কুশল বসু, কলকাতা, ৩১ অক্টোবর, তথ্যসূত্র ফোর্বস ডট কম#
অক্টোবর মাসের তৃতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহে ফের মায়ানমারে বাংলাভাষী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে। ২৭ অক্টোবর একটি মার্কিন মানবাধিকার এনজিও (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ) কিছু উপগ্রহ ছবি দেখিয়ে দাবি করে, এই সময়ে মায়ানমারের পশ্চিম দিকে রাখিন রাজ্যে কিয়াউকপিউ জেলায় ৮০০ বাড়ি এবং হাউসবোট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৯ অক্টোবরের উপগ্রহ ছবিতে যে সমস্ত বাড়িঘর দেখা যাচ্ছিল, ২৫ অক্টোবরের উপগ্রহ ছবিতে সেগুলির কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সমুদ্র তীরবর্তী এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই পালিয়ে গেছে বলে ওই এনজিওর দাবি। এই চিত্র প্রকাশের অব্যবহিত পরেই মায়ানমারের আধা-সামরিক সরকার জানায়, একশোর বেশি মানুষ মারা গেছে ওই আক্রমণে, পরে অবশ্য তারা জানায় সংখ্যাটা অনেক কম, ৬৫-র মতো। রোহিঙ্গাদের একটি সংগঠন (আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন) দাবি করে, মৃত প্রায় সাড়ে তিনশো এবং সাড়ে তিন হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। তাদের আরও দাবি, রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে রাখিন ণ্ণসন্ত্রাসবাদী’রা। মিলিটারি এদের কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র, যথা আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি, তীর ধনুক এবং নৌকার জ্বালানি আটক করছে, কিন্তু মানুষগুলোকে গ্রেফতার করছে না। রোহিঙ্গাদের সংগঠনটির আরও অভিযোগ, গ্রামীণ বৌদ্ধ মঠগুলো এই রাখিনদের আশ্রয় দিচ্ছে।
এদিকে কিয়াউকপিউ জেলায় সমুদ্র তীরবর্তী রোহিঙ্গা গ্রামগুলিতে আক্রমণ ধর্মীয় বা জাতিগত, নাকি তার পেছনে ণ্ণশিল্প’-এর জন্য গরিব মানুষকে উচ্ছেদের প্রচেষ্টা রয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে। এই কিয়াউকপিউ জেলা, যা কিনা বঙ্গোপসাগরের একদম তীরে অবস্থিত, সেখান থেকে গ্যাস এবং জ্বালানি তেল তোলা হচ্ছে এবং চীনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে তা লম্বা লম্বা পাইপলাইন করে পাঠানোও হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি দাইয়ু ইন্টারন্যাশনাল এই কিয়াউকপিউতে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, সমুদ্র থেকে গ্যাস তুলে চীনে পাঠানোর জন্য। এই দাইয়ু ইন্টারন্যাশনাল পস্কো কোম্পানির একটি শাখা। এই প্রকল্পে দাইয়ু ছাড়াও বিনিয়োগ করেছে ভারতীয় কিছু কোম্পানি এবং মায়ানমারের কিছু কোম্পানি। এই গ্যাস চীনে পাঠানোর জন্য মায়ানমারের মাঝ বরাবর দুটি পাইপলাইন বানানোতে এই কিয়াউকপিউ-তে বিনিয়োগ করেছে চাইনা ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কোম্পানি। বঙ্গোপসাগর জুড়ে আরও কিছু গ্যাস উত্তোলন কেন্দ্র তৈরি করার জন্য অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি উডসাইড দাইয়ু-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। সু চি-কে মুক্তি দেওয়ার পর এবং মায়ানমারে নির্বাচনটি হওয়ার পর আমেরিকা ইউরোপের বিভিন্ন তালেবর দেশের জারি করা মায়ানমারারে ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ উঠতে চলেছে। সেই তালে কোরিয়ান, চীনা এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মায়ানমার জুড়ে তেল গ্যাসের ব্যবসা শুরু করতে মরিয়া পশ্চিমি দুনিয়াও।
Leave a Reply