• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

মাস্টারমশাই আর কোচবিহারের পাটিপাড়ার কথা

August 28, 2015 admin Leave a Comment

সোহিনী রায়, কোচবিহার, ১৫ আগস্ট#

pati

জুন মাসের প্রথম দিকে শহর কোচবিহারে ভূমিকম্প বিষয়ক অনুষ্ঠানের পর আমি পৌঁছোলাম কোচবিহারের গ্রামে। সেখানেও ভূমিকম্প নিয়ে অনুষ্ঠান, আমি মূল বক্তা। প্রথম অনুষ্ঠান ছিল দিনহাটার যোগেশ চন্দ্র সাহা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ঘন সবুজে ঢাকা একটি বিরাট মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে স্কুলের বিল্ডিংটা। বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এসে বিশাল ওই মাঠের সামনে দাঁড়ালে চোখ ও মন দুইই জুড়িয়ে যায়। সেদিনের অনুষ্ঠানে জনা তিরিশেক ছাত্রছাত্রী এসেছিল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রজেক্টরের গণ্ডগোল, আমার উপস্থাপনা চলাকালীন সাত-আট বার বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ছোটো-বড়ো অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও আলোচনা প্রাণবন্ত ছিল, ছাত্রছাত্রীরা নিরবিচ্ছিন্ন মনোযোগে আমার কথা শুনছিল।
পরবর্তী অনুষ্ঠান ছিল বামনহাটা বাজারে। কোনো বন্ধ ঘরে নয়। বাজারের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে। হাজার খানেক বাজার-চলতি গ্রামের সাধারণ মানুষ ভিড় করেছিল। পোশাক দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে শ্রোতাদের মধ্যে একটা বড়ো অংশ গরিব মুসলমান। এনারা পুরো অনুষ্ঠানটা চেয়ারে বসে শুনেছেন। বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক মন্তব্য করেছেন। শেষের দিকে হাল্কা বৃষ্টি নামায় ভিড় পাতলা হয়ে আসে। প্রায় পুরো বাজারে বিশেষ করে শ্রোতাদের মধ্যে মেয়েরা লক্ষ্যণীয়ভাবে অনুপস্থিত ছিল।
টোটোচালক মাস্টারমশাই
কাজ শেষ। এবার কোচবিহার শহর ঘোরার পালা। টোটোতে চড়ে। পাকাচুলো এক টোটো গাড়ির ড্রাইভার, যাঁকে মোবাইলে ফোন করলেই কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁর রথ অর্থাৎ টোটো নিয়ে হাজির হয় বাড়ির সামনে, জানিয়ে দেন ‘বান্দা হাজির’। তারপর তাঁর টোটোয় চড়ে যে কোনো জায়গায় চলে যাওয়া যায়। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে সোমা ও রামজীবনদা সেই টোটো চালককে ‘মাস্টারমশাই’ বলে ডাকছিল। কেন? কারণ উনি ছিলেন সোমার ছোটোবেলার অঙ্কের মাস্টারমশাই। উনি স্কুলে পড়াতেন। তারপর টোটো চালানো ধরলেন কবে? কেন? নিজের গল্প শোনালেন ‘মাস্টারমশাই’। বর্তমান বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে আদি বাড়ি। ওখানেও স্কুলেই পড়াতেন। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পালিয়ে আসেন ভারতে। প্রথমে যান আসামের ধুবড়িতে। সেখানে প্রথম মুদির দোকান করেন। পরে পাশাপাশি সবজি স্টোর করার ব্যবসাও শুরু করেছিলেন।
সত্তর দশকের শেষের দিকে তৎকালীন ‘বাঙ্গাল খেদাও’ অভিযানের থেকে বাঁচতে আসাম থেকে পালিয়ে এসেছিলেন কোচবিহার। কোচবিহার এসে বেশ কিছু ইস্কুলে সাময়িক অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। চুরাশি সালে স্কুলে পড়ানোর চাকরির পরীক্ষায় প্রথম হন। কিন্তু চাকরিতে যোগ দিতে পারেন না। কারণ প্যানেলে ওনার পরের ব্যক্তি চাকরিতে যোগ দেন। মাস্টারমশাইয়ের ভাষায় ‘ওই দ্বিতীয়জনের কিছু রাজনৈতিক চেনাজানা ছিল, বুঝলে না!’ মাস্টারমশাই প্রথমে চিঠির মাধ্যমে আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। লাভ হয় না। তারপর কোর্টে মামলা করেন। সেই মামলা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। অবশেষে মামলায় জিতে চুরানব্বই সালে স্কুলে যোগ দেন। দু-হাজার আট সালে অবসর নেন। চাকরিজীবন অল্প হওয়ায় অবসরকালীন ভাতা ওনার বেশি নয়। সব মিলিয়ে মাসে পাঁচ হাজার মতো। এতে ওনার আগে অসুবিধে হত না, চলে যেত দিন। এখন সামনে মেয়ের মাধ্যমিক তাই প্রাইভেট টিউটর দিতে হয়েছে বেশ কিছু। টোটো চালিয়ে উনি সেই বাড়তি খরচ মেটান। জানালেন মেয়ে আরেকটু বড়ো হয়ে গেলে আর চালাবেন না। এই বয়সে ওনার শরীরে দিচ্ছে না এই টোটো চালানো। আরও জানালেন মেয়ে কোচবিহারের নামকরা মেয়েদের স্কুলে পড়ে। বাবা ‘টোটো-চালক’ এই পরিচয় দিতে সে লজ্জা পায়। তাই মেয়েকে স্কুল থেকে আনার সময় উনি টোটো নিয়ে যান না। বললেন, ‘সোমাকে দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। ওর কোনো সংকোচ নেই। যেখানে সেখানে আমার মতো একজন টোটো চালককে ‘মাস্টারমশাই’ ‘মাস্টারমশাই’ বলে ডাকে’। নিজের কথা বলার সময় বার বার একটা কথা বলছিলেন, ‘সারা জীবনে বহু ধরণের কাজ করেছি। কোনো কাজেই কোনো লজ্জা নেই। উপার্জন হলেই হল।’ এখন হঠাৎ টোটো চালানোটাই বেছে নিলেন কেন? জানালেন, টোটো গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ। তাছাড়া ওনাকে  বলার কেউ নেই, যখন ইচ্ছে চালানো আর বন্ধ রাখা যায়।
পাটির দেশে

