বঙ্কিম, কামদুনি, ১৫ জুন#
কামদুনি গ্রামের প্রান্তেই ভোলানাথ নস্করের বাড়ি, পাশেই বড়ো জলাশয়। একটু বিচ্ছিন্ন একটা বাড়ি, ইটের দেওয়াল, টালির চাল। আজ বাড়িটা আরও বিচ্ছিন্ন। ভোলানাথ (৫০) তার গ্রামেরই মেয়ের বীভৎস হত্যা ও ধর্ষণে অভিযুক্ত।
অদূরেই তার বাড়ির কাছেই এক বৃদ্ধ বসে আছেন, তার কাছে শুনলাম ভোলানাথের কথা। ভোলানাথ সেদিন সেই ণ্ণধর্ষণভূমি’তে সকালে গিয়েছিল। কিন্তু বাড়ি ফিরে এসেছে দুপুরের মধ্যে। যদিও ঘটনা ঘটে দুপুরের পর। তবুও যারা সেই পাঁচিলে ঘেরা ধর্ষণভূমিতে নেশা করত, ওই বীভৎসায় অভিযুক্ত হয়ে ধৃত, তাদের সাথে মিশত। গ্রামের আরও এক বয়স্ক মানুষ বিশ্বনাথ ঘোষ সহ আরও কয়েকজন বলল, ভোলানাথ একাজের সাথে যুক্ত নয়। তবুও সে পুলিশের জালে ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্তদের সাথে।
আজ এই বাড়িটি এমন স্তব্ধ যে বাইরে থেকে বোঝা যায় না, ওখানে জনপ্রাণী আছে। দরজায় গিয়ে দাঁড়াতে ভোলানাথের স্ত্রী এলেন। অসুস্থ। তাঁর চোখমুখ দাঁড়িয়ে গেছে। বললেন, মেয়েটির কাকা, বাবার সাথে কথা বলেছেন। তারা বলেছে, যে তারা বলবে যে ভোলানাথ এর মধ্যে নেই। গ্রামবাসীরা ভোলানাথের জন্য গণস্বাক্ষর করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু এখন কিছু করতে পারছে না কেউই। অসহায় হয়ে মহিলা একদিন ২৪ ঘন্টা চ্যানেলের একজন প্রতিনিধিকে তার কথাটা জানিয়েছিল। কিন্তু তারা বলেছে, দেখুন আপনার এই কথা এখন আমরা প্রচার করতে পারব না।
ভোলানাথের ছেলে তাকে দেখতে থানায় গিয়েছিল। সারাদিন সেখানে ঘোরাঘুরি করেছে। আবার একদিন কোর্টেও গেছিল। সেখানেও এক মুহুরি হাজার দুয়েক টাকা নিয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আরও বিশ হাজার টাকা তার কাছে চেয়েছে। ছেলেটি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে। কোথা থেকে সে এত টাকা জোগাড় করবে? ভোলানাথের দুটি মেয়ে বিবাহিত। এক মেয়ে ও জামাই ছোট্ট দু-টি নাতি-নাতনি নিয়ে এই সময় মায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মেয়েটি বলল, এখন কী করব, সবার হাতে পায়ে ধরতে হবে। জানি না, কেমন করে বাবাকে ছাড়াতে পারব। আমরা উকিল কোর্ট এসব কিছুই বুঝি না। ভোলানাথের নাতি-নাতনিরা আজও জানে দাদু হাসপাতালে আছে। ছেলে অসহায় হয়ে বলল, ‘শুনেছি ১৮ জুন কেস উঠবে আদালতে। আপনারা কোনো উকিলের বন্দোবস্ত করে দিতে পারেন কম পয়সায়?’
আমাদের কথাবার্তার মধ্যে আশপাশ থেকে পাড়া প্রতিবেশী মহিলারা এসে সমবেদনা জানিয়ে গেল।
Leave a Reply