তপন চন্দ, মাদারিহাট, জলপাইগুড়ি, ২৮ আগস্ট। কৃতজ্ঞতা সুদীপ মৈত্র এবং বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও ব্যক্তি#
কুসংস্কারের বশেই দরিদ্র ও রোগজীর্ণ মানুষ যুক্তিকে সরিয়ে রেখে রোগভোগ থেকে মুক্তি পেতে ছুটে যান বাবাজি, মাতাজি, পীর-ফকিরের থানে। আসেন সব ধর্মবিশ্বাসী মানুষই। যুক্তিহীনতার কোনও রং হয় না। একদিকে যখন অন্ধ বিশ্বাসের ঢল, অন্যদিকে যুক্তিবাদও থেমে নেই। মহারাষ্ট্রের ‘অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি’-র (এ এন এস) সদস্য-সমর্থক-কর্মীরা কুসংস্কার ও ব্ল্যাক ম্যাজিক বিরোধী আইন লাগু করার দাবিতে রক্ত দিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন।
৩ মার্চ ২০০৯ তারিখে মহাত্মা ফুলেওয়াড়া থেকে শুরু হয়েছিল রক্ত দিয়ে পত্র লেখা ও গণসংগ্রহের অভিযান। অভিযানের শেষ তারিখ ছিল ১৭ মার্চ ২০০৯। জানিয়েছিলেন ‘অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি’-র শীর্ষ নেতা নরেন্দ্র দাভোলকর। পত্রাবলী ও সংগৃহীত গণস্বাক্ষর পাঠানো হয়েছিল রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কর্তাব্যক্তিদের।
ম্যাজিসিয়ানরা যখন ম্যাজিক দেখান তখন তা শিল্পকলা হলেও, গুরুবাবা বা ধর্মীয় নেতা বা গুণিন-ওঝারা যখন রোগভোগ সারানো বা অন্য কোনও পার্থিব লাভের জন্য তা করেন তখন তা শিল্পকলা থাকে না। অর্থ নিন বা না নিন এটা প্রতারণা যা আইন করে বন্ধ করা উচিত। অর্থের লোভে কন্যা সন্তান বিসর্জন, পুত্রের লোভে শিশুবলি, মড়ক ঠেকাতে তথাকথিত ডাইনি নির্যাতন, ভূত ছাড়াতে কখনো মারধোর, কখনো বা জুতো মুখে দৌড় বা ঝাঁটাপেটা, খরা কাটাতে বা রোগমুক্তির যজ্ঞানুষ্ঠান, অকাল মৃত্যু রোধে গাছ বা কুকুরের সাথে বিয়ে দেওয়া — এসব চট করে বন্ধ হবে কি না এসব নিয়েই ছিল আন্দোলন। কারণ জাদুবিশ্বাস তো আজকের নয়। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের আদিতে ছিল এই জাদু। ঈশ্বরকে তুষ্ট করে রোগভোগ সারানো বা বৃষ্টি আনার মতো শুভ কাজ করা হলে বলা হতো ‘হোয়াইট ম্যাজিক’ বা ‘মিরাকল’। শয়তানের সঙ্গে যোগাযোগ, বাণ মেরে শত্রু বিনাশ বা ফসল ধ্বংস করার মতো ক্ষতিকর কাজকে বলা হত ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক’ বা ‘অকাল্টিজম’। ভালো বা খারাপ দু’টিই দৈবঘটিত জাদুবিশ্বাস। এই জাদুবিশ্বাস কখন যে অলৌকিক ও ঐশ্বরিক ইমেজ নিয়ে ধর্মের মধ্যে সেঁধিয়েছে, কে তার খোঁজ রাখে! কোনটা ম্যাজিক আর কোনটা বুজরুকি বা প্রতারণা তা চিনতে চাননা ধর্মভীরু, দৈবরহস্যে উৎসুক সাধারণ মানুষ। কুসংস্কার বিরোধী আইন চালুর তোড়জোড় দেখে তারা খুব সহজেই বুঝে যান, এটা তাদের ধর্মের ওপর আঘাত। ধর্মধ্বজীরাও এই ভাবনাতে ধোঁয়া দেন। সর্বধর্মসমন্বয়, সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা, আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষার বকবকানিতে সমাধিস্ত হতে হয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদকে।
