শমীক সরকার, কলকাতা, ৩১ অক্টোবর, তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া#
পশ্চিম আফ্রিকার ছোটো দেশ বারকিনা ফাসো-তে জমানা বদল চেয়ে জনঅভ্যুত্থান ঘটেছে।
প্রায় সতেরো লক্ষ মানুষের বসতি এই দেশটি এককালে রাজতন্ত্র এবং তারপর ফরাসি উপনিবেশ ছিল। ১৯৬০ সালে স্বাধীন হলেও হাল ফেরেনি দেশটির। ১৯৮৪ সালে একটি সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটির ক্ষমতায় আসেন আদর্শবাদী জেনারেল শঙ্কর এবং মরুভূমি সুফলায়ন, দেশজ কৃষিজাত দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীলতা, মহিলাদের অধিকার, গণ-টীকাকরণের মতো বিভিন্ন আদর্শবাদী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। সোভিয়েতের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন শঙ্কর আফ্রিকান দেশগুলির ওপর পশ্চিমী ঋণ বাতিলেরও দাবি করেন।
১৯৮৭ সালে শঙ্কর এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের হত্যা করে ক্ষমতায় আসেন ব্লেইজ ক্যাম্পাওরে, যিনি প্রাক্তন উপনিবেশকারী রাষ্ট্র ফ্রান্সের আশীর্বাদধন্য। সেই থেকে আজ অবধি ক্যাম্পাওরে বারকিনা ফাসোর ক্ষমতায়। টানা সাতাশ বছর ক্ষমতায় থাকার পর, ফের একবার ২০১৫ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য সংবিধান সংশোধনের বন্দোবস্ত করছিলেন ক্যাম্পাওরে। কিন্তু ২৮ অক্টোবর রাজধানী শহর উয়াগাদুগু-তে লক্ষ মানুষ জমায়েত করে জমানা বদল চেয়ে। জমায়েতের এই চেহারা সারা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তখনও অবাক হওয়ার বাকি ছিল কিছু।
৩০ অক্টোবর জনঅভ্যুত্থান ঘটে উয়াগাদুগু-তে। সারা পৃথিবী তাকিয়ে দেখে জনঅভ্যুত্থানের চিরাচরিত চেহারা, যা মোটেও শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশ নয়। পুলিশ জনসমাবেশে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়লে পুলিশ লাইন ভেঙে এগিয়ে যায় জনতা। পুড়িয়ে দিতে শুরু করে সরকারি অট্টালিকাগুলো, সিটি হল, ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস ফর ডেমোক্রেসি এন্ড প্রগ্রেস-এর সদর দফতর।
এরপর জনতা এগিয়ে যেতে থাকে রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে। জাতীয় সংসদের দিকে ধাবমান জনতার উদ্দেশ্যে মিলিটারি রবার বুলেট চালায়। বিন্দুমাত্র দমে না গিয়ে জাতীয় সংসদ আক্রমণ করে জনতা। সামনে রাখা গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়। ব্যাপক ভাঙচুর, লুঠতরাজ চলে সংসদে। রাষ্ট্রপতির বাড়ির সামনে রাষ্ট্রপতির সশস্ত্র প্রহরীরা ধাবমান জনতার উদ্দেশ্যে গুলি চালালে অন্তত তিনজন মারা যায়। জাতীয় রেডিও এবং টেলিভিশন দফতর আক্রমণ করা হয়। জাতীয় টিভির সান্ধ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয় জনতা। জাতীয় রেডিও ভবন ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে সৈন্যবাহিনী। কিছু সৈন্য জনতার সঙ্গেও জুটে যায়। এইদিনই আরো অন্তত দু-জনের মৃত্যু হয়। সংসদ সদস্যদের আবাসনেও আক্রমণ করে জনতা, এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। বিলাসবহুল হোটেল আজালাই-তেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ইন্টারনেটের থ্রিজি নেটওয়ার্ক এবং এসএমএস বন্ধ হয়ে যায়, যদিও ইন্টারনেট চালু থাকে। রাজধানী শহর ছাড়াও অন্যান্য শহরগুলিতেও সহিংস প্রতিবাদ হয়, বিভিন্ন স্ট্যাচু ভেঙে ফেলা হয়। রাজধানীর এয়ারপোর্টটি বন্ধ হয়ে যায়। সংসদ সদস্যরা পালিয়ে যায়। এক বিরোধী সাংসদ আব্লাস উদ্রাওগো জানায়, ণ্ণ… ভবিষ্যতে কি হবে কেউ জানে না, কারণ বিক্ষোভকারীরা কারো কথা শুনছে না।’
বিকেলবেলা সামরিক বাহিনীর পক্ষে একটি রেডিও বার্তায় জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ক্যাম্পাওরে সরকার ভেঙে দিয়েছেন। জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে দেশে। ক্যাম্পাওরে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অস্থায়ী প্রধান হিসেবে আগামী একবছর ক্ষমতায় থাকবেন মাত্র, জমানা বদলটি যাতে যথাযথ হয়, তা দেখভাল করার জন্য। একটি ফরাসী সংবাদসংস্থা জানায়, ক্যাম্পাওরের ভাই দেশ থেকে পালাতে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
জনসমাবেশের ডাক যারা দিয়েছিল, সেই ‘উনিও পুর লা রনেইসঁস / মুভমঁ শঙ্করাইস্ত’ (ফরাসীর বাংলা, ‘পুনর্জন্মের জন্য ইউনিয়ন / শঙ্করবাদী আন্দোলন’) ২০০০ সালে জন্মানো একটি ছোট্ট রাজনৈতিক দল, আগের দুটি সাধারণ নির্বাচনে দাঁড়ালেও এরা কখনোই পাঁচ শতাংশও ভোট পায়নি। জনঅভ্যুত্থানের পর তারা ঘোষণা করেছে, ণ্ণপ্রেসিডেন্টকে ফল ভুগতে হবে’।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বারকিনা ফাসোতে প্রথমে সেনাবিদ্রোহ এবং পরে জনবিদ্রোহ হয়েছিল, জিনিপত্রের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে। এই বিদ্রোহের জেরে ক্যাম্পাওরে কিছুদিন রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল
Leave a Reply