কোচবিহারের পাটি পৃথিবী বিখ্যাত। মাস্টারমশাইয়ের টোটোয় চড়ে আমি চললাম পাটিপাড়া দেখতে। পাটি পাড়ার ভিতরে চলে গিয়েছে একটা সরু গলি। গলির একদিকে টানা পাটি গাছের চাষ। অন্য দিকে ছোটো, মাঝারি বাড়ি। যারা পাটি বানায়, বিক্রি করে, তারা থাকে।পাটি গাছগুলো তিন থেকে পাঁচ ফুট মতো লম্বা। একটাই সরু কাণ্ড, আর তার দুই দিকে পাতাগুলো সাজানো। পাটিপাড়ার একটি মাটির বাড়ির সামনের দাওয়ায় বসে পাটি গাছের যে অংশ দিয়ে পাটি বানানো হয়, গাছ থেকে বঁটি দিয়ে সেটি বের করছিলেন একজন মানুষ।
উনি জানালেন যে পাটি মূলত পারিবারিকভাবে বানানো হয়। বাড়ির পুরুষরা পাটি গাছ কেটে পাতলা পাটি বোনার অংশটি বের করে আর মহিলারা পাটি বোনে। যদিও প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সবাই সব কাজ করে। পাটি গাছগুলো একেবারে মূল থেকে উপড়ে ফেলা হয় আর এই পাটি গাছ তোলার জন্য আলাদা লোক নিয়োগ করা হয়। একটা পাঁচ/সাত ফুটের পাটি বানাতে একশো কুড়িটা গাছ লাগে। এই একশো কুড়িটা গাছ তুলতে ভাড়া করা লোক নেয় দুশো টাকা। পাটি গাছ তুলে তার থেকে পাতাগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে শুধুমাত্র কাণ্ডটা একজায়গায় জমা করা হয়। এরপর ডালটিকে লম্বালম্বি চিরে ফেলে বেশ কয়েকটি সরু ও লম্বা ফালিতে ভাগ করে ফেলা হয়। লম্বা ফালিগুলোর বাইরের গা সবুজ আর ভিতরের সাদা অংশটি স্পঞ্জের মতো। বঁটি দিয়ে লম্বালম্বি কেটে প্রথমে একদম ভিতরের সাদা স্তরটি ফেলে দেওয়া হয়। এরপর তার পরের স্তরটিও একইভাবে বের করে আনা হয়। কিন্তু ফেলে দেওয়া হয় না, কারণ এটি বিভিন্ন কাজে লাগে, যেমন ঘর ছাওয়া ইত্যাদি। কাণ্ডের ভিতরের সাদা দুটো স্তর বেরিয়ে যাওয়ার পর পড়ে থাকে সবুজ রঙের পাতলা ফিতের থেকে খানিক চওড়া একটি অংশ। সেটি দিয়েই বোনা হয় পাটি।
পাটি দু-ধরনের হয়। একটা হল সাদা রঙের নরম শীতল পাটি। আর অন্যটি হল গাঢ় খয়েরি রঙের শক্ত পাটি। শীতল পাটি বানানোর জন্য সবুজ অংশটিকে প্রথমে গরম জলে সিদ্ধ করা হয়। এর ফলে পাটি গাছের গাঢ় সবুজ রঙটি চলে গিয়ে সবুজাভ সাদা রঙ তৈরি হয় ও পাটিটি মোলায়েম ও শক্ত হয়। সিদ্ধ হয়ে গেলে ওই পাটিকে শুকনো করে বোনা হয় শীতলপাটি। এই পাটিগুলো গরমকালে পেতে শুলে আরাম লাগে। অন্য পাটিটি সিদ্ধ না করে শুধুমাত্র রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। ফলে পাটিগুলো ওইরকম খয়েরি