সম্ভবতঃ ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ মধ্যে মহারাষ্ট্র বিধানসভা ও বিধান পরিষদে কুসংস্কার বিরোধী বিলটির একটি খসড়া পেশ করে পি জি দস্তুরকর। বিধান পরিষদের সদস্যরাও এই খসড়া বিলটিকে স্বাগত জানান। বহু আলোচনা-বিতর্ক হয়। খসড়া পরিমার্জিতও হয়েছে নানাস্তরের আপত্তিকে সম্মান জানিয়ে। ফলত প্রাথমিক খসড়াপত্রের অনেক ধারা-উপধারাই আর প্রস্তাবিত বয়ানে নেই। বিলটি বিধানসভায় পাশ করানো যায়নি ২০০৭ পর্যন্ত। সভায় পাশোয়ানের মতো প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিলের বিরুদ্ধে অনেকেই আপত্তি তুলেছেন — এই আইন চালু হলে দেশের, আদিবাসীদের প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিপন্ন হবে। প্রকৃতপক্ষে উচ্চবর্ণের শিক্ষিত শ্রেণীর একাংশ চেষ্টা করেছিলেন, যুক্তিবাদের নামে স্বদেশি সংস্কৃতির গায়ে ‘কুসংস্কার’-এর লেবেল সেঁটে তাকে হেয় করতে। ‘অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি’ মনে করে বিল পাশ না হওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের আপত্তির চেয়ে বড়ো হয়ে উঠেছে সরকারের গড়িমসি। এ এন এস-এর কার্যনিবাহী চেয়ারম্যান নরেন্দ্র দাভোলকর জানিয়েছিলেন, বছর চারেক আগে কুসংস্কার বিরোধী বিলটি মহারাষ্ট্র বিধানসভায় খসড়া আকারে পেশ করা হয়। তখন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চ্যবন তা সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করেন। বিলটি যাতে আইনের রূপ পায় তার জন্যও তিনি চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু রাজ্যের প্রশাসনিক শীর্ষপদে বসার পরও চ্যবনের দিক থেকে কোনও চেষ্টা দেখা যায়নি। সরাসরি হিংসা বা রক্ত ঝরানো তো যুক্তিবাদিতার সাথে মেলে না। তাই হয়তো মহারাষ্ট্রের যুক্তিবাদীদের এই রক্তেলেখা চিঠি …।
এ এন এস-এর দাবিকে সম্মান জানিয়ে রাজ্যে কুসংস্কার বিরোধী আইন চালু করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চ্যবন। ইতিমধ্যে ‘কুসংস্কার সংক্রান্ত বিল’ মূল্যায়ন করতে সরকারি উদ্যোগে জয়েন্ট রিভিউ কমিটি (জেআরসি) গঠিত হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল, রিভিউ কমিটির সুপারিশ মোতাবেক রাজ্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এও বলেছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের জন্য আপাতত জেআরসি-র বৈঠক ডাকা যাচ্ছে না। নির্বাচনের পর এই কমিটির সদস্যরা বিলটি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত জানালেই দ্রুত তা কার্যকরী করার চেষ্টা করবে সরকার। এই সদিচ্ছাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ডা: দাভোলকর।
