বাংলাদেশের ‘ইত্তেফাক’ পত্রিকা থেকে #
ধসেপড়া রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে থাকা দুই মায়ের সন্তান প্রসব হয়েছে। পরে দেয়ালের খসে পড়া প্লাস্টার আর খাবারের অভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এই দুই নবজাতক। তাদের আর পৃথিবীর আলো দেখা সম্ভব হয়নি। মায়ের পাশে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে এই দুই নবজাতককে। গতকাল বৃহস্পতিবার এই দুই নবজাতককে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।
উদ্ধারকর্মী কামাল ইসলাম জানান, তিনি পাঁচ তলায় এক মৃত নারীর পাশে বাচ্চা দেখেছেন। বাচ্চাটি অনেক ছোট ছিল। তিনি বলেন, আমার অক্সিজেনও শেষ হয়ে যায়। পরে দেয়ালের একটি খণ্ড পড়ে আমার চোখের সামনে বাচ্চাটি মারা যায়। এত নিষ্ঠুর পৃথিবী হতে পারে বলে আমি জানতাম না।
চতুর্থ তলায় ঢুকে ফিরে আসা উদ্ধারকর্মী সুজন বলেন, আমি বুধবার রাত ১১টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত দু’টো কক্ষে ওই দুই মা এবং বাচ্চা ছাড়াও ৫ শতাধিক জীবিত ও মৃত মানুষ দেখেছি। যারা জীবিত আছে তাদের কারো হাত, কারো পা ভেঙে অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি আরো বলেন, ‘ভবনের ৪ তলায় দু’জন মা বাচ্চা প্রসব করেছে। মা ও বাচ্চা দু’জনে ততক্ষণ জীবিত ছিল। তবে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভবনা খুবই কম।
সুজন জানান, বুধবার সকাল ৯টার দিকে ‘রানা প্লাজা’ ধসের খবর শুনে কামারাঙ্গীরচর থেকে ছুটে আসেন তিনি। তার এক বন্ধু চারতলার গার্মেন্টস কর্মী। বুধবার বিকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর এত মানুষের প্রাণহানি দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেননি সুজন। জীবনবাজি রেখে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে। সন্ধ্যা ছ’টায় ভবনে প্রবেশের চেষ্টা শুরু করে রাত এগারটায় তিনি চারতলায় একটি কক্ষে পৌঁছান। সেখানে দুই রুমে ৩ শতাধিক গার্মেন্টস কর্মীকে আটকা পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। অক্সিজেনের অভাবে অনেককেই চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছেন সুজন।
তিনি বলেন, একটি রুমের এক কোনায় বড় দু’টো খণ্ডের মাঝখানে দু’মা বাচ্চা প্রসব করেছেন। সেখানকার দৃশ্য বলে বোঝানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমি দশ মিনিট বসে বসে কেঁদেছি। কিন্তু আমি যে ছিদ্র দিয়ে ঢুকেছি সেখান দিয়ে মা ও বাচ্চাকে বের করা সম্ভব নয়।
সুজন আরও বলেন, অনেক কষ্টে রাত সাড়ে চারটার সময় বাইরে খবর দিতে পেরেছি যে, এখানে অনেকেই আটকা আছেন। আমিও মরে যাচ্ছিলাম অক্সিজেনের অভাবে। পরে অনেক কষ্টে বের হওয়ার সময় আরও কয়েকজনসহ মোট ৪০-৫০ জনকে উদ্ধার করেছি আমি।
Leave a Reply