কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল, ব্যাতাইতলা, হাওড়া, ছবি লেখকের নিজেস্ব তোলা#
ব্যাতাইতলা বাজার ভাঙছে। হবে সুপার মার্কেট। হাওড়া থেকে বি-গার্ডেনগামী বাসে জিটি রোড ধরে যেতে শালিমার স্টেশনের কাছেই ব্যাতাইতলা বাজার বাসস্টপ। বাঁদিকে একটু এগিয়েই মা ব্যাতাইচণ্ডীর জাগ্রত মন্দির। এই ব্যাতাইচণ্ডীর মন্দিরকে ঘিরে জড়িয়ে আছে অনেক লোককথা।
এখানে ছিল বেত্রবন বা বেতবন। তা থেকে মায়ের নাম বেত্রচণ্ডীকা। গল্প আছে, এক বুড়ি চলেছিল এক কাঁদি কলা নিয়ে কাছেই শীতলা মন্দিরে পুজো দিতে, পথে এক বউ এসে দাঁড়ায়, সে কলা চায়, বুড়ি না দিয়ে চলে যায়। শীতলা মন্দিরে গিয়ে দেখে কলার কাঁদিতে কলা নেই, সব ফক্কা, শুধু খোসাটা আছে। বুড়ি কেঁদে অস্থির তখন মা ব্যাতাইচণ্ডী স্বপ্ন দেয়, ‘এখানে আমি থাকতে আমাকে না দিয়ে দিদির কাছে চলে গেলি যে বড়ো’। তারপর নাকি ব্যাতাইচণ্ডী মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়।
সেদিন বাজারে যেতে গিয়ে চোখে পড়ে দুটি বিশাল ব্যানার, বিষয় ১) পাঁচশো বছরের প্রাচীন চাঁদ সওদাগর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরের সংস্কারের নামে বিকৃতি ঘটানো বা কোনোরূপ বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা চলবে না। ২) সব ধর্মের মানুষের আবেগকে আঘাত দিয়ে চাঁদ সওদাগর প্রতিষ্ঠিত পৌরাণিক এই মন্দিরের কোনো বিকৃতি ঘটানো চলবে না। ব্যানার দুটির নিচে লেখা, তৃণমূল কংগ্রেস, ৪০ নং ওয়ার্ড। ছবি তুলছি দেখে ছুটে এল একটি ছেলে। নাম রাজা ব্যানার্জী। বলল, দাদা কীসের ছবি তুলছেন? বললাম, এই মন্দিরের বিষয়ে। বলল, তুলুন, কিন্তু আমাদের কথাটাও একটু লিখবেন। সব ভেঙে দিয়েছে দেখছেন তো। আমার গার্মেন্টের দোকান ছিল, পনেরো দিন ধরে মাথায় হাত। কোনো রুটি-রুজি নেই, কী করে সংসার চালাই বলুন তো? ভেতরে গিয়ে দেখি বাজারটা একদম ভেঙেচুরে তছনছ। পড়ে আছে কিছু ইট-বাঁশ-রাবিশ। এক দোকান থেকে জেরক্স করাই, সে দোকানেরও সামনের দিকটা নেই। তারপর দেখি মন্দিরের দেওয়ালে কোনোক্রমে তাঁর ঠাঁই হয়েছে। তবে যখন চলে আসছি, রাজা বলল, তবে দাদা যাই লিখুন আমরা ভয় পাই না। সৈকতদা (স্থানীয় কাউন্সিলার) হস্তক্ষেপ করেছেন। আর মা-মাটি-মানুষের সরকার আমাদের পাশে আছে।
চেনা মানুষ স্বপনকাকার (পার্টির হোলটাইমার) সঙ্গে বাজারে দেখা হয়, স্বপনকাকা বলেন, হ্যাঁ এটাকে চাঁদ সওদাগরের মন্দিরই তো বলে। আমি বলি, চাঁদ সওদাগর তো বাণিজ্যে যেত, সে কোন রাস্তায়? স্বপনকাকা বলেন, এখানে তো অনেক দূর অবধি গঙ্গা ছিল। একজন বলেন, ওই শান্তা সিংয়ের মোড় অবধি। এখানটায় চরা পড়ে গিয়েছিল, এখন সেখানে মন্দির। তাহলে তো কোনো বন্দর থাকার কথা! বন্দর ছিল তো, আমতার দিকে ব্যাতাই বন্দর ছিল তো। তুমি এইসব কথার উল্লেখ পাবে সাহিত্যিক অসিত মুখোপাধ্যায়ের বইতে। বইটা তোমায় পড়তে দেব। মা ব্যাতাইচণ্ডী এখানে মিথ হয়ে গেছেন। ব্যাতাইয়ের নামে বাজার দোকানপাট, বাসস্টপ আর অনেক লোককথা।
Leave a Reply