সোমা সরকার, কোচবিহার, ১৫ জুন#
মাথাটা আমার আর লোড নিতে পারছে না। নিজের অজান্তেই আমি অপূর্বর ঠোঁট দুটো চেপে ধরলাম। সকাল থেকেই জামাই ষষ্ঠী যেন জামাই পূজোর সমর্থক হয়ে উঠেছে। মাকে দেখলাম সকাল সকাল উঠে স্নান সেরে পূজো করল। তারপর অপূর্বকে বসিয়ে পূজোর ঢং-এ আচার নিয়ম পালন করে, এক থালা ফল সামনে দিল আর সঙ্গে চলল সকাল দুপুর ও রাতের রাজকীয় আহারের আয়োজন।
এটাই আমার প্রথম জামাই ষষ্ঠীতে বাপের বাড়ি আসা। এটাই কি শেষ? ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার সময় মন যেভাবে গুছিয়ে উঠেছিল আজ অপূর্বর কিছু প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে এলোমেলো লাগছে। হ্যাঁ! সত্যিই তো জামাইরা শাশুড়ীদের ডেকে একটাও পূজো বা উৎসবের আয়োজন করে না? প্রাচিন শাস্ত্রকারেরা শাশুড়ীদের নিয়ে জামাইদের করনিয় কোন বিধান রাখেননি কেন? বর্তমানে শাশুড়ীদের জামাইরা যে উপহার দেন সেটাই বা কতদিন আগে শুরু হয়েছিল? আমরা মেয়েরা বাঁশ আর খড়ের কাঠামো না হয়ে জাগতিক ছোট খাটো পারিবারিক উৎসবে ছেলেদের পূজনীয় বা বরনীয় হয়ে ওঠিনি কেন? ‘বৌমা ষষ্ঠি’ , ‘কন্যা ষষ্ঠি’ এ সব কোথায়? — আরও অনেক অনেক প্রশ্নে আমি যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম। মানে আমার মনের পুরোনো ধারণাগুলো সব লজ্জা লুকোনোর জায়গা পাচ্ছিল না। সত্যিই তো, জামাই ষষ্ঠী নিয়ে শাশুড়ীর এত লোড কেন থাকবে? এই সব ভাবতে ভাবতে আমার এক বান্ধবী ‘জয়া’-কে ফোন করলাম। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা জয়া জামাইদের নিমন্ত্রণ করে শাশুড়ীরা যে জামাই পূজা করে সেটাকি তোর ঠিক বলে মনে হয়?’ উত্তরে জয়া বলল, ‘আরে মেয়ে হয়ে জন্মেছিস কি করবি বল? এটাই নিয়ম। সামনের জন্মে ছেলে হয়ে জন্মাস তাহলে জামাই ষষ্ঠী খেতে পারবি’।
ছোটবেলায় একটা গান শুনতাম, ‘বনমালী তুমি পরজনমে হইও রাধা, বুঝিবে তুমিও রাধার পরাণে কত ব্যাথা’. গানটিতে মেয়েরা পুরুষদের সমব্যাথী হিসেবে পাশে পাওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করেছে। পরাণের ব্যাথার উৎসগুলোকে খুঁজে দেখার সামর্থ্য নেই। ইচ্ছার প্রশ্নও নেই। অনেক যুগ পেরিয়ে আজকে আমরা মেয়েরা পরাণের ব্যাথাগুলোকে এই জন্মেই সমাধান না করে আর একটি জন্মের অপেক্ষা করে আছি। পুরুষ জন্ম। সেখানে পুরুষকে সমব্যাথী নয় নিজেই পুরুষ হয়ে ব্যাথা প্রশমনের কথা ভাবছি। একেবারে ‘তোরে বানাইয়া রাই বিনদিনী আমি হইব কালাচাঁদ’.এই কালাচাঁদ হয়ে ওঠার মধ্যে দিয়ে বিনোদিনী ণ্ণআমরা’ কিন্তু থেকেই যাচ্ছি। হায় জয়া, জয়ার মেয়ে জন্ম, জয়ার ছেলে জন্ম আর জামাই ষষ্ঠীর চক্র।
Leave a Reply