শ্রীমান চক্রবর্তী, হালতু, ৩০ জানুয়ারি#
কলকাতা পুরসভার ১০৪ ও ৯২নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত উত্তরে শহিদনগর, পশ্চিমে সুইটল্যান্ড ও পূর্বে ব্যাঙ্ক প্লটের সংযোগে অবস্থিত ঝিলটিকে আগামী ২৫ বছরের জন্য কলকাতা পুরসভা, ১৯৯৩ সালের ১৭-এ (সংশোধিত) ধারার অধিকার বলে অধিগ্রহণ করেছে। ‘জনস্বাস্থ্য, জলাশয় সংরক্ষণ-সংস্কার মঞ্চ’-এর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানাধীনে থাকা এই ঝিলটির ভরাটের কাজ বন্ধ করতে হবে।
গত দেড় বছর ধরে ব্যাঙ্ক প্লট ও শহিদনগরের বাসিন্দাদের একাংশ এই ঝিলটির ভরাটের বিরুদ্ধে দাবি জানায়। অপরদিকে সুইটল্যান্ডের বাসিন্দাদের একাংশ ঝিল বুজিয়ে ঝিলের পূর্ব ও পশ্চিম বরাবর রাস্তাটির সংযুক্ত করার দাবি জানাতে থাকে। এই নিয়ে সুইটল্যান্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। বিতর্কের এই সুযোগে মাঠে নেমে পড়ে প্রমোটার-সাপ্লায়ার ও দালাল চক্র। একই সাথে চলতে থাকে ভরাট, এবং ভরাটের বিরুদ্ধে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন।
অবশেষে কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে, ১০নং বরো চেয়ারম্যান শ্রী তপন দাশগুপ্ত মহাশয়ের তৎপরতায় এবং স্থানীয় ৯২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলারের সহযোগিতায় জলাশয়টি সংরক্ষণের দায়িত্ব কলকাতা পুরসভা গ্রহণ করেছে। এলাকার পরিবেশ রক্ষায় মূলত প্রবীণ ব্যক্তিদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ‘জনস্বাস্থ্য, জলাশয় সংরক্ষণ-সংস্কার মঞ্চ’-এর এই সাফল্য নিঃসন্দেহে আমাদের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ। গত ১৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ন-টায় স্থানীয় পৌর প্রতিনিধি, বরো চেয়ারম্যান, পরিবেশবিদ মোহিত রায়, মঞ্চের সদস্যবৃন্দ সহ পরিবেশ আন্দোলনের সাথে যুক্ত বহু মানুষের উপস্থিতিতে এই আন্দোলনের সাফল্যে বিজয়সভা উদ্যাপন করা হয়। এই আন্দোলনের সাফল্য নিঃসন্দেহে অঞ্চলের জলাশয়গুলি নতুনভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবিকে জোরদার করবে। তবে বিজয়-উৎসবের আমন্ত্রণপত্রের শুরুতেই ‘স্বার্থান্বেষী দুষ্টচক্রের নানা বাধা …’ জাতীয় নেতিবাচক কথার আপত্তি তুলেছে কেউ কেউ।
এই সেদিনও ঝিল বুজিয়ে বাড়ি করেছে এলাকাবাসী, এমনকী প্রতিবাদীরাও
তবে এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন। এলাকার প্রবীণ এক নাগরিকের কথায়, এই এলাকার সবটাই ছিল ঝিল। সব জায়গাতেই জলাভূমি বুজিয়েই ফ্ল্যাট বা বাড়ি উঠেছে। যারা আজ পরিবেশ আন্দোলনে নেমেছে তাদের অনেকে ২০০৭-০৮ সাল পর্যন্ত এখানে জলাভূমি বুজিয়ে ফ্ল্যাট করেছে। এবং সেটা সেদিনের ১৯৯৩ সালের ইনল্যান্ড ফিশারি অ্যাক্টকে অমান্য করেই। কয়েক দশক আগে কেনা এই জলাজমিতে অনেকেই অর্থের অভাবে হয়তো সেদিন বাড়ি করতে পারেনি। অথচ আজ তারা বাড়ি করতে চাইলে বাধা পাচ্ছে। অনেকের বাড়ি করার সুযোগ থাকলেও রাস্তার পারমিশন না থাকায় বাড়ি করতে পারছে না। পশ্চিম সুইটল্যান্ড ও দক্ষিণ ব্যাঙ্ক প্লটের বেশ কিছু বাসিন্দাদের এই অভিযোগ সর্বৈব সত্য। সময়ের গতিতে কেউ হয়তো এগিয়ে ছিল, কেউ বা পিছিয়ে। সেদিনের জলাভূমি বুজিয়ে ভরাট করা পরিবারগুলি যতই পরিবেশ রক্ষায় তাদের সচেতনতার কথা মাইক বাজিয়ে জাহির করুক আজ, সেদিনের নীরবতার স্বার্থ আর আজকের সক্রিয়তার স্বার্থ কিন্তু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। শহিদনগর সংলগ্ন এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা এই প্রতিবেদক নিজেই তার সাক্ষী।
জলাশয়টি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে ‘নেচার নেস্ট’ নামে একটি এনজিও-কে মঞ্চের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে, প্রাথমিকভাবে জলাশয়টি ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু মঞ্চের পক্ষ থেকে জলাশয়টি সংস্কার ও সংরক্ষণের দায়িত্ব এনজিও-টির হাতে তুলে দেবার জন্য যে আবেদন রাখা হয়েছে তা কতটা সঙ্গত? এর দ্বারা কি এলাকাবাসী নিজেদের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছে না? মধ্যস্থতাকারীর আমদানি করে বেসরকারী জমির লিজে অধিগ্রহণটি হওয়ার বিষয়টি অযথা জটিলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে না?
Leave a Reply