সুকুমার হোড় রায়, কলকাতা, ১ জুলাই#
আগা ডোম বাগা ডোম ঘোড়া ডোম সাজে। বীরভূমে রাঢ়ভূমির প্রান্তরে রণ পায়ে ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ডাকাতরা মহড়া করত ণ্ণরায় বেশে’ নাচের মাধ্যমে। এই লুপ্তপ্রায় রায় বেশে নৃত্যকে গুরুসদয় দত্ত বীরভূমের জেলাশাসক হয়ে পুনরুদ্ধার করেন। ১৯২০ সালে স্ত্রী সরোজনলিনী ও পুত্র বীরেন্দ্র সদয়কে নিয়ে জাপানে গিয়ে দেখেন, জাপানি মহিলারা তাদের লোকনৃত্য, লোকসংস্কৃতি নিয়ে চর্চা ও অনুশীলনে মেতে থাকে সর্বদা। পরের বছর দেশে ফিরে তিনি বাঁকুড়ার জেলাশাসক হন। সেই সময় সরোজনলিনী দুঃস্থ মহিলাদের নিয়ে গড়ে তোলেন ণ্ণনারীমঙ্গল কেন্দ্র’। উদ্দেশ্য ছিল, লেখাপড়া-স্বাক্ষরতার সাথে সাথে শরীরচর্চা, হস্তশিল্প শিক্ষার দ্বারা মেয়েদের স্বনির্ভর করে তোলা।
গুরুসদয় ১৯২১ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত বাংলার বিভিন্ন জেলায় জেলাশাসকের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সংস্কৃতিকে পুনরুদ্ধার করা, তাই নিয়ে লেখালেখি, লোকসঙ্গীতের সুরে গান লেখা — এসব কাজ করে চলেছিলেন। সমাজের অন্যান্য বর্গের মানুষদের পাশাপাশি নিম্নবর্গের মানুষদের একসাথে নিয়ে বৃক্ষ রোপন, বনসৃজন, সমবায়ভিত্তিক কৃষি, আগাছা উপড়ানো, আবর্জনা পরিষ্কার করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত ও পরিষ্কার রাখা, খেলাধূলো, শরীরচর্চা, হাতের কাজ, শিল্প ও কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদি ১৬টি শিক্ষার দ্বারা স্বদেশি চেতনায় পরিপূর্ণ মানুষ গড়ে তোলার কাজে ব্রতী ছিলেন গুরুসদয়। ১৯৩১ সালে তিনি রুরাল হেরিটেজ রিভাইভ্যাল সোসাইটি অব বেঙ্গল-এর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩২ সালে ঘোষণা করেন ব্রতচারী আন্দোলন গড়ে তোলার কথা। এর দুবছর পর সোসাইটির নাম বদলে রাখলেন ব্রতচারী সমিতি। ১৯৪১ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান গুরুসদয়।
ব্রতচারী আন্দোলন এবং তার প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে এক তথ্যচিত্র বানিয়েছেন মনোজিত অধিকারী। ১২ বছর সময় লেগেছে তাঁর এটি বানাতে। ২৫ জুন গুরুসদয় দত্তের জন্মদিন উপলক্ষ্যে কলকাতার নন্দনের ৩ নং প্রেক্ষাগৃহে তথ্যচিত্র ণ্ণব্রতচারী’ দেখানো হলো। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ব্রতচারী সমিতির প্রধান সচিব কমলেশ চট্টোপাধ্যায়, সমিতির প্রাক্তন প্রধান নায়ক দিলীপ সর্বাধিকারী, বীরভূম থেকে আসা পুরুষানুক্রমে রায় বেশে নৃত্য শিল্পী শিবরাম প্রামাণিক প্রমুখ। ব্রতচারী শিক্ষাকে দুই বাংলাতেই বিদ্যালয় শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
Leave a Reply