• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ — ‘এই মৃত্যুর মিছিল রুখে দিতে হবে। প্রয়োজনে শরীর পেতে দিয়ে’

April 26, 2013 admin Leave a Comment

ফামিম ফিরদৌস-এর ফেসবুক স্ট্যাটাস, ২৬ এপ্রিল#

সাড়ে দশটায় রওনা দিয়ে দু’টো বাস, হাঁটা পথ এবং সবশেষ একটা বেবিট্যাক্সিতে ছয়জন ঠেসে রাত একটায় পৌছালাম রানা প্লাজা। সঙ্গে যারা ছিলো, তাদের অনেকের মনেই তখন শুধু একটা চিন্তা — যেন ভেতরে গিয়ে কোনো কাজে আসতে পারি। আমি জানতাম কাজে আমরা আসবো। (শহীদ রুমী স্কোয়াডের অনশনের সময় স্বেচ্ছাসেবা দিতে গিয়ে একটা বড় শিক্ষা হয়েছিলোঃ বাংলাদেশে কোনো ঘটনা পর্যবেক্ষন-বিশ্লেষণ-এক্সপার্ট ওপিনিয়ন দেয়ার মানুষের অভাব নেই। অভাব কাজে হাত লাগানোর মানুষের।)

যাবার আগে সার্জিক্যাল মাস্ক খুজতে এনাম মেডিকেলের রাস্তাটায় ঢুকলাম। সব ফার্মেসী বন্ধ। মেডিকেল পর্যন্ত গেলাম। বাইরে এপ্রন পরা অনেকগুলো ক্লান্ত মুখ, টেবিল-ট্রলি এবং হুইলচেয়ার নিয়ে অপেক্ষায়। সারাদিন ভয়ংকররকম আহত, বিভৎস সব শরীর এসেছে, একটা সুতোর মতো প্রাণটা ঝুলতে থাকা হয়তো। ওরা অপেক্ষায় আছে, আরো একটা জীবন বাঁচানোর। তারপরে আরো একটা।

রানা প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে শিরদাঁড়া বেয়ে একটুকরো বরফ নেমে গেলো। কি অবস্থা! টিভিতে, পত্রিকায়, ফেইসবুকে অসংখ্য ছবি দেখেছি দু’দিন, কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমবার অনুভব করলাম যা ঘটেছে তার সত্যিকারের ভয়াবহতা।

ভেতরে কার কি কাজে আসবো জানিনা; শুরু করলাম এশিয়াটিক এর গাড়ি থেকে রসদ নামিয়ে ক্যাম্প পর্যন্ত দিয়ে আসার কাজ। অক্সিজেন ক্যান, এয়ার ফ্রেশনার, পানি, শুকনো খাবার, টর্চলাইট। বিল্ডিং এর গেইট পর্যনবত এয়ার ফ্রেশনার নিয়ে যেতেই দেখলাম প্রথম “বডি” আসছে। ততক্ষণে মুখে সার্জিক্যাল মাস্কে ধাক্কা দিয়ে আসছে কর্পূর-এয়ার ফ্রেশনার আর গলিত লাশের মিলিত গন্ধ। তারপরেই বের হলো তিনজন জীবিত। তাদের একজন প্রায় নিজে পায়েই হেঁটে বেরোলো, দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে। ওবাক হয়ে গেলাম – প্রায় ৪২ ঘন্টা পর উদ্ধার হওয়া একটা মানুষের তাড়না দেখে।

ভেতরে অনেক ভীড়, তাই বাইরে মনোনিবেশ করলাম। আমরা ছ’জন, প্ল্যান ছিলো একসাথে থাকবো। কোথায় কি? একেকজন একেক দিকে। গেলাম বিল্ডিং এর পেছন দিকে। ফ্লাডলাইট পৌঁছেছে; অনেক, অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে দেখছে শুধু, আর ভেতরে দেয়ালের একেকটা ফুটো — দু’তিন তলা সমান উঁচু — থেকে কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে; কিভাবে তারা সে পর্যন্ত পৌছেছেন কে জানে। চিৎকার করে মানুষ খুঁজছেনঃ পাওয়ার গ্রাইন্ডার চালাতে পারে এমন একজন দরকার। একজন ইঞ্জিনিয়ার দরকার। এয়ার ফ্রেশনার দরকার। চার্জলাইট দরকার। গ্লাভস দরকার। দু’তিনটা অক্সিজেন ক্যান দরকার। জীবিত মানুষ আছে ভেতরে। পৌছে দিলাম। অন্ধকার, এবড়োখেবড়ো একট ছোট্ট গলি দিয়ে যেতে হয়। ভাগ্য ভালো একটা টর্চ সাথে ছিলো।

প্লাজার সামনে এসে দেখি কারা যেন খিচুড়ি পাঠিয়েছে উদ্ধারকারীদের জন্য। আমাকে সাধা হলো। শুধু ছোট এক বোতল পানি নিলাম। কিছু খাবার কথা চিন্তাও করতে পারছি না। পুলিশ-র‌্যাব-জনতা মিলে সমানে খাচ্ছে পানি-জ্যুস-বিস্কিট।

ঘন্টাদুয়েক এই চললো; কখনো দড়ি খুঁজে ইলেক্ট্রিকের তারের বান্ডিল ছুঁড়ে তিন তলায় পাঠাই, কখনো জেনারেটরের পেট্রলের কন্টেইনার নিয়ে এগিয়ে দেই।

