সুদীপ্তা পাল ও শিপ্রা চক্রবর্তী, আসানসোল, ১৫ সেপ্টেম্বর। প্রতিবেদকরা অধিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত#
নিঃশব্দে কয়লা খনির প্রয়োজনে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চলেছে রানীগঞ্জ শহর ও কোলিয়ারির আশে পাশের ভিন রাজ্যের মানুষের তৈরি হওয়া ১০০ বছরেরও বেশী পুরোন বসতি গুলোকে। কোলিয়ারির শুরুতে কম মজুরিতে খনিতে অমানুষিক পরিশ্রম ও যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘট্নার ভয়ে স্থানীয় মানুষ খনিতে কাজ করতে চাইত না। উনবিংশ শতাব্দির শেষের দি্ক থেকে কয়লাখনিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করার জন্য বিভিন্ন রাজ্য থেকে এল বহু মানুষ। রানীগঞ্জ কয়লা খনি অঞ্চলে বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের কোল কোম্পানি কোলিয়ারির মালিকরা কোলিয়ারির গুদাম থেকে বাঁশ, টিন ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে কোলিয়ারির কাছেই ঘর বানানর অনুমতি দিয়েছিল। সেই পরিবারগুলো তখন থেকেই প্রথমে ব্যক্তিগত মালিকানার কোল কোম্পানির জমিতে জাতীয়করণের পরে রাষ্ট্রায়ত্ত কোল কোম্পানির জমিতে স্থায়ী বসতি গড়েছে। বহু পুরোনো এই সব জনবসতির মানুষরা এই অঞ্চলের বাসিন্দা হয়ে গেছে।
এইরকম একটি জায়গা বঞ্জেমারি কোলিয়ারির ভাগরান ধাওড়া। বঞ্জেমারি ওপেন কাষ্ট কোলিয়ারির সম্প্রসারনের জন্য দরকার হাজার দেড়েক মানুষের জনবসতি ভাগরান ধাওড়া ভেঙে ফেলা। এই মানুষরা পুনর্বাসনের দাবি করে আসছে প্রায় একবছর ধরে। পুনর্বাসন তো দূরের কথা, আলোচনা পর্যন্ত করেনি ইসিএল ম্যানেজমেন্ট। ইসিএল ম্যানেজমেন্ট বলছে এই মানুষরা ইসিএল-এর জায়গার ‘বেআইনি দখলদার’। ইসিএল তৈরি হবার আগে থেকে এই অঞ্চলে মানুষগুলো বসবাস শুরু করেছে। এই অঞ্চলে আছে এমন অনেক বয়স্ক মানুষ যারা বঞ্জেমারি আন্ডারগ্রাউন্ড কোলিয়ারির তৈরির কাজ করাছে। প্রায় প্রত্যেক ঘরের মানুষ ইসিএল-এ কাজ করে অবসর নিয়েছে। আজ অনেকেই ইসিএল এর স্থায়ী ও ঠিকা শ্রমিক। এই মানুষদের ভোটার কার্ড আছে, রেশন কার্ড আছে। এই ধাওড়া থেকে বাসুদেবপুর পঞ্চায়েতে একজন সদস্য আছে। এই মানুষদের কোন ভাবেই বেআইনি দখলদার বলা যাবে না। প্রায় প্রত্যেকটি পরিবার এই অঞ্চলে বসবাসের কারণে কোলিয়ারিতে সার্ভিস দিয়েছে তাদের আজ জোর করে তুলে দিতে চাইছে।
পুনর্বাসনেরর দাবিতে আন্দোলন শুরু করায় ইসিএল ম্যানেজমেন্ট বেআইনি ভাবে এই জনবসতি এলাকা থেকে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিটারের মধ্যে ব্লাস্টিং করছে। আইন অনুসারে বস্তি এলাকা, রাস্তা ও সাধারণের ব্যবহারের স্থান থেকে ৩০০ মিটারের বাশি দূরে ব্লাষ্টিং হবার কথা। এই রবিবার ১৩ সেপ্টেম্বর ব্লাস্টিং সময় পাথর ছিটকে পড়ে ২০ – ২৫ টা বাড়ির ছাদে। বেশ কয়েকজন আহত হয়। একজন যুবকের মাথায় ও পায়ে ভালরকম আঘাত পায়।
এই অন্যায় এই মানুষরা চুপচাপ মেনে নেয় নি। প্রায় হাজার মানুষ বঞ্জেমারি কোলিয়ারির এজেন্ট অফিসে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে এবং কোলিয়ারির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রাতে সালানপুর এরিয়ার সিকিউরিটি অফিসার ২০ জন CISF এসে একজনের ঘরে ভাঙচুর করে, মহিলাকে মারধর করে ও ঘরের জিনিস বাইরে ফেলে দেয়। পরের দিন এই ঘটনার সুবিচার চেয়ে ভাগরাণ ধাওড়ার মানুষদের সঙ্গে অধিকারের সংগঠন আসনসোলের মহকুমা শাসককে ডেপুটেশন দেয়। তিনি আশ্বাস দেন যতক্ষন না সালানপুরের এরিয়া ম্যানেজমেন্ট এই মানুষদের সাথে বসে কোন সমাধান সুত্র বার করছেন ততক্ষণ এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না।
কোল বিয়ারিং এরিয়াতে গড়ে ওঠা এইসব ধাওড়া বা বস্তি বা গ্রাম কয়লাখনির কারণে উচ্ছেদ হলে এই জনবসতির মানুষদের অবশ্যই পুনর্বাসন দেওয়া দরকার। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কয়লাখনির কারণে ধসপ্রবণ এলাকার মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য তৈরি হওয়া ২০০৬-এর মাষ্টার প্ল্যান অনুসারে ইসিএল বা অন্য কোল কোম্পানির জমিতে বসবাসকারীদের জন্য নির্দিষ্ট পুনর্বাসনের প্যাকেজ আছে।
Leave a Reply