চূর্ণী ভৌমিক, কলকাতা, ১৫ জানুয়ারি, ছবি লাকি জী-র ফেসবুক পাতা থেকে#
‘মা মুঝে টেগোর বানা দে’ বলে একটা নাটকের নাম শুনেছিলাম বন্ধুদের মুখে। লাকি জী এসেছিলেন জম্মু থেকে কলকাতায় এই নাটকটা করতে। হুডিনির তাঁবুর আয়োজনে ১১ জানুয়ারি রবীন্দ্রসদনে বিকেল সাড়ে তিনটেয় রবীন্দ্রনাথের মূর্তির পেছনে খোলা জায়গাটায় নাটকটা হল, আমি দেখতে গিয়েছিলাম।
এখানকার সাম্প্রতিক বাংলা নাটক দেখে দেখে বিরক্তি ধরে যাচ্ছিল, সব যেন একই, তাই বহুদিন বাদে একটা নাটক দেখা হল। পথনাটক এমনিতেই কম দেখেছি। বাংলা অনার্স পড়া ও নাটক স্পেশাল পেপার থাকার সুবাদে পথনাটক সম্বন্ধে বেশ কিছু জিনিস পড়তে হয়েছিল। অনেকসময়ই দর্শকদের নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে নেওয়া হয় প্রভৃতি জানতাম, কিন্তু সেটা যে ঠিক কীরকম ভাবে করা হয় তা বুঝিনি। আসলে এরকম নাটক আগে দেখিনি বলেই বুঝিনি।
অসম্ভব সাবলীল অভিনেতা লাকি জী একটা গামছা বই আর কিছুই হাতে করে নিয়ে আসেননি। খবরের কাগজ ছড়ানো নোংরা ঘাসের উপর তিনি কখনও বসে কখনো শুয়ে একটানা অভিনয় করে গেলেন। অভিনয়ের সময় রাস্তার কুকুর বা বাচ্চা মেয়ে ঢুকে পড়লে কী এক আশ্চর্য কায়দায় তাদেরকে নাটকের অঙ্গ করে তুলছিলেন তিনি। প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস কুড়িয়েবাড়িয়ে দর্শকদের থেকে চেয়ে নিলেন। দর্শকদেরই কাউকে বানিয়ে ফেললেন সহপাঠী, কাউকে বা হেডমাস্টার মশাই। এত উষ্ণ একটা প্রযোজনা, এত সহজে ছুঁতে পারে যেন বিনা আয়াসেই। একজন ছাত্র যার পড়াশুনা করার ইচ্ছে অথচ পয়সার অভাব, তার লড়াইয়ের গল্প বললেন তিনি। খুব চেনা খুব জানা সেই গল্পটা আরও একবার শুনল সবাই অথচ একটুও বিরক্ত লাগল না, মনে হল না বাড়াবাড়ি হচ্ছে।
অতিনাটকীয় বিষয়বস্তু এত স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় পরিবেশিত হওয়ায় টের পেলাম, অতিনাটকীয় তো আমাদের জীবনও বটে!
Leave a Reply