`মায়ানমার দেশটির উত্তরদিকে রাখিন (পূর্ববর্তী আরাকান) রাজ্যে রাখিন জাতির মানুষদের সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলিমদের দাঙ্গা চলছে জুন মাসের আট তারিখ থেকে। ১৪ জুন পর্যন্ত সরকারি হিসেবে ২৯ জন মারা গেছে, যার মধ্যে ১৬ জন মুসলিম এবং ১৩ জন রাখিন বৌদ্ধ। আড়াই হাজার ঘর জ্বলেছে এবং তিরিশ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে এই দাঙ্গায়।
রাখিন রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। রোহিঙ্গা মুসলিমরা সেখানে রয়েছে কয়েকশো বছর ধরে, এমনই মত ঐতিহাসিকদের। এই রোহিঙ্গা মুসলিমদের ভাষা পাশের বাংলাভাষী দেশ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম প্রদেশের বাংলা। কিন্তু কয়েকশো বছর ধরে মায়ানমারের বাসিন্দা হলেও মায়ানমারের সামরিক সরকার তাদের নাগরিকের মর্যাদা দেয়নি। রাখিন রাজ্য জুড়েই এই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সরকারি মদতে কয়েক মাস ধরে চলছে প্রচারকার্য।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে ২৮ মে। সেদিন সন্ধ্যেবেলা মা থিডা তুয়ে নামের এক রাখিন মহিলাকে তিনজন রোহিঙ্গা ধর্ষণ করে খুন করে কিয়াউত নে মাও গ্রামের কাছে বলে অভিযোগ আসে। পুলিশ ওই তিনজনকে ধরে জেলে পুরে দেয়। ৪ জুন একদল রাখিন তৌঙ্গুপে একটি বাসে আক্রমণ করে বাসটিকে পুড়িয়ে দেয় এবং দশজন রোহিঙ্গাকে মেরে ফেলে পিটিয়ে। পরে জানা যায়, তারা ভেবেছিল, মা থিডা-র হত্যাকারীরা ওই বাসে আছে। ৮ জুন রোহিঙ্গারা এই প্রতিশোধমূলক ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখায় মৌঙ দ-তে। সেখানে পুলিশ গুলি চালায় এবং অনেকে আহত হয়। ওইদিনই রোহিঙ্গাদের এক বিশাল দল মৌঙ দ-র পাশেই বোহমু গ্রামে রাখিনদের বাড়িঘরে আগুন লাগায়। ধীরে ধীরে এই ধরনের আঘাত পাল্টা-আঘাত ছড়িয়ে পড়ে গোটা মৌঙ দ জুড়ে। ওইদিনই অন্তত পাঁচজন মারা যায়। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সশস্ত্র সরকারি বাহিনী মৌঙ দ অধিকার করে নেয়। সরকার গৃহহারাদের জন্য ক্যাম্প বসায়। কিন্তু পরদিনই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে বুথি দঙ শহরে। হস্টেল, ঘর, দোকান পোড়ানো হতে থাকে, ৯ জুন সরকারি ভাবে মারা যায় সাত জন।
মায়ানমার সরকার ১০ জুন জরুরি অবস্থা জারি করে। সামরিক বাহিনীর হাতে চলে যায় গোটা রাখিন প্রদেশ। উল্লেখ্য, এই সামরিক বাহিনীর শাসনকালে হিংসাত্মকভাবে মায়ানমারের সমস্ত জাতিসত্ত্বার আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা হয়েছিল। রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ নৌকায় করে বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য যেতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সঙ্গের ছবিতে এইরকমই একদল রোহিঙ্গা নৌকাপথে বাংলাদেশের দিকে। ছবি ইন্টারনেট থেকে পাওয়া।
কুশল বসু, কলকাতা, ১৫ জুন, তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া
Leave a Reply