সঞ্জয় ঘোষ, জয়নগর, ৮ আগস্ট##
সুন্দরবনের অঞ্চলের একমাত্র পুরসভা অঞ্চল জয়নগর-মজিলপুর। আর এই জয়নগর মজিলপুরের পূর্বদিকে মাহিষ্য পাড়া। মাহিষ্য পাড়া এই পুরসভার ৪নং ওয়ার্ড। এর শেষপ্রান্তে চাষের ক্ষেত অঞ্চল। এর বাসিন্দা তরুন দাস (বয়স ৩২)। তরুণের তিন ভাই, তিন ভাইয়ের স্ত্রী মা, এবং তাদের ছেলে মেয়ে মিলিয়ে পরিবারের মোট সদস্য ১২ জন। তাদের পরিবারের ৫ বিঘা জমি রয়েছে। তরুন নিজে চাষ করে। ধান এবং গ্রীস্মকালে টমেটো, ঢেঁড়শ চাষ করেন। তরুনের সঙ্গে মাহিষ্যপাড়ার ক্ষেত অঞ্চলে গেলাম। এই ক্ষেতুঞ্চলের এবার কোন জায়গায় কোন ধান রোয়া হয়নি। কয়েকটা জায়গায় বীজ তোলা রয়েছে। প্রায় জৈষ্ঠ মাস ও আষাঢ় মাস থেকে দেড় মাস ধরে বীজ তোলা রয়েছে কিন্তু জলের অভাবে ধান রোয়া যাচ্ছে না। তরুন একটা পুকুর দেখালো সেখানে মাত্র দু-ফুট জল অথচ শ্রাবণ মাসে এখানে প্রায় পুকুরের জল কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। জলের অভাবের ফলে মাছের বেশ অভাব দেখা যাচ্ছে। চারা মাছ বা দেশী মাছ বেশ কম বাজারে।
তরুনের সাথে ক্ষেত অঞ্চলে ঘুরুতে ঘুরতে অনেক কথা হল। গত বছর শ্রাবণের প্রথমে মাসে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের যে ক্ষতি হয়েছিল তারা ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে পারে বিডিওর মাধ্যমে। তরুন অনেক ছোটাছুটি করে আবেদন করলেও কোন ক্ষতিপূরণ পায় নি। তরুন দেখাল কয়েকটা বীজ তোলা, এছাড়া কয়েকটা সব্জীর ক্ষেতও দেখাল যেমন ঝিঙে, উচ্ছে, শশা যেগুলি চাষ জলের অভাবে নষ্ট হচ্ছে।
তরুন আমাকে চাষের একটা হিসাব দিল যাতে দেখাল যে কীভাবে চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। গত বোরোর সময় মাঘ-ফাল্গুন এর থেকে কীভাবে এবার চাষের খরচ বেড়ে গেছে সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে। গত বছর ২০১১ থেকে জিওটি সারের দাম প্রতি কেজির দাম জয়নগর গঞ্জের বাজারে দাম ছিল ১৪ টাকা। ৫০ কেজির বস্তার দাম ছিল ৭০০ টাকা এবার তার দাম দাঁড়িয়েছে ১০০০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে ৬ টাকা করে বেড়েছে। ২০১১-তে ৭৪ কেজির বস্তার দাম ছিল ৮০০ টাকা। এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০০ টাকা। পটাশ সার ৫০ কেজির দাম ছিল ৪০০ টাকা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকা। ইউরিয়ার সারের দাম গত বছর ৫০ কেজির বস্তার দাম ছিল ৩০০ টাকা। এবার তার দাম দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা। ওরা সাধারণত নিজেরা চাষ করলেও কয়েকটা ক্ষেত্রে ওদের জনমুজুর নিতে হয়। বেড়েছে জনমুজুরের খরচও। গত বছর জনমজুর ছিল ১৫০ টাকা এবার তার মজুরি বেড়ে হয়েছে ১৭০-১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। পাওয়ার ডিলার ঘণ্টা প্রতি ছিল ১৮০ টাকা এবার তা বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। ফলের চাষের খরচ বেড়েছে।
সব্জী ধান রোয়ার সময়৫ বিঘেতে ২০টা রোজ লাগে। ধান কাঁটার সময় ১৫টা রোজ লাগে। ধান তোলার সময় অর্থাৎ ক্ষেত থেকে বাড়িতে নিতে ২০টা রোজ লাগে। নিজের মিশিনে ধান ঝাড়তে ১৫টা রোজ লাগে। তরুনের বড় দাদা রাজমিস্ত্রীর কাজ করে, ছোট ভাইয়ের চানার দোকান আছে। গত বছর বোরো চাষে ক্ষতি হয়েছিল তা এবার টমেটো ও ঢেড়শ চাষে কিছুটা পুষিয়ে নিলেও গত বছর সারের জন্য ৯ হাজার টাকা ধার করেছিল এবার তা শোধ করতে হয়েছে লাভের টাকা থেকে। কিন্তু এবার সার বাকিতে পাওয়া যাচ্ছে না, নগদে নিতে হচ্ছে। এবার ওরা জৈব চাষের দিকে ঝুকছে। ঘ্রের কাছে খালি জমিতে চেম্বার করে তার পুকুরের পানা, বাড়ির ব্যবহার করা সব্জীর খোশা, এছারা নিমপীঠের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে আনা বিশেষ ধরণের কেঁচো আনতে হবে। সেই কেঁচো চেম্বারে দিতে হয়। সেগুলো ঢেকে রাখতে হয় প্রায় সাত দিন। গুলো যে মল ত্যাগ করে সেটা ছাকনি দিয়ে ছেকে নিয়ে জমিতে দিতে হবে।
Leave a Reply