বাসুদেব পরামাণিক, মাজদিয়া, মদনপুর, ১৪ জুলাই#
যে পটাশ সারের বস্তা (৫০ কেজি) গতবার ছিল দুশো টাকা বা দুশো আশি টাকা, এবার বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়। সারের দাম বাড়ছে, কারণ সরকার জানে। ভরতুকি কমে গেছে। শুধু ইউরিয়ার দামটা কম। স্থানীয় সারের দোকানে সারের দাম তো বাড়ায়ই, কোনো রসিদ দেয় না কখনও। কিছু কিছু সার সরকারি কো-অপারেটিভ থেকে দেয়। সেগুলোতে হয়তো বস্তায় পঞ্চাশ কি একশো টাকা কম। কিন্তু আমাদের অঞ্চলে সে সব নেই। শিমুরালি বা সগুনা যেতে হবে, ৮-১০ কিমি দূরে। আনতে দশ পনেরো টাকা। সে এক কারণ। কিন্তু আরো বড়ো কারণ, আমাদের পাড়ার চাষিরা সব ওই স্থানীয় সারের দোকানির কাছে ধরা আছে। কিছু না কিছু বাকি আছে সবারই। তুমি নগদটা ওখান থেকে নেবা আর বাকিটা এখান থেকে নেবা — এটা হয়ও না। ও নেই বলে দেবে।
তাছাড়া, দোকানদার যা দাম চাইবে তাই দিতে হবে। বেশি দামাদামি করলে দেবে না। সারের দোকান (ডিলারশিপ) যার, এডিও অফিস থেকে লিস্ট করে দিয়েছে, কোন সারের কত দাম। বোর্ডে লেখা আছে দোকানে। আর সবকিছু পরিষ্কার, কিন্তু ওই সারের দামটাই পরিষ্কার না। অস্পষ্ট।
বয়স্ক লোকজন বলে, প্রথম যখন ইউরিয়া সার উঠেছিল, তখন একবিঘে জমিতে দশ কিলো ইউরিয়া সার দিলেই ধান হয়ে যেত। এখন সেই জমিতে পঞ্চাশ কিলো ইউরিয়া দিতে হবে। তার সঙ্গে আরও অনেক কিছু দিতে হবে। আগে ফলিডল বলে একটা শুধু ওষুধ ছিল। ওই ফলিডল দিয়ে সব পোকামাকড় মরত। এখন পোকার যেমন ভ্যারাইটি আছে, ওষুধেরও তেমনি ভ্যারাইটি আছে। গাছটা কোঁকড়ানো হচ্ছে, তার জন্য একটা। লাল হচ্ছে, তার জন্য আরেকটা। এই ডাক্তারিটা করে, যাদের সারের দোকান, ওষুধের দোকান, তারা। চার পাঁচটা ওষুধ দিল, একটা না একটা খাটবেই। প্রথমদিন একটা ওষুধ নিলাম। খাটল না। পরদিন আরেকটা দিল, হল না। এইভাবে। এদিকে চাষির পকেট শেষ। আমি নিজেই অভিজ্ঞতা থেকে ওষুধ দিই, কিন্তু ঠেলায় পড়লে, নতুন কিছু রোগ হলে সেই দোকানদারের ডাক্তারিই মানতে হয়।
আর ওষুধের দামও অনেক বেড়েছে। গতবার সেবিন পাউডারের একশো গ্রামের দাম ছিল আটত্রিশ টাকা। এইবার পঁচিশ গ্রাম একজন নিয়ে এসেছে, বত্রিশ টাকা। প্রায় চারগুণ দাম বেড়েছে। এটাতে ফল গাছের পোকা মরে, ফলের বাড় ভালো হয়। রোগও এখন নানারকম হচ্ছে। আগে এত কিছু নাকি হত না। ফসল লাগিয়ে রাখত, নাকি এমনিই হয়ে যেত।
জমিতে হয়তো অত সার লাগেও না। কিন্তু মাটি পরীক্ষার বন্দোবস্ত না থাকায় হয় না। যেটা লাগে না, সেটাও হয়ত দিচ্ছি। পরীক্ষার জন্য এডিও অফিসে মাটি জমা দিলে তিনমাসে রিপোর্ট মেলে না। সময়মত রিপোর্ট না পেলে কে আর তিন চারদিন অন্য কাজ ফেলে রেখে যায়? যেতে হবে সেই শিমুরালি (বেসরকারি) বা কল্যাণী। অতদূর গিয়ে মাটি পরীক্ষা করানোর উৎসাহও থাকে না ছোটো চাষির। একেকটা অঞ্চলে ক্যাম্প করে যদি মাটি পরীক্ষা করায়, তাহলেও হয়তো করানো যেত।
সার ওষুধের চাষে জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঠিক কথা। কিন্তু না করে চাষির উপায় নেই। জৈব সারে প্রথমে খরচ অনেক বেশি। পরে কমে যায়। রাসায়নিক সারে ঠিক উল্টো। ইউরিয়া সার জমিতে পাঁচ থেকে দশ দিন থাকে, তার মধ্যেই ওর ক্ষমতা শেষ। কিন্তু খোল অনেক দিন থাকে। দ্বিতীয়ত, জৈব সারে চাষ আমি একা করলে তো হবে না। আমার পাশে যে জমিতে কীটনাশক দিচ্ছে, তার এফেক্ট তো আসবেই। এক মাঠে সবাই যদি জৈব চাষে যায়, তাহলে হতে পারে।
Leave a Reply