ইউরো কাপ ফুটবলের জমজমাট আসর বসেছে ইউক্রেন আর পোল্যান্ডে। আর তার সাথেই জাঁকিয়ে বসেছে মেয়েদের দেহব্যবসা। ফুটবল অনুরাগী দর্শকরা বিদেশ থেকে ইউক্রেনে আসছে, উপরি পাওনা হিসেবে পূর্ব ইউরোপের গরিব দেশের কমবয়সি মেয়েদের কাছ থেকে সস্তায় যৌনপরিষেবা নেওয়ার জন্য। এই ইউরো কাপ ফুটবল যারা আয়োজন করে সেই ইউনাইটেড ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বা উয়েফা বাস্তবত দেহব্যবসার দালালের ভূমিকা পালন করছে। এমনই অভিযোগ করেছে ইউক্রেনের কমবয়সি মেয়েদের নারীবাদী সংগঠন ‘ফেমেন’।
যদিও ইউক্রেনে দেহব্যবসা বেআইনি, তবুও সাড়ে চার কোটি মানুষের দেশে সরকারি হিসেবেই বারো হাজারের ওপর মহিলা দেহব্যবসায় যুক্ত। বেসরকারি মতে সংখ্যাটা সত্তর হাজার। ফেমেন সংগঠনের মুখপাত্র ইনা শেভচেঙ্কো গোল ডট কম নামের একটি ফুটবল ওয়েবসাইটে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘উয়েফা শুধু টাকা চেনে। শুধু এর লোভেই তারা এখানে ওখানে যায়। আর তারা ভালো করেই জানে, ইউক্রেনে টাকা কামানোর উপায় হল সেক্স ইন্ডাস্ট্রি। মেয়েদের এখানে কোনো বিকল্প রাস্তা নেই আয় করার। দালালরা তাদের নিয়োগ করে রাস্তাঘাটে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, ক্লাবে — সব জায়গায়। বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা এই ইন্ডাস্ট্রিতে জুড়ে যায়। এই দেশটা পতিতাদের দেশ। … উয়েফা আমাদের সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করেছে, যাতে এই ব্যবসার বাড়বৃদ্ধি ঘটে। তাকিয়ে দেখুন, এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই আপনি দেখতে পাবেন সেক্স ক্লাব। আমাদের দেশে যত ওষুধের দোকান বা রেস্তোরাঁ আছে, তার চেয়ে বেশি আছে সেক্স ক্লাব। … আমরা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে উয়েফার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, চেয়েছিলাম দেহব্যবসা রোধে তাদের সঙ্গে কাজ করতে। কিন্তু তারা পাত্তাই দেয়নি। তখন আমরা বুঝি, উয়েফাই হল আসল দালাল। মূল দালাল মিশেল প্লাতিনি (উয়েফার কর্তা, প্রাক্তন ফুটবলার)’।
আজকাল দেশে বড়ো খেলাধুলার আসর বসলে কেবল ইস্পাত, লোহা, সিমেন্ট, ইট, বালি, ইমারত, পাওয়ার, দুর্নীতি এবং ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা বাড়ে না, বাড়ে দেহব্যবসাও। ২০০৪ সালে গ্রীসে অলিম্পিক গেমসের আসর বসলে সেখানে লিপিবদ্ধ নারী পাচারের মামলা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসার প্রাক্কালে জার্মানি এমনকী দেশে যৌনব্যবসা আইনসিদ্ধ করে দিয়েছিল। আগামী মাসে লন্ডনে বসতে চলেছে অলিম্পিক, সেখানেও নারীপাচার বাড়ছে, যদিও পতিতাবৃত্তির ওপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেখানে।
ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এইডস রোগী ইউক্রেনে। পতিতাদের প্রতি দশজনের মধ্যে একজন সেখানে এইডস মারণ রোগে আক্রান্ত। সেখানে যৌনপরিষেবা চাওয়াটা বেআইনি নয়, যৌনপরিষেবা দেওয়াটা অপরাধ, ধরা পড়লে জরিমানা হয়। অপ্রাপ্তবয়স্কের কাছ থেকে যৌন পরিষেবা নিলে প্রথমে ধরা হয় সেই অপ্রাপ্তবয়স্কাকে, অপরাধী হিসেবে। গত বছর খোদ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘ইউক্রেনে এসে কাঠবাদাম গাছ দেখুন আর দেখুন কীভাবে মেয়েরা একটু গরম পড়লেই তাদের জামাকাপড় খুলে ফেলতে শুরু করে।’ বয়স্ক পয়সাওয়ালা পশ্চিম ইউরোপিয়ানরা কচি বউয়ের খোঁজে ইউক্রেনে আসে। এসবের জন্য আছে বিশাল বিশাল আন্তর্জাতিক দালালচক্র।
এমতাবস্থায়, ২০০৮ সালে সেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরতা ১৮-২০ বছর বয়সি কিছু মেয়ে এক জঙ্গী নারী আন্দোলন শুরু করে। তারা বুকের পোশাক খুলে ফেলে এবং বিভিন্ন যৌন উত্তেজক অঙ্গভঙ্গী করে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে তাদের দাবি পোস্টারে লিখে। পুরুষ আধিপত্য, নারী পাচার, বিয়ে ব্যবসা, সেক্স ইন্ডাস্ট্রি, সেক্স ট্যুরিজমের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহ। কিন্তু কেন তারা পোশাক খুলে ফেলে এবং যৌন অঙ্গভঙ্গী করে প্রতিবাদ করে? কারণ সাদামাটা প্রতিবাদে মিডিয়া বা লোকজন, কেউই পাত্তা দেয়না। এই প্রতিবাদ করার জন্য ফেমেন-এর অফিসের বাইরে দিন রাত পুলিশ নজর রাখে, দেখে, সেখানে কারা ঢুকছে কারা বেরোচ্ছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক মিডিয়া এদের প্রতিবাদের ছবিও ছাপে।
পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের এই দেশটিতেই ১৯৮৬ সালে অভিশপ্ত চের্নোবিল পরমাণু বিপর্যয় ঘটেছিল। দেশটির পঙ্গু অর্থনীতির কারণে প্রচুর পুরুষ বিদেশে কাজের সন্ধানে চলে যায়।
কুশল বসু, কলকাতা, ২৮ জুন
Leave a Reply