রঙ নেয়। এই ধরনের পাটিগুলো সাধারণত এমনি বসার জন্য, দেওয়াল বা মাটির কোনো অংশ ঢাকা দেওয়ার জন্য বা ব্যাগ বোনার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পাটিপাড়ার একটি বাড়িতে দেখলাম উঠোনের  মধ্যে একজন ভদ্রমহিলা একটি রঙিন পাটি বুনছিলেন। পাটি বোনাটা বেশ জটিল পদ্ধতি। কিছু পাটি হাতে থাকবে কিছুটা ঢুকে যাবে বুনোটের মধ্যে, পরের ক্ষেপে আবার ওই বাদবাকিগুলো ঢুকে যাবে বুনোটের মধ্যে …। ভদ্রমহিলা বুনছিলেন খুব দ্রুত গতিতে, দেখে মনে হচ্ছিল তালে তালে নাচের মুদ্রা করছেন যেন বা। উনি জানালেন সাধারণত একটা পাঁচ/সাত ফুটের পাটি বানাতে আড়াই দিন মতো লাগে। তবে তাড়া থাকলে আরও আগে বুনতে হয় অনেক সময়। একটা পাঁচ/সাত ফুটের পাটি  সাতশো/আটশো/হাজার মতো দামে বিক্রি করে। ওরা বিক্রি করে পাটির দোকানিদের কাছে। তারা আবার ওইগুলো বিক্রি করে তাদের নিজেদের দোকানে। পাটির দোকানিরা ওই পাটি পাড়াতেই থাকে। তাদের বাড়িতে আছে সেই দোকানগূলোর মূল সম্ভার। বাড়ির মধ্যে হরেকরকম পাটির জিনিস। বিভিন্ন মাপের শীতলপাটি, এমনি মাদুরের মতো ব্যবহারের জন্য পাটি, পাটির বিভিন্ন ব্যাগ, পাটির টুপি, মোবাইলের খাপ ইত্যাদি। বাড়ি থেকেও এনারা পাটির জিনিস বিক্রি করে।
মাস্টারমশাইয়ের মেয়েকে দেব বলে একটা ব্যাগ কিনতে গেলে মাস্টারমশাই জানালেন যে ওনার মেয়ে এইসব ব্যাগ ব্যবহার করে না। জানালেন যে কোচবিহারের বেশিরভাগ মানুষই এইসব ব্যবহার করে না। এইগুলোর দর কোচবিহারের বাইরে, এই যেমন শান্তিনিকেতন, কলকাতা ইত্যাদি জায়গায়। জানতে পারলাম যে এই পাটিপাড়ার লোকেদের আদি বাড়ি বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে। দেশভাগ পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এরা চলে এসেছে এ পারে। এদের আত্মীয়স্বজন অনেকেই আছে টাঙ্গাইলে, এখনও। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ির নাম শুনেছি কিন্তু শীতলপাটিও যে আদতে ‘টাঙ্গাইল’ তা কে জানত!
দীর্ঘ সময় কাটালাম পাটিপাড়ায়। মাস্টারমশাই সারাক্ষণ আমার সাথে সাথে। আমার কলকাতা ফেরার ট্রেন সেদিন। ট্রেনের সময় ক্রমশ এগিয়ে আসছে। আমরা ধীরে ধীরে পাটিপাড়া ছেড়ে বেড়িয়ে এলাম। চড়ে বসলাম মাস্টারমশাইয়ের রথে। ফেরার ট্রেন ধরতে হবে।

চলতে চলতে কোচবিহার, পাটিপাড়া, ভূমিকম্প, শীতল পাটি

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in