সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ৩০ জুন#
বর্ধমানের একটি পুরনো জলাভূমির একটি অংশ ছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে, আর একটি অংশ ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ওই ব্যক্তিগত আওতায় থাকা অঞ্চলে নয়া কাঠামো নির্মাণের তোরজোর চলছিল। তার মধ্যেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত জলাভূমির অংশেও অফিসারদের জন্য একটি কোয়ার্টার বানানোর কথা ঘোষণা করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। ওই জলা বাঁচাতে চেয়ে জলাভূমি সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ঊর্মি রূপা পাল স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাক্ষর নিয়ে একটি আবেদনপত্র জমা দেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে। তারপর জানা যায়, বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একটি চুক্তি করেছে ওই জলাভূমিটি সংরক্ষণের জন্য। উপাচার্য মিডিয়াকে বলে দেন, ওই জলা বুঁজিয়ে কোনো কংক্রিটের কাঠামো হবে না, ওখানকার জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী রক্ষার দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের। ওই জলাটিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ। ওই পাঁচিল দেওয়ার ছুতোয় জলাভূমির একটি বড়ো অংশ বুঁজিয়ে দেয় কন্ট্রাক্টররা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের অংশের ওই জলাজমিতে তারপর শুরু হয় নতুন কাঠামো নির্মাণের কাজ, আর বোঁজানো এলাকাটাকে নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হতে থাকে।
ঊর্মির বাবা বনমালী পাল এই ব্যাপারটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গোচরে আনলে বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচিলের ফাঁক বন্ধ করে দেয়। ফলে পাঁচিলের বাইরের কাঠামো তৈরির জন্য নির্মাণ সামগ্রী আনায় অসুবিধা হতে থাকে।
ঊর্মির অভিযোগ যে এই নয়া কাঠামোটিগুলিও বেআইনি। কারণ সেটি ওই এলাকার স্বাভাবিক নিকাশি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। বনমালীবাবু বর্ধমান মিউনিসিপ্যালিটির কাছে অভিযোগ করেন এই ব্যাপারে। তাগাদা দেওয়ার পরেও এর বিহিত না হওয়ায় তিনি মিউনিসিপ্যালিটি চেয়ারম্যানের কাছে তথ্য জানার আইনে আবেদন করেন ১৫ জুন।
তারপরই শুরু হয় নতুন খেলা।
২১ জুন রবিবার সকালে ঊর্মিদের বাড়িতে তিনজন যুবক এসে জানায়, ওয়ার্ড কাউন্সিলর (২৭ নং ওয়ার্ড, কাউন্সিলরের নাম বশির আহমেদ) তাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে। কথা বলবে ওই তথ্য জানার অধিকারের আবেদন বিষয়ে। ঊর্মি তার বাবা বনমালীবাবুর সঙ্গে যায় কাউন্সিলরের সাথে দেখা করতে। সেখানে তখন ২৫-৩০ জন লোক তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।
তারপরের ঘটনা দুঃস্বপ্নের মতো। বর্ধমান শহরে কৃষ্ণসায়র পার্কের মূল গেটের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে সকাল দশটায় এই ঘটনা ঘটে। ঊর্মির নিজের বয়ানে,
‘কাউন্সিলর আমাদের হুমকি দেয়, এলাকায় টিঁকে থাকতে চাইলে ওই আরটিআই আবেদনটি প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আমি বাধা দিতে গেলে বাবার ওপর চড়াও হয় কাউন্সিলরের লোকজন। বাবা মাটিতে পড়ে গেলে তার বুকের ওপর লাথি মারতে শুরু করে কেউ কেউ। আমি চিৎকার করে বাবাকে বাঁচাতে গেলে চারজন আমাকে চ্যাংদোলা করে তুলে ধরে। ওরা আমার হাত মুচড়ে দেয়, মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়। মেমরি কার্ডটা খুলে নিয়ে ফোনটাকে মাড়িয়ে দেয়। তারপর ওরা আমাকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চুল ধরে টানতে থাকে, ডান কাঁধে ও পেটে লাথি মারে। আমি উঠে দাঁড়াতে গেলে আবার আমাকে লাথি মারা হয়। একজন পেছনটা চেপে ধরে পরনের লেগিনস-টা ছিঁড়ে দেয়। আমি সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকলে কাউন্সিলর ওই গুণ্ডাদের বলে আমাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে এবং বাবাকে মেরে ফেলতে। শেষমেশ একজন আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং গুণ্ডাদের দিকে চিৎকার করতে শুরু করে। সে আমার দিকে ভাঙা ফোনটা এগিয়ে দেয়। আমি আর বাবা দৌড়ে চলে আসি বাড়িতে। এখানেই শেষ নয়। কাউন্সিলর আরো লোকজন জড়ো করে। তারা আমাদের বাড়ি অব্দি ধেয়ে আসে এবং দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়তে চায়। তার সাথেই চলে অশ্লীল ইঙ্গিত আর চিৎকার, ‘মেয়েটাকে বার কর ওর আরটিআই করি’। পৌনে এক ঘন্টা ধরে ওরা আমাদের বাগান তছনছ করে, জানলাগুলো ভাঙে, কোলাপসিবল গেটটায় