২৮ জুলাই, অমিতা নন্দী, ফতেপুর, গার্ডেনরীচ#
গার্ডেনরীচ ফতেপুর অঞ্চলে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মচারী হিসেবে আজ এমন এক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতে হল যে সেই ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে অবগত করার দায়িত্ব অনুভব করছি। এখন প্রায় সমস্ত মানুষকেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কে গ্রাহক হিসেবে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। তাই এই প্রতিবেদন।
আজ আমার ক্যাশ-কাউন্টারে একজন অল্পবয়সি মহিলা-গ্রাহক তাঁর সেভিংস অ্যাকাউন্টে এক লক্ষ টাকা জমা দিতে আসেন দুপুর বারোটা নাগাদ। আমি দেখি, সব ১০০০ টাকার নোট দিয়েছেন কোনো রাবার ব্যান্ড ছাড়াই খোলা অবস্থায়। আমি রাবার ব্যান্ড লাগিয়ে ওঁর সামনে নোট কাউন্টিং মেশিনে গুনে দেখি ৭৪টা নোট আছে, ১০০টা নয়। বার চারেক গোনার পরেও একই সংখ্যা দেখাচ্ছে। তখন ওঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, বাকি টাকা কোথায়? ব্যাগের মধ্যে দেখুন। মহিলার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল, ব্যাগ হাতড়েও কিছু পেলেন না। বললাম, আপনি কি টাকা নিজে গুনে এনেছেন? এখানে কি অন্য কারও হাতে দিয়েছিলেন? উনি বললেন, হ্যাঁ, একজন তো আমাকে সাহায্য করার জন্য টাকাটা নিয়ে গুনছিলেন।
— কে তিনি? আপনার পরিচিত? তিনি কি এখানে আছেন?
— না তো! তাকে আমি চিনিই না। আমি আজকেই প্রথম দিন ব্যাঙ্কে টাকা দিতে এসেছি। এখান থেকে জমা দেওয়ার স্লিপ নিয়ে বসে লিখছিলাম। একটি ছেলে আমাকে বলে দিল কীভাবে লিখতে হবে, স্লিপের পিছনে কী নোট দিচ্ছি, কতগুলো, সেসব ঠিকঠাক লিখতে হবে — ‘নাহলে খুব ঝামেলা হবে। টাকাগুলো গুছিয়ে এনেছেন তো? দিন আমি গুছিয়ে গুনে দিচ্ছি, ভুল-ভাল হলে ক্যাশ-কাউন্টারে খুব মুখ করবে।’ আমি এমনিতেই একটু নার্ভাস ছিলাম, তাই ওর হাতে টাকাগুলো দিয়েছিলাম, ও গুনে-গুছিয়ে আমায় ফেরৎ দিল।
আশপাশের অন্যান্য গ্রাহকেরা এবং আমি মুহূর্তে বুঝে গেলাম উনি কীরকম ঠগবাজের পাল্লায় পড়ে ২৬ হাজার টাকা খোয়ালেন। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে জানালাম। ওঁর ঘরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ওই ভদ্রমহিলা একটি ছেলেকে চিনতে পারলেন, যে বেশ কিছুক্ষণ ধরেই আমাদের ক্যাশ-কাউন্টারের সামনে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিল — বিভিন্ন বয়স্ক লোকজনকে লক্ষ্য করছিল। গালে অল্প অল্প দাড়ি, মাথায় একটু লম্বা চুল, পরনে চেক শার্ট এবং পায়ে রীতিমতো ভালো সু — চকচকে চেহারা। মহিলা পুলিশ ডেকে আনলেন, তারাও সিসিটিভিতে সব দেখল।
ওই মহিলাকে দেখে লেখাপড়া জানা মনে হল, তবে বেশ নার্ভাস হয়ে গেছেন। সবাই তো ওঁর বোকামি দেখে ওঁকেই বকতে লাগল।
প্রসঙ্গত, জানিয়ে রাখি, এরকম ঘটনা বা দুর্ঘটনা মাঝেমাঝেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখায় ঘটে। আমার চাকরিজীবনেই এই ব্রাঞ্চে প্রায় ১০ বছর আগে একটি ছেলেকে আমরা ধরেছিলাম, যাকে তার আগেও বেহালা ও বজবজ ব্রাঞ্চে ধরা হয়েছিল। এরা খুব ভালো হাত-সাফাই জানে, অনেকটা ম্যাজিসিয়ানের মতো। চোখের সামনে গুনতে গুনতে অনায়াসে ২৪টা বা ২৫টা বা ২৬টা নোট সরিয়ে ফেলতে পারে। আগে আগে যখন আমরা প্রতারককে ধরতে পেরেছিলাম, তখন ব্যাঙ্কে আমাদের সিকিউরিটির জন্য আর্মড গার্ড ছিল। তাও ধরতে পারার পর পুলিশে হ্যান্ডওভার করেও দেখেছি আবার ছাড়া পেয়ে একই কাজ করছে। এখন তো কর্মসঙ্কোচনের ধাক্কায় বহু ব্রাঞ্চেই কোনো সিকিউরিটির লোক নেই। গ্রাহকদের এবং আমাদের যথেষ্ট অরক্ষিত অবস্থায় আর্থিক লেনদেন চালাতে হয়। আর আইন-প্রশাসন-ব্যবস্থাপনা তো আমাদের হাতে নেই।
তাই নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ বিশেষ কর্মব্যস্ত দিনে ভিড়ের মধ্যে মিশে এই শ্রেণীর ঠগবাজেরা দুর্বল শিকার খোঁজে, কাকে বোকা বানানো যায়। সাধারণত বয়স্ক, নড়বড়ে লোকেরা এদের শিকার হয়।
Leave a Reply