মুখ্যমন্ত্রী চ্যবনের সদর্থক মনোভাব এবং মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ হয়েছিল শিবসেনা এবং তাঁদের সহযোগী সাংস্কৃতিক সংগঠন হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি। তারা হিন্দুদের জেগে ওঠার ডাক দিয়ে বলেছিল, হিন্দুবিরোধী কংগ্রেস সরকারকে আসন্ন ভোটে উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। শিবসেনার বক্তব্য ছিল, কুসংস্কার বিরোধী বিল হিন্দুবিরোধী। বিলে কুসংস্কারের বিরোধিতা করার আড়ালে হিন্দু-বিশ্বাসকে হেয় করা হয়েছে। এই বিলে মুসলিম বা অন্য কোনও ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কার নিয়ে একটি কথা না বলা হলেও আঘাত করা হচ্ছে হিন্দুদের ঐতিহ্য, বিশ্বাস, লোকাচার ও সংস্কারকে, প্রকৃত হিন্দু কখনও এই বিল সমর্থন করতে পারে না। ‘দৈনিক সনাতন প্রভাত’-এর সম্পাদকীয় স্তম্ভে লেখা হয়েছিল, কুসংস্কার বিরোধী বিল বলবৎ করতে নানা সস্তা চমকের আশ্রয় নিয়েছে রাজ্যের বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানকর্মী ও যুক্তিবাদীরা। কখনও প্রকাশ্যে ‘আপন গণ্ডদেশে গণ-চপেটাঘাত’ করে, কখনও বা ‘রক্ত দিয়ে চিঠি লিখে’ বিলের সমর্থনে জনমত তৈরি করতে চাইছে — এসব হাস্যকর ও বিপজ্জনক। যদিও এ এন এস-এর ব্যানার ও পোস্টার লক্ষ্য করে শিবসৈনিকদের রাজ্যব্যাপী ‘জুতো ছোঁড়া’ কর্মসূচীর নিন্দা করেনি উক্ত পত্রিকা। উল্টে ছাপার অক্ষরে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, ‘রাজ্যে কুসংস্কার বিরোধী আইন’ যদি চালু হয় তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে শিবসেনা। সমুচিৎ শিক্ষা দেবে এ এন এস এবং রাজ্য সরকারকে। রক্তে কলম ডুবিয়ে রাষ্ট্রপদাধিকারীদের চিঠি লেখার কর্মসূচীকে তুলোধোনা করে তারা বলেছিলেন, বিজ্ঞানকর্মীদের এ কেমন অবৈজ্ঞানিক কাজ। রক্ত দিতে গিয়ে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তার দায়িত্ব কে নেবে! এ এন এস-কে রক্তপিপাসু বলতেও কসুর করেনি দেবসেনাগণ। যদিও এ এন এস নেতা তথা পেশায় চিকিৎসক দাভোলকর জানান, শরীর স্বাস্থ্যের হাল হকিকত বুঝতে প্রায়শই আমাদের রক্তপরীক্ষা করতে হয়। এর জন্য শরীর থেকে রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পাঁচ মিলিলিটার রক্ত নিলে ক্ষতি কি! তাছাড়া রক্তদাতারা স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন, আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে। ইতিমধ্যেই শিবসেনার ওজর আপত্তি ভেস্তে গিয়েছিল এ এন এস-এর একাধিক সমাবেশে।
ভবি ভোলবার নয়। কারণ ইতিমধ্যে কুসংস্কার বিরোধী বিল পাশ করার দাবি খোদ ধর্মবিশ্বাসের শিকড় ধরে নাড়া দিতে শুরু করেছিল। যৎসামান্য হলেও ধর্মবিশ্বাসের খুচরো ও পাইকারি বিক্রেতাদের সুখনিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটছিল তাতে সন্দেহ নেই। ‘ধর্ম’ এখনও এদেশে খুব বড়ো রাজনৈতিক হাতিয়ার। বেগতিক দেখলেই ‘ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত নয়’ রব তুলে সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ্বাসে সুড়সুড়ি দিয়ে সাম্প্রদায়িক জিগির তোলার চেষ্টা করে বিভিন্ন দলের রাজনীতিকরা। বিজ্ঞান আন্দোলন যতক্ষণ জনচেতনার বিকাশের নামসঙ্কীর্তন হয়ে থাকবে, ততদিন সব দলই গুণগান করবে এর। কিন্তু বিজ্ঞান আন্দোলন ধর্মধ্বজীদের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠলে তাকেও সাম্প্রদায়িকতার কানাগলিতে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে না, তার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারেনা। শিব ও অন্যান্য দেবসেনাদের হামলা থেকে বিজ্ঞান আন্দোলনকে রক্ষা করতে কুসংস্কার বিরোধী আইনের দাবিকে অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই।
