সঞ্জয় ঘোষ, মজিলপুর, ১৫ মে, এবারের কালী বেশের ছবি প্রতিবেদকের তোলা#
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে হরিদ্বার থেকে গঙ্গাসাগরগামী আদি গঙ্গার ধারা বর্তমান মজিলপুর গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হত। সেই সময় ভৈরবানন্দ নামে এক তান্ত্রিক সাধক ওই গঙ্গার ধারার মাঝে, বর্তমানে যেখানে মজিলপুরের ধন্বন্তরী কালী মন্দির, সেখানে একটি চরার ওপর সাধনা করতেন। একদিন তিনি স্বপ্নাদেশ পান পাশের পদ্মা পুকুরে আমি আছি, আমাকে উদ্ধার করে পুজো কর। মঙ্গল হবে। তিনি পুকুরে সন্ধান করে এক কোন থেকে একটি আট ইঞ্চি বাই ছয় ইঞ্চি কালো পাথরের কালী মূর্তি পান এবং একটি খড়ের চালার কুটিরে প্রত্যাদেশ মতো ওই মূর্তি পূজা করতে থাকেন।
ডায়মন্ডহারবার থানাভুক্ত ন্যাতরা গ্রামের রাজেন্দ্র চক্রবর্তীকে তিনি মজিলপুরে নিয়ে এসে তাঁকে এই কালী মূর্তি পূজার দায়িত্ব দিয়ে তিনি সাধনার উদ্দেশ্যে অন্যত্র চলে যান। রাজেন্দ্র চক্রবর্তীর সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে মা কালী তাঁকে একটি বাতের ওষুধ দেন, যা পানের মধ্যে দিয়ে খেলে বাত সেরে যায়। ধন্বন্ত্বরির মতো ওই ওষুধ কাজ দিত বলে সেই থেকে কালী বিগ্রহটি ধন্বন্ত্বরি নামে পরিচিত হয়। নিত্য পূজা ছাড়াও প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতে বিশেষ পূজা হয়। শত শত ভক্ত মায়ের পুকুরে স্নান করে রোগমুক্তির জন্য ওষুধ খায় ও পূজা দেয়। ক্রমে প্রায় দেড় শতাব্দী আগে পাকা মন্দির গড়ে ওঠে। আরও পরে সামনে একটি চাদনি আগত ভক্তদের বসার জন্য তৈরি হয়। এবং মঠের মতো মন্দিরের একটি চূড়া নির্মিত হয়। প্রায় শতাধিক বছর ওই আদি পাথরের মূর্তির অনুকরণে একটি কাঠের মূর্তি নির্মাণ করে পূজা করা হচ্ছে। প্রতি বৈশাখ মাসের শুক্লা প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত ওই কাষ্ঠ মূর্তিতে ১৬টি বিভিন্ন মাতৃদেবীর মূর্তির রূপদান করা হয়। এই রূপদানকেই স্থানীয়ভাবে বেশ বলা হয় আর এই উপলক্ষ্যে যে বিরাট মেলা হয় তাকে বেশের মেলা বলা হয়। দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এই বেশ ও মেলা দেখতে ভিড় জমায়।
বাংলা ১৪২০ সনের ২৬ বৈশাখ থেকে দশ জ্যৈষ্ঠ (ইংরাজি ১০ মে থেকে ২৫ মে) পর্যন্ত ষোলোটি বিভিন্ন বেশ-এ কালীকে সজ্জিত করা হবে। যেমন প্রথম দিন কুমারী, তারপরদিন মাতৃসাধনা, গণেশজননী, ভূবনেশ্বরী, বিপত্তারিণী ইত্যাদি। সব শেষের অর্থাৎ ষোড়শ রূপটি তিনদিন থাকে। সেই সঙ্গে মেলার ভিড়ও ক্রমে সাংঘাতিক আকার নেয়। এর পরেও ভাঙা মেলা আরও কিছুদিন চলতে থাকে।
Leave a Reply