শমীক সরকার, কলকাতা, ২৬ ফেব্রুয়ারি#
ফুকুশিমা পরমাণু বিপর্যয়ের চার বছর পূর্ণ হচ্ছে ১১ মার্চ। কিন্তু ফুকুশিমা চুল্লিগুলি থেকে তেজস্ত্রিয় দূষণ আকাশ বাতাস জল-এ তেজস্ক্রিয় দূষণ ছড়িয়ে পড়ায় এখনও লাগাম টানা যায়নি।
ফুকুশিমা চুল্লির তেজস্ক্রিয়তার ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত
ফুকুশিমার ২ নং চুল্লির বিল্ডিং-এর ছাদে বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় জলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই তেজস্ক্রিয় জল বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ফুকুশিমা চুল্লির দায়িত্বে থাকা সংস্থা টেপকো-র কর্মকর্তারা। ২ নং চুল্লির বিল্ডিং-এর ওই ছাদের অংশে যে তেজস্ক্রিয়তার পরিমাপ করা হয়েছে, তা ২৩ হাজার বেকারেলের মতো। এই মাত্রা ওই ছাদ এবং অন্যান্য চুল্লির ছাদগুলির যে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা — তার তুলনায় প্রায় দশগুণ। ২৪ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক সম্মেলন করে এই তথ্য জানিয়েছে টেপকো।
প্রায় দশ মাস ধরে এই তেজস্ক্রিয়তা রয়েছে এবং এই দূষিত জল সমুদ্রে গিয়ে মিশছে বলেও জানা গিয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাসেই চুল্লির নিকাশি ব্যবস্থায় অত্যধিক মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গিয়েছিল বলে টেপকো সূত্রে খবর। কিন্তু তারা তখন তার উৎস বার করতে পারেননি। এতদিনে তা জানা গেল।
এই ঘটনা জানাজানি হতেই ফুকুশিমার মৎস্যজীবীদের ইউনিয়ন নেতা মিডিয়াকে বলেছেন, এবার ধীবরদের কাছে আমি কী জবাব দেব? আমি টেপকোকে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু ধীবররা আমায় এবার ছাড়বে না। প্রসঙ্গত, ফুকুশিমার সমুদ্রের ধীবরদের ব্যবসার বিস্তর ক্ষতি হয়েছে ফুকুশিমাতে ২০১১ সালের ১১ মার্চ পরমাণু চুল্লির বিপর্যয় ঘটার পর।
তবে ৪ নম্বর চুল্লির বিল্ডিং থেকে অব্যবহৃত এবং পোড়া জ্বালানি নিরাপদেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া গেছে প্রকল্পের পোড়া জ্বালানি রাখার পুকুরে।
ফুকুশিমার উদ্বাস্তু
এদিকে, ওই বিপর্যয় এবং সুনামির কারণে উদ্বাস্তু হয়ে উঠে আসা মানুষদের সামান্য কিছু অংশ ফুকুশিমায় ফিরে গেছে। এখন উদ্বাস্তু মানুষদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ উনিশ হাজারের মতো। মোট এক লক্ষ ষাট হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছিল। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই আর ফিরে যেতে পারেনি, আদৌ ফিরতে পারবে কি না তাও নিশ্চিত নয়, কারণ এভাকুয়েশন জোন-এর দূষণ পরিষ্কার করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। ফুকুশিমা প্রদেশের প্রশাসনের মতে, অনেকেই উদ্বাস্তু থাকার অর্থনৈতিক জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ফিরে গেছে। তবে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বাতাসে তেজস্ক্রিয়তা কিছুটা কমেও এসেছে। মাটির দূষণ-দূরীকরণের প্রকল্পে মাটির দূষণও কিছুটা কমেছে।
ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পরিষ্কারের কাজে শিশুশ্রমিক!
কমবয়সী, অদক্ষ এবং দুটো-বেশি-পয়সার-জন্য-যে-কোনো-কাজ-করতে-পারা বেকারদের ঠিকায় পাঠিয়ে ফুকুশিমার বর্জ্য পরিষ্কার করা প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। টেপকোর থেকে বরাত পেয়ে বর্জ্য পরিষ্কার এবং কনস্ট্রাকশনের কাজের দায়িত্বে থাকা একটি ঠিকাদার সংস্থার এক কর্মকর্তা সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন একটি পনেরো বছরের কিশোরকে এই কাজে পাঠানোর জন্য। আইচি প্রদেশের এই কিশোরটি জানিয়েছে, সে আগে যেখানে কাজ করত, সেখানে মাইনে কমিয়ে দিয়েছিল এবং মালিক মেরেছিল, কারণ সে ভালো কাজ করতে পারতো না। এই অবস্থায় সে ফুকুশিমায় কাজে আসে গত বছর এপ্রিল মাসে। কিন্তু জুলাই মাসে সে ধরা পড়ে যায় বয়স কম হওয়ার জন্য।
ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের অস্থায়ী সঞ্চয়
ফুকুশিমার পরিষ্কার করা বর্জ্য আপাতত কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও অব্যাহত। ফুকুশিমারই ওকুমা এবং ফুটুবা নামে দুটি শহরে আপাতত তিরিশ বছরের জন্য বর্জ্য রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু ফুকুশিমা প্রদেশের প্রশাসকরা এই ব্যাপারে (ফুকুশিমা চুল্লির আশেপাশের চত্বর থেকে ওকুমা বা ফুটুবা-তে বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে) এখনও অনুমতি দেয়নি, কারণ আইন করে তিরিশ বছরের ঊর্ধসীমা এখনও করা হয়নি। তবে ওই বর্জ্য কোথায় স্থায়ীভাবে রাখা হবে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র এগোতে পারেনি জাপান।
Leave a Reply