২৪ ফেব্রুয়ারি, শাকিল মহিনউদ্দিন, হাজিরতন, মেটিয়াব্রুজ#
দর্জিসমাজের প্রাণকেন্দ্র বড়তলার বয়স আনুমানিক দেড়শো বছর। এর কিছুকাল পরে প্রতিষ্ঠান হিসেবে জন্ম নিল বড়তলা মোসলেম লাইব্রেরি। শতাব্দী-প্রাচীন এই পাঠাগারটি তখনকার দিনের কয়েকজন সচেতন মানুষের ভাবনা ও কর্মের ফল। ধীরে ধীরে নবগঠিত পাঠাগারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের এক আত্মিক যোগাযোগ গড়ে উঠল। নতুন ভাবনার প্রেরণাস্পর্শে এই পাঠাগার জনপদের শিক্ষা ও সমাজচেতনাকে বিকশিত করেছে। বেলাত আলি মাস্টার ও রহমান মাস্টার এর প্রতিষ্ঠাতা। একদা পাঠাগারের কাঁচা বাড়িটি ছিল বর্তমান হাফিজুদ্দিন বিল্ডিংয়ের জায়গাটায়। ওখান থেকেই পাঠাগারের রোজকার কাজকর্ম চলত। মাস্টারমশাইরা গুটিকয়েক পাঠকের বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দিতেন। এভাবেই গড়ে উঠেছিল পাঠকমহল। আধুনিক শিক্ষার এই সূত্রপাত রক্ষণশীল মানুষদের পছন্দ হল না। তারা ‘গেল গেল’ রব তুলে পাঠাগারটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। পাঠাগারের সাইনবোর্ড পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও মাস্টারমশাইরা তাঁদের সঙ্কল্পে অটল রইলেন। এগিয়ে এলেন রিয়াসুদ্দিন হাজী, মোজাফফার হোসেন মালী, মৌলা মুন্সী, নুরুল হক মালী, কাশেম থান্দার, উনসুরদৌলার মতো সংস্কারমুক্ত উদারহৃদয়ের মানুষ। এঁদের সহযোগিতায় মাস্টারমশাইরা তাঁদের অন্তরের ইচ্ছাকে রূপ দিলেন, গড়ে উঠল বড়তলা মোসলেম লাইব্রেরির বর্তমান ভবন।
পরবর্তীকালে এই পাঠাগার জনপদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তাভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে সদা তৎপর ছিল। এরই আশীর্বাদধন্য হয়ে আখতার হোসেন, গোলাম রসুল, মোঃ তাহের, মোঃ আমিন, নূরনবী উকিল, বরজাহান মালী প্রমুখ শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি স্থানীয় মানুষকে জীবনকে নতুনভাবে চেনাবার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। এঁদেরই নিত্য আড্ডায় রচিত হয় এলাকার শিক্ষার মানচিত্র।
একদা এই লাইব্রেরি ছিল প্রাণবন্ত, মানুষের আনাগোনায় সরগরম। কিন্তু আজ তা অনেকটাই ম্রিয়মান। পাঠকের অভাবে মৃতপ্রায় এই পাঠাগারটি এলাকায় উপেক্ষিত। বইয়ের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। নতুন বই কেনা প্রায় হয় না। বহু দুষ্প্রাপ্য বই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিনষ্ট-প্রায়। সর্বত্র চোখে পড়ে তদারকির অভাব। নিয়মের ঢিলেঢালা ভাব এখানে স্পষ্ট। দীর্ঘদিন এই পাঠাগারের কোনো গ্রন্থাগারিক নেই। মাত্র একজন করণিকের চেষ্টা লাইব্রেরির কাজকর্ম টিমটিম করে চলছে। পরিচালন সমিতির কোনো হেলদোল নেই। সদস্যরা বাৎসরিক চাঁদা মিটিয়েই তাঁদের দায়িত্ব শেষ করেন। লাইব্রেরির উন্নতির ব্যাপারে তাঁদের ইতিবাচক মতামত রয়েছে বটে, কিন্তু কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। গুটিকয়েক পাঠক খবরের কাগজ, পত্রপত্রিকা নাড়াচাড়া করে পাঠাগারের রোজকার কাজকর্ম সমাপ্ত করেন।
এই প্রাচীন পাঠাগারের বাড়িখানা সেই পুরোনোদিনের। ইঞ্জিনিয়ারের অনুমতি ছাড়াই পুরোনো ভিতের ওপর নতুন নির্মাণকার্য হয়েছে। ফলে পাঠাগারের দ্বিতল ব্যবহারে প্রাণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। পাঠাগারের নিজস্ব শৌচাগার নেই। শোনা যায়, অদূরেই পাঠাগারের নিজস্ব জমি ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তা বেদখল হয়েছে।
Leave a Reply