৩টার একটু আগে একজন বললো – বিল্ডিং এর ভেতরে নিচতলায় লোক লাগবে, দু’তিনটা ধ্বসে পড়া দোকানের দেয়াল খোঁড়া হচ্ছে। ছ’জনই তখন একসাথে। মাথায় ভলান্টিয়ারের কাপড় বেঁধে এগোলাম — এই প্রথম ভবনের একেবারে ভেতরে। হাত লাগালাম ভাঙ্গা কংক্রিট সরাতে। দু’টো ঢালাইয়ের কড়াই, আমরা ছ’সাতজনের একটা লাইনে কেবল পরিষ্কার করে চলছি। হাতে হাতে এগোচ্ছে “রাবল”, দূরে ফেলে দিয়ে কড়াইটা আবার হাতে হাতে পৌছে যাচ্ছে সামনে। মানুষের ভীড়ে মার্কেটের করিডোরে চলাফেরা করা দায়। হঠাৎ সামনে থেকে (যেখানে ভাঙ্গার কাজ চলছিলো) বলা হলো একটু চুপ করতে; শব্দ শোনার চেষ্টা করা হচ্ছে। হ্যাঁ; ওপাশ থেকে দেয়ালে ইঁটের ঠোকা দিচ্ছে কেউ। অন্তত একজন জীবিত আছে ভেতরে। কাজের উদ্যম দশগুন বেড়ে গেলো। মুহূর্মুহূ ডাক — কারেন্টের লাইন লাগবে, পাওয়ার ড্রিল লাগবে, হাইড্রলিক রড কাটার, জগ (গাড়ী উঁচু করার মেশিন), বাঁশ, শাবল, বেলচা, গ্লাভস, ১০ ইঞ্চি জিআই পাইপ, হেভী মেশিন অপারেট করতে পারে এমন লোক লাগবে। যখনই ডাক পড়ছে, ছুটে যাচ্ছি কেউ না কেউ, খুঁজে নিয়ে আসছি। রাত সাড়ে তিনটায়, ওই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তখন কোনোকিছুকেই অসাধ্য রাখবো না। যদি একটা জীবন হয়, তো একটা। ওটাই বাঁচাবো।

এদিকে পেছনের আরেকটা দোকানের ধ্বংসাবশেষ থেকে জীবিত দু’জন উদ্ধার হয়েছে। আরেক জায়গায় ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়েছে।তার সাথে একটু পর পর “বডি” আসছে। আমাদের এখানে দেয়াল ফুটো করা হয়েছে, কিন্তু তার পেছনে একটা লোহার টেবিল দুমড়ে আছে। তার ওপরে ধ্বসে পড়া ছাঁদ। বাঁশ, পাইপ দিয়ে ঠেক দিয়ে তারপর খনন চলছে, কিন্তু ওই টেবিল না যাচ্ছে ভাঙ্গা, না যাচ্ছে কাটা, না যাচ্ছে সরানো। ওখানে এমনিতেই বাতাস কম, ভয়ংকর গরম; তার উপর মানুষের ভীড় সামলাতে খবর হয়ে যাচ্ছে। ফায়ার ব্রিগেড, আর্মি, এমনকি পুলিশ পর্যন্ত কারো তোয়াক্কা না করে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। আর যেখানে গর্ত, সেখানে একজন গিয়ে প্রায় ঝুলে পড়েছে, আরেকজন বাইরে থেকে পা ধরে রেখেছে তার — আর সে ছেনী-হাতুড়ি, কাটার, যা পাচ্ছে হাতে তাই দিয়ে চেষ্টা করছে টেবিলটার কিছু একটা করার।

এদিকে মানুষ আসছে। বোরখা পরা মহিলা; ভেতরে তার কোনো প্রিয়জন আটকে আছে। কি বলছেন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। চোখ থেকে গাল বেয়ে নেমে গেছে চিকন দু’টো ধূলোজমা দাগ। চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে কখন। বয়ষ্ক একজন এসেছেন। ছেলেকে খুঁজছেন। অপ্রকৃতিস্থের মতো হয়ে গেছেন। কিছুই বলে বোঝানো যাচ্ছে না। জড়িয়ে ধরলাম চাচাকে। তার বুকের ধুকপুক শুনতে পেলাম। সার্জিক্যাল মাস্কের নাকের ওপরের দিকটা ভিজে গেলো মুহূর্তেই।

ভোড় ছয়টা। শরীরে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। তার মধ্যে শুনলাম ওপরে অনেকজন জীবিত মানুষ একসাথে আছে, খোঁজ পাওয়া গেছে। আলো ফোটার সাথে সাথে নতুন লোক যোগ হচ্ছে উদ্ধারকাজে। তৃতীয় তলা পর্যন্ত গেলাম; অনেক মানুষ আছে হাত লাগানোর। আর্মির একটা বড় দল বেশ গুছিয়ে কাজ করছে। অনেকখানি অংশের বাইরের দেয়াল খসে গেছে; সূর্যের আলো এসে পড়ছে।

বেরিয়ে এলাম। অতৃপ্ত হয়েই। তবে স্বান্তনা যদি কিছু হয়, তবে এটুকুই যে বিবেকের কাছে এর চে’ বেশী অপরাধী থাকা সম্ভব ছিলো না। যতটুকু কাজে আসতে পেরেছি, এটুকুই আমার সামর্থ্যের মধ্যে ছিলো।

সবচে বড় ধন্যবাদ বিনোদ ভাইকে, এই উদ্যোগটা নেয়ার জন্য। হ্যাপী ভাই, তাহসিন ভাই, রুবাইয়াত ভাই, রাঈম ভাই সবার কাছে কৃতজ্ঞতা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবার জন্য।

খবরে দুনিয়া পোশাক কারখানা, পোশাকশিল্প, বাংলাদেশ, শ্রমিক, সাভার

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in