শমিত আচার্য, ১৩ মার্চ, শান্তিপুর#
এলাহাবাদ হাইকোর্টের এক আদেশনামার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাস থেকে ভারতীয় রেলের পূর্ব ভারতের ডিভিশনের পক্ষে এক আদেশনামা জারি করা হয়, যাতে বলা হয়েছে, সমস্ত ধরনের মান্থলি টিকিটধারীদের একটা ফর্ম পূরণ করে নতুন মাসিক টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। এটি কার্যকর হবে ১ মার্চ ২০১৪ থেকে। ফর্মটি পূরণ করতে হবে রেল কর্তৃপক্ষের তরফে লিখে দেওয়া বয়ানের সাথে সম্মতি জানিয়ে এবং রেল কর্তৃপক্ষের দেওয়া শর্ত মেনে। ফর্মের মধ্যে টিকিট সংগ্রহকারী নাম, ঠিকানা, নিজের হস্তাক্ষর থাকছে।
শান্তিপুর-শিয়ালদহ শাখার নিত্যযাত্রী হিসাবে এবং সংবাদমন্থনের তরফে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে নদিয়া জেলার শান্তিপুর স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের কাছে এই ফর্ম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে তিনি কিছু অবগত নন বলে জানান। শান্তিপুর স্টেশনের রেলের বুকিং অফিসারের কাছে সংবাদমন্থনের জেলা সংবাদদাতাকে যেতে বলেন এবং এ বিষয়ে তাঁর কিছু বলার নেই বলেও জানান। শান্তিপুর রেল স্টেশনের বুকিং অফিসার গৌতম চক্রবর্তী অনেক ফাইল ঘেঁটে সার্কুলারের কপি দেখাতে না পেরে বললেন, আমাদের সার্কুলারটা ভুলবশত রানাঘাটে চলে গেছে, আমাদের কাছে আপাতত নেই।
মান্থলি টিকিটধারীদের একটা অদ্ভুত মুচলেকাসহ ফর্ম পূরণ করতে দেখে যাত্রীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। অনেকে আবার ইংরাজিতে লেখা ফর্মের অর্থ না বুঝেই পূরণ করে জমা দিয়ে টিকিট কেটে ফেলেছে। প্রসঙ্গত, এই ফর্ম বা মুচলেকাতে বলা আছে, ‘যদি আমি কোনো অসামাজিক কাজে যুক্ত থাকি বা রেল আইনের বিরোধী কোনো কাজ করি, তাহলে আমার সিজন টিকিট বাতিল হবে, আর কখনও সিজন টিকিট দেওয়া হবে না।’ — এর নিচে সই করতে হচ্ছে।
নিত্যযাত্রীদের মতে, বেশ কিছুদিন ধরেই রেলের টিকিট কাউন্টার বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ১ টাকা বেশি দামে শিয়ালদহের আশপাশে থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যাচ্ছে। শিয়ালদহ সাউথ এবং নর্থ সেকশনে অনেক কাউন্টার থাকলেও দুটি অথবা তিনটি করে কাউন্টার প্রতিদিন খোলা হয়। বাকিগুলো বন্ধ থাকে। নিত্যযাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হয়। অনেক সময় এর জন্য ট্রেনও ছেড়ে দিতে হয়। সম্প্রতি রেলওয়েকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ভোট এসে যাওয়ায় আপাতত প্রক্রিয়াটি স্থগিত থাকলেও নীতিগতভাবে সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
বিগত বেশ কয়েকবছর থেকেই রেলওয়েতে লোক নেওয়া কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। চারদিক থেকে রেলকে লাভজনক করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে, অথচ রেল একটি পরিষেবা। নিত্যযাত্রীদের প্রশ্ন, ছাড় পাওয়া মান্থলি টিকিটে এই মুচলেকার বন্দোবস্ত কি সেই লক্ষ্যেই? প্রতিদিনের টিকিটধারীদের জন্য এই নিয়ম কেন নেই? কেউ বলছে, বিক্ষোভ আটকাতে এই বন্দোবস্ত। মান্থলি যাত্রীরাই কি শুধু বিক্ষোভ করে নাকি? রেল কর্তৃপক্ষ ধরেই নিয়েছেন, সিজন টিকিটধারীরা অসামাজিক কাজে যুক্ত? হাইকোর্টেরই বা এ কোন বিচার?
Leave a Reply