সৌম্য দেব, শান্তিপুর, ২৭ মার্চ। ছবি উজান চট্টোপাধ্যায়ের তোলা#
কে জাগে? নীলকমলের আগে লালকমল জাগে। আর জাগে … দপদপ করে ঘিয়ের দীপ জাগে। ওরা জেগে থাকতে চাইছে। জাগাতে চাইছে আর সকলকে। ওরা মানে শান্তিপুর সাংস্কৃতিক-এর নটধারা। ২৭ মার্চ বিশ্ব নাট্য দিবস উপলক্ষ্যে বাণীবিনোদ নির্মলেন্দু লাহিড়ী রঙ্গমঞ্চে (শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরি হল) একযুগ ধরে রাত জাগছে ওরা। এ বড়ো সুখের সময় নয়। তাই জেগে থাকাও একটা ধর্ম — ওরা জানে ওরা মানে। আর এই নাট্য কোজাগরীর এক রাতের জাগা কেমন হবে, এটা ভাবতে ভাবতে ওদের যোগাযোগ চলতে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করতে করতে ওদের প্রস্তুতি চলতে থাকে। শুধুমাত্র নামী অনামী নাট্যদলের কর্মীই নয়, ওদের এই যোগাযোগগুলোতে থাকে কবি চিত্রকর সঙ্গীতশিল্পী আবৃত্তিকার লোকনৃত্যের দল বাদ্যযন্ত্রী থেকে শুরু করে শিল্পের আঙিনায় প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রের মানুষ। এটাই নাট্যকোজাগরীর ঐতিহ্য। আর এর ঐতিহ্যে ছড়িয়ে থাকে কলকাতার প্রতিষ্ঠিত শিল্পী থেকে শুরু করে শান্তিপুরের ঘোমটা দেওয়া গৃহবধূ। মার্চ মাস পড়তেই অপেক্ষা করে বহু মানুষ সাংস্কৃতিকের পরম আদরে হাতে লেখা সেই নিমন্ত্রণপত্রটির জন্য।
অবশেষে ২৭ মার্চ বিশ্ব নাট্য দিবসের স্মরণে নাচ গান ও আবৃত্তি সহযোগে বিভিন্ন নাট্যদলের মিলিত প্রভাতফেরি। দ্বিতীয় পর্বের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় ঠিক রাত আটটায়। পাবলিক লাইব্রেরি চত্বর এবার সেজে উঠেছে অভিনেত্রী বিনোদিনীর বিভিন্ন ছবি ও তথ্যের ভাণ্ডারে — সহায়তায় পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাদেমি। প্রেক্ষাগৃহের বাইরের বারান্দার দখল নিয়েছে নাট্যপত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন, সিডি ও সাংস্কৃতিকের বিগত দিনের নানা আলোকচিত্র। শয়নে স্বপনে যা সাংস্কৃতিক, দলের প্রাণভোমরা কৌশিক চট্টোপাধ্যায় একে একে মঞ্চে ডেকে নিলেন নাট্যসমালোচকদের — নৃপেন্দ্র সাহা, সংলাপ-কলকাতা নাট্যদলের পরিচালক শ্রী মুখোপাধ্যায়, শান্তিপুরের বিধায়ক শ্রী অজয় দে, পাবলিক লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক শ্রী সোমনাথ কর এবং আরও অনেককে। বিশ্ব নাট্যদিবস ২০১৩ উপলক্ষ্যে নাট্যকার দারিও ফো-র বাণীটি পাঠ করেন নৃপেন্দ্র সাহা মহাশয়। সাংস্কৃতিকের পক্ষ থেকে এবার সম্মাননা প্রদান করা হল প্রখ্যাত আলোকচিত্রী মাননীয় দীপক মুখোপাধ্যায়, স্বনামধন্যা অভিনেত্রী শ্রীমতি মন্দিরা সোম এবং নাট্য সংগঠক শ্রী সচিদানন্দ মহাশয়কে। পলাশ আবীরের রঙে, ফুলের গাছের চারায়, মিষ্টান্নে, উত্তরীয় শাড়িতে এবারের নাট্যকোজাগরীর মূল ভাবনা বিনোদিনীর সার্ধ শতবর্ষ স্মরণে স্মারকে মানপত্রে সংবর্ধিত হলেন বিশিষ্টরা। ভাবনায় থাকে বোধহয় মনে রাখার আবেদন আর থিয়েটারের সামগ্রিকতা। অনুষ্ঠানমঞ্চে সাংস্কৃতিক কর্তৃক প্রকাশিত দীপক মুখোপাধ্যায়ের ণ্ণআলো’ প্রকাশনাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘটে লেখকের স্বহস্তে। এরপরের অনুষ্ঠানগুলি ঘড়ির কাঁটার সাথে দৌড়তে থাকে।…
Leave a Reply