রামজীবন ভৌমিক, কোচবিহার, ২৬ এপ্রিল#
২৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি, বাগডোগরা, ফাঁসিদেওয়া থেকে চালসা, ওদলাবাড়ি, মাদারিহাট, বাগরাকোট থেকে বীরপাড়া চৌপথি পর্যন্ত একযোগে সাত জায়গায় তরাই ডুয়ার্সের চা শ্রমিকরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে ন্যায্য পাওনার দাবিতে।
তরাই ডুয়ার্সে ডানকান গোষ্ঠীর ষোলোটি চা বাগানে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলছে। ২০০২ সাল থেকে পিএফ এবং গ্র্যাচুইটি বকেয়া। তার ওপর গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বাগানগুলিতে শ্রমিকদের মজুরি বন্ধ করে দিয়েছে বাগান মালিক। বাগডোগরা থেকে ওদলাবাড়ি ও চালসা থেকে মাদারিহাট — ডানকানের চা শ্রমিকদের বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে দীর্ঘদিন। মালিকপক্ষ অমানবিক মনোভাব নিয়ে চলছে। দিনের পর দিন ডানকানের বেশিরভাগ চা বাগানেই নিয়মিত র্যাশন ও বেতন পাচ্ছে না শ্রমিকেরা।
২৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার উত্তরকন্যায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে ডেকেছিলেন যুগ্ম শ্রম কমিশনার মুহাম্মদ রিজওয়ান, কিন্তু মালিকপক্ষ বৈঠকে যোগ দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। বুধবার যুগ্ম কমিশনার শ্রমিকদের জানিয়ে দেন, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মালিকপক্ষ যোগ দিচ্ছে না। পরবর্তী বৈঠক কবে হবে তাও ঠিক হয়নি। কিন্তু বৈঠক হলে সেটা মালিকপক্ষের ইচ্ছা অনুযায়ী কলকাতার শ্রম কমিশনারের অফিসে হবে বলে জানিয়ে দেন। ভুখা শ্রমিকদের ট্রেনভাড়া দিয়ে কলকাতায় গিয়ে মালিকের সাথে বৈঠক করতে হবে। একথা শোনার পরই শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মালিকপক্ষের অমানবিক অচলাবস্থা কাটানোর জন্য এবং বাগানে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের মিনা মোড় সকাল ৯-১১ টা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে বাগ্রাকোট চা বাগানের শ্রমিকরা। এই অবরোধে চা বাগানের স্বীকৃত সবকটি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও মূলত বারলা গোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, সিবিএমইউ, দার্জিলিং তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতৃত্বে অবরোধ হয়। পিটিডব্লুইউ এর ওয়ার্কিং কমিটির চেয়ারম্যান চন্দন লোহার জানিয়েছেন, ৪৮৬ হেক্টরের বাগ্রাকোট চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ১৪৭৮ জন। র্যাশন কার্ডের সংখ্যা ৩০০০। ৪৮ সপ্তাহ থেকে মালিকপক্ষ শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের র্যাশন দিচ্ছে না। গত তিন বছর থেকে বেতন দিচ্ছিলেন অনিয়মিত। ফেব্রুয়ারি থেকে সেটাও বন্ধ। এই পরিস্থিতি ডানকান গোষ্ঠীর ১৬টি চা বাগানেই।
বাগডোগরা গঙ্গারামের চা শ্রমিকরাও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। অবরোধের নেতৃত্ব দেয় চা বাগান ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ মঞ্চ পিটিডব্লুইউ, টিডিপি, দার্জিলিং জেলা চিয়াকামান মজদুর ইউনিয়ন। অবরোধে সামিল হয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়া শ্রমিকরা জানায়, পাঁচ মাস বেতন ও র্যাশন বন্ধ। তবুও আমরা বাগান সচল রেখেছি। মালিকপক্ষ ফ্যাক্টরি বিদ্যুতের বিল না মিটিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বাগানকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। শ্রমিকরাই জেনারেটর আনিয়ে নিজেরা তেল ভরিয়ে বিদ্যুৎ এর যোগান রেখে ফ্যাক্টরি চালু রেখেছে। ২ ঘন্টা অবরোধ চলার পর ফাঁসিদেওয়ার জয়েন্ট বিডিও খুরশিদ আলম অবরোধস্থলে আসেন। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের ব্যবস্থা এবং জিআর-এর চাল ও ১০০ দিনের কাজের প্রতিশ্রুতি দিলে বেলা বারোটায় অবরোধ উঠে যায়। মাদারিহাট ৩১-সি জাতীয় সড়ক, চালসা গোলাইয়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কও অবরোধ করেন চা বাগান শ্রমিকরা।
ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ মঞ্চের কনভেনর অভিজিৎ মজুমদার জানালেন, ‘বাগানগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। শুধু ডানকান গ্রুপের পনেরোটি বাগানই নয়, অন্য চা বাগানগুলোতেও একই অবস্থা। ডানকান একটি বড়ো কোম্পানি। যারা প্রায় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি হিসেবে প্রচুর চা রপ্তানি করে। তারা বলছে যে আমরা টাকা দিতে পারছি না। তাদের বক্তব্য সত্য নয়। ডানকান গোয়েঙ্কাদের কোম্পানি। এরা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি হয়েও শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিচ্ছে না।’
Leave a Reply