শ্রীমান চক্রবর্তী, ব্যাঙ্কপ্লট, ১৫ আগস্ট#
কোলকাতা পুরসভার যাদবপুর সংলগ্ন ৯২ নং ও ১০৪ নং ওয়ার্ডে সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি জলাশয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন এলাকার কিছু প্রবীন নাগরিক। স্থানীয়ভাবে অল্পবয়সীদের এই জলাশয় বাঁচানোর কোন তাগিদ চোখে পড়েনি। উপরন্তু জলাশয়ের মধ্যে এলাকায় বসবাসকারী বেশ কিছু মানুষের আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের জমি রয়েছে। বছর খানেক আগে থেকে হঠাৎ জলাশয়টির প্রায় মাঝ বরাবর পশ্চিমদিক থেকে একটি রাস্তা তৈরির জন্য জলাশয় ভরাট শুরুও করা হয়। পরে নাগরিকদের প্রতিবাদে তা বন্ধও হয়। কিন্তু মাঝে মধ্যেই রাতের অন্ধকারে লরি করে সেখানে বোজানো হতে থাকে। পরে এলাকাবাসীর একাংশের চাপে প্রোমাটার-দালালরা তা বন্ধ করলেও, নানা হুমকি শাসানি চলতে থাকে।
দীর্ঘদিন এই অঞ্চলের জলাশয়গুলি অংশ বিশেষে ব্যক্তিগত মালিকানা থাকায় সেগুলি কোনো সংস্কারও হয়নি। দক্ষিণ পূর্ব কলকাতা ‘জনস্বার্থ মঞ্চ’-র তরফে বছর তিনেক আগেও এই অঞ্চলের জলাশয়গুলির সংস্কারের আবেদন জানিয়ে পুরসভার কাছে একটা গণ স্বাক্ষর সহ আবেদন জমা দেওয়া হয়। যদিও তাতে কোন সুরাহা হয়নি। এ বছরের শুরুতে ব্যাঙ্কপ্লট-এর এই উল্লিখিত জলাশয়টি পুরুসভার অনুমতিক্রমে একটি বেসরকারী সংস্থা ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু তা পর্যাপ্ত ছিল না। ইতিমধ্যে পুরসভার তরফে জলাশয় সম্পর্কে একটি নোটিশ জারি হলে তাতে কিছু ভুল ধরা পড়ে। এই সুযোগে এলাকার কিছু অসাধু প্রোমোটার ও দালাল চক্র স্থানীয় কাউন্সিলারের মদতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রোমোটারদের একটি গোষ্ঠী স্থানীয় কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের সই নিয়ে পৌরপিতাকে জমাও দেয়। পরে আবার পুরসভার তরফে সংশোধনী নোটিশ জারি করা হয়। ৯২ নং কাউন্সিলারের চেষ্টায় জলাশয়টির কিছু অংশ পরিষ্কার করা সম্ভব হলেও সবটা করা সম্ভব হয়না ১০৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলারে অসহোযোগিতার কারণে। ইতি মধ্যে জলাশয়টিতে আবর্জনা ফেলা ময়লা করার কাজও সমানভাবে চলতে থাকে স্থানীয় একদল কুচক্রীদের মদতে।
এই অবস্থায় স্থানীয় ‘জলাশয় বাঁচাও কমিটি’র তরফে নিজস্ব উদ্যোগে গত ১৪ জুলাই পরিষ্কার করানোর কাজ শুরু হলে প্রোমোটারদের একাংশের মদতে পুলিশ এসে কাজের তদারকি করতে থাকা ৭৩ বছরে নির্মল চৌধুরী, বাবলু মুকুটি সহ কর্মরত ব্যক্তিদের থানায় নিয়ে যায় অন্যের জমিতে মাটিতে কাটার অভিযোগে। পুলিশ স্থানীয় প্রোমোটার ও দালালদের কাছ থেকে শুনে কোনোরকম খোঁজ খবর না নিয়েই এভাবে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের হেনস্থা করায় এলাকার সকল সমাজ সচেতন মানুষই একটু অবাক। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এলাকাবাসীর তরফে একটা গণ ডেপুটেশন দেওয়া হয়। তাতে পুলিশের এই বেআইনি কার্যকলাপের নিন্দা করা হয়। এবং এই এলাকাতেই ত্রিকোণ পার্কে আরেকটি জলাশয় বোঁজানোর অভিযোগ জানানো হয়।
ব্যাঙ্কপ্লটের বাসিন্দা, ১০৪ নং ওয়ার্ডের পৌরপিতার ‘কাছের মানুষ’ বলে এলাকায় পরিচিত রাজা নামে এক প্রোমোটার-সাপ্লায়ারের মদতে পরিবেশ আন্দোলনের সাথে যুক্ত প্রবীন মানুষদের নানান হুমকি, শাসানো ও কটুক্তিও চলছে। ডেপুটেশনের দিন, এমনকি এর আগে পরিবেশ কর্মীরা যখন পুলিশি হেনস্থার পর নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য জলাশয়টির সামনে সমবেত হয়েছিল, সেদিন পুলিশ এবং ৯২নং ওয়ার্ডের পৌরমাতার সামনেই রাজা নামে প্রোমাটার-সাপ্লায়ার এসে আমাদের শাসাতে থাকে। তার অভিযোগ, আমরা এলাকায় গণ্ডগোল করছি। পুলিশের সামনেই কয়েকজন কর্মীর সাথে তার বচসাও হয়। পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, ওই জলাশয়টির মধ্যে দিয়ে রাস্তা বানানোর জন্য তার এত তৎপরতা কেন? ১০৪ নং ওয়ার্ডের পৌরপিতাও এতটা নিষ্ক্রিয় কেন? তিনি মাইকের সামনে এসে ভরাটের বিরুদ্ধে বললেও, পরক্ষণেই জলাশয় বোজানোর পক্ষে প্রোমোটারদের মদত দিচ্ছেন? ত্রিকোণ পার্কের কাছের জলাশয়টি আবার রাতের অন্ধকারে বোজানো হচ্ছে কেন? এই নানান প্রশ্ন এলাকার মানুষের মনেও উঁকি দিচ্ছে।
Leave a Reply