মুক্তচিন্তক বিজ্ঞানকর্মী ডা: নরেন্দ্র দাভোলকর আর আমাদের মধ্যে নেই। গত ২০ আগস্ট মোটর বাইক আরোহী দুই অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতির গুলিতে নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল মহারাষ্ট্রের পুনের নিকট ওঙ্কারেশ্বর মন্দিরের নিকট ওঙ্কারেশ্বর ব্রিজের পাশে। সময় সকাল ৭ টা থেকে ৭.৩০। তিনি প্রাতঃভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন। বন্দুকধারীরা ৩/৪ টি গুলি চালিয়েছিল। নরেন্দ্র রেখে গেলেন স্ত্রী ডাঃ সইলা, পুত্র হামিদ এবং কন্যা মুক্তকে। আর কাঁদিয়ে গেলেন অসংখ্য অনুগামীকে। মুক্ত চিন্তকের বাড়ি সাতারাতে। হত্যার খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে পুনে, সাতারা এবং মহারাষ্ট্রের অন্যান্য এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বিরাজ চ্যবন সাতারাতে পৌঁছলে বিজ্ঞানকর্মী এবং সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়েন — কুসংস্কার বিরোধী বিল অবিলম্বে পাশ করানোর জন্য। ২১ আগস্ট বিজ্ঞানকর্মী হত্যার প্রতিবাদে সর্বদলীয় বনধের ডাক দেওয়া হয় পুনেতে। পুলিশের বক্তব্য এটি পরিকল্পিত হত্যা, কারণ অপরাধীরা জানত ডঃ দাভোলকর সোম ও মঙ্গলবার পুনেতে থাকেন। হত্যার হুমকি বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও অভিযোগ নেই। পরিবারের বক্তব্য, তিনি প্রায়শই হুমকি পেতেন এবং উপেক্ষা করতেন। পুলিশ সম্ভাব্য হত্যাকারীর একটি স্কেচ তৈরি করেছে জনৈক প্রত্যক্ষদর্শীর কথা অনুসারে এবং সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করছে তথা খতিয়ে দেখছে। জয়েন্ট পুলিশ কমিশনার সঞ্জীব সিংঘলের কথায় ক্রাইম শাখার আটটি ইউনিট তৈরি করা হয়েছে তদন্তের জন্য। দাভোলকরের অনুগামীরা জানাচ্ছে, দক্ষিণপন্থী দল প্রায়শই তাঁকে হুমকি দিত।
নিহত বিজ্ঞানকর্মী একজন ডিগ্রিধারী ডাক্তার, সমাজসেবার কাজ করার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে গঠন করেন মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি। রাজ্য বিস্তৃত আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল গডম্যান ও কুসংস্কারের বিরোধিতা। কুসংস্কার বিরোধী বিল পাশ করানোর লক্ষ্যে তিনি ছিলেন অবিচলিত। বিভিন্ন সংগঠন তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মানার্থে ওই বিল পাশ করানোর দাবি জানাচ্ছে। বিজ্ঞানকর্মীদের কথায়, এ মৃত্যু আন্দোলনের এক প্রবাহ। অল ইন্ডিয়া পিপলস সায়েন্স নেটওয়ার্কের বিবেক মন্টেরিও-র কথায়, ঘটনা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর আঘাতের প্রচেষ্টা, সংবিধানের প্রতি একটি আঘাতও বটে, যা তার নাগরিকদের বিজ্ঞান অনুসারী হওয়ার কথা বলে। মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বিরাজ চ্যবন ঘটনার নিন্দা করেছেন এবং হত্যাকারীদের সম্পর্কে তথ্য প্রদানের জন্য দশ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন।
