে মার্কিন পতাকাটি টেনে নামিয়ে একটি কালো পতাকা তুলে দেয় সেখানে। মিশরীয় পুলিশ কোনও বলপ্রয়োগ না করে এই বিক্ষোভকারীদের দূতাবাসের বাইরে বের করে দিতে সক্ষম হয়।
কিন্তু ওই ১১ সেপ্টেম্বরই লিবিয়াতে মার্কিন দূতাবাসের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। এমনিতেই ২০১১ সালে লিবিয়ায় গদ্দাফি জমানার শেষ হওয়ার পর থেকেই লিবিয়া জুড়ে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে চলেছে। গদ্দাফিকে মেরে ক্ষমতায় আসা বর্তমান মার্কিন মদতপুষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালাচ্ছে কিছু গোষ্ঠী। ১১ সেপ্টেম্বর রাতে বেশ কিছু বন্দুকধারী ব্যক্তি লিবিয়ার বেনঘাজি শহরের মার্কিন দূতাবাসে ঢুকে পড়ে এবং আক্রমণ চালায়। দূতাবাসের সুরক্ষাকারী লিবিয়ান এবং মার্কিন সেনা ও আক্রমণকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত দশজন আক্রমণকারী এবং চারজন মার্কিন দূতাবাস কর্মী ( যাদের মধ্যে আছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেন) মারা যায়। লিবিয়া সরকারের এক মন্ত্রী ১৩ সেপ্টেম্বর জানান, এই আক্রমণের সঙ্গে ওই সিনেমার কোনও সম্পর্ক নেই। এটি পূর্বপরিকল্পিত। উল্লেখ্য, এবছরের জুন মাসেও লিবিয়াতে এক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের ওপর রকেট হামলা হয়েছিল, যদিও কোনও প্রাণহানি হয়নি।
১৩ সেপ্টেম্বর ইয়েমেনের রাজধানী সানা-তে মার্কিন দূতাবাসে হিংসাত্মক বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষীদের সংঘর্ষে অন্তত চারজন মারা যায়। উল্লেখ্য, ইয়েমেনে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ এবং সংঘর্ষ চলছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে।
এছাড়াও ইরান, ইজরায়েল, ইরাক, তিউনিশিয়া প্রভৃতি দেশে কিছু ছোটো ছোটো বিক্ষোভ এবং মার্কিন পতাকা পোড়ানোর ঘটনা ঘটে সিনেমাটি সম্প্রচার বন্ধ এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি তুলে।
Leave a Reply