দ্বিভাষিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা ‘ভাবনা’। পশ্চিম মেদিনীপুরের, জামবনি থানার চিল্কীগড় থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকার ১ম বর্ষ, মকর সংখ্যা, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে ২য় বর্ষ প্রথম-দ্বিতীয় সংখ্যা, নভেম্বর ২০১৩ থেকে ফেব্রুয়ারী ২০১৪ পর্যন্ত মোট ৬টা সংখ্যা হাতে এল। বাংলা ও সাঁওতালি ভাষায় লেখা কবিতা-গল্প-প্রবন্ধে সমৃদ্ধ এই পত্রিকায় সাঁওতালি হরফে লেখাগুলো পড়তে না পারলেও বাংলায় লেখাগুলো পড়লে ‘ভাবনা’ পত্রিকার লেখকদের ভাবনার ব্যাপকতা ও যত্নশীলতা টের পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে গোপীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা, ‘দামিনী ও অর্ধেক আকাশের অধিকার’ ও ‘শক্তি সমস্যা সমাধানে পরমাণু শক্তি বিকল্প পথ নয়’ বা দুই সংখ্যা জুড়ে জলধর কর্মকারের লেখা ‘জঙ্গলমহলের লোকসংগীতে সমাজচেতনার ধারা’-র উল্লেখ করা যায়। উল্লেখ করা যায় টি.সি. বাস্কের লেখা ‘দুর্গোৎসব ও আদিবাসী সমাজ’ এবং সমীর মাহাতর লেখা ‘জঙ্গলমহলের পৃথক ভাষা সংস্কৃতি’-র পাশাপাশি অলোকা নন্দ দাসের ‘উত্তরবঙ্গের গোর্খা সম্প্রদায়ের লোকসংস্কৃতি’ লেখাটির কথা।
আমরা যারা কলকাতা শহরের মতো এই রাজ্যের রাজধানীতে বসে সংস্কৃতি চর্চা করি তারা জানতেও পারি না এরকম ধরনের পত্রিকা দূরে দূরে কত জায়গায় প্রকাশিত হয়ে চলেছে নানা প্রকারে ও নানা আকারে। উল্টোদিকে, আমাদের বুদ্ধিজীবী মার্কা নাক উঁচু মনোভাবের জন্য আমরা দেখতেও পাই না, স্বশিক্ষিত চাষির ছেলে চাষি জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত ও অবহেলিত অঞ্চলে কেমন এক নিজস্ব জীবন্ত গদ্য-ভাষা তৈরি করে নিয়েছে যা বাজারি কাগজের লেখকদের ঝকঝকে আধুনিক গদ্যকে লজ্জায় ফেলে দিতে পারে — এর উদাহরণ হিসেবে আমি ‘ভাবনা’ পত্রিকায় লেখা অমিত মাহাত-র একটা অণু গল্পের ( ‘একটি ডিবরির গল্প’) প্রথম কয়েক ছত্র তুলে দিলাম — ‘উত্তরমুখো বাড়িটার জেগে থাকা — ডিবরিটা জ্বলছে। জ্বলে পুড়ে তেল যদিও তলানিতে। জানি না, আর কতক্ষণ বাঁচবে আলোটা। দমকা হাওয়ায় দাপিয়ে বেড়ানো মাঠ। মাঠের উপরে এই গল্পটির জন্ম। অন্ধকারের একটি মুহূর্ত।
বাইরে তখন চারমুখো হাওয়া। চুমকির হাতের আড়ে ডিবরির আয়ু।’ …
ভাবনা পত্রিকার রঙিন প্রচ্ছদও খুব আকর্ষণীয়। কোনোটায় স্থানীয় ছেলেরা বা মেয়েরা কাজ করছে, কোথাও আঞ্চলিক পরবের নাচের দৃশ্য। দেখলেই পত্রিকাটা হাতে তুলে নিতে ইচ্ছে হয় এবং পাতা উল্টিয়ে ১৫ টাকা দাম দেখলেও কিনতে খুব বাধে না।
পাঠক, তমাল ভৌমিক
Leave a Reply