এক হাজারের মতো মানুষ ঘটনার প্রতিবাদে ২১ আগস্ট পথ অবরোধ করেন। সকল রাস্তা ও বাণিজ্য এলাকা মরুভূমির মতো দৃশ্যমান হয়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং ছাত্র সংগঠন বিশাল মিছিল করে ওঙ্কারেশ্বর মন্দিরের নিকট মহাত্মা ফুলে স্কোয়ারে জমায়েত হয়। বিভিন্ন বক্তা ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান।
দক্ষিণপন্ত্রী হিন্দু সংগঠন, সনাতন সংস্থা, তাঁদের মুখপত্র সনাতন প্রভাত-এ তাদের মত ব্যক্ত করেছেন। এদের নেতা জয়ন্ত এথভেল বলেছেন, জন্ম এবং মৃত্যু পূর্বনির্ধারিত, এবং প্রত্যেকে কর্ম অনুসারে ফল পায়। তিনি আরও বলেছেন ডাঃ দাভোলকরের মৃত্যু রোগভোগ বা অস্ত্রচিকিৎসায় হয়নি, এটা সর্বশক্তিমানের আশীর্বাদ। ফলশ্রুতিতে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির প্রতিক্রিয়া : সংগঠনটিকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা উচিত; যদিও সনাতন সংস্থার এক মুখপাত্র তা অস্বীকার করে বলেছেন, বক্তব্যের মধ্যে কিছু অসঙ্গতি থাকতে পারে। সনাতন সংস্থার আরেক মুখপাত্র অভয় ভর্তক বলেছেন, দাভোলকরের শোচনীয় মৃত্যুতে আমরাও মর্মাহত। তাদের সাথে আমাদের নীতিগত পার্থক্য আছে, তবে তা ব্যক্তিগত স্তরে নয়। এতে আমাদের কিছু করার ছিল না। সরকারের কাছে ঘটনা নতুন বার্তা বহন করছে যা সরকারকে শক্তিশালী করবে তা হল ধর্মীয় শঠতা, মানুষ বা পশুহত্যা, রীতি বিষয়ে আসন্ন মাঝ ডিসেম্বরে শীতকালীন অধিবেশনে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
আরো খবর, ভারতের রাজ্যে মহারাষ্ট্র সত্যের পথে অবিচলিত দিশারী, আপোষহীন সাংস্কৃতিক আন্দোলন কর্মী ডাঃ নরেন্দ্র দাভোলকরের নিহত হওয়ার পরদিন থেকে এক জরুরি আইন, ব্ল্যাক ম্যাজিক এবং কুসংস্কার বন্ধের পথে হাঁটছে। আপন রক্ত দিয়ে আমাদের মানসিকভাবে কয়েক কদম এগিয়ে দিয়েছেন দাভোলকর। মানব প্রজাতি যতদিন বেঁচে থাকবে, চিন্তা চেতনায় দাভোলকর বেঁচে থাকবেন। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠছে অজ্ঞাত কবির কয়েকটি পংক্তি :
পথ বহুদূর সামনে চড়াই তবুও মিছিল এগিয়ে যাও।
রাত কত হল, প্রশ্ন কোরোনা শুধু বোবাদের ভরসা দাও।
এ মিছিল যদি জাগে আজ ভাঙা পাঁজরের যন্ত্রণা–
তবু রোদে পোড়া হাসিমুখে দাও এগিয়ে চলার মন্ত্রণা।
স্তব্ধ বাতাস, মাথার আকাশ ব্যথার ভারেতে নামতে চায়,
পথের সাথীকে পথে রেখে এসে বুঝি মন তোর আজ কান্না পায়;
তবু সাবধান, শহীদের স্মৃতি বুকের আগুনে জ্বেলে রাখিস,
ক্লান্তি লগনে রক্ততিলক সাথির কপালে পরিয়ে দিস।
থেমোনা মিছিল, সামনে অদূর শেষ বাঁক বুঝি রয়েছে ওই —
হৃদয়ে এখন প্রশ্ন কোরোনা, কি পেতে পারতে পেয়েছে কই?
Tapan Chanda says
Anek babab bhul.
শমীক says
তপন-দা, মোটামুটি ঠিক করেছি বানানগুলো, একটু দেখবেন? প্রিন্ট কপিতে লেখাটাকে কিছুটা ছোটো করতে হয়েছে। বেশ বড়ো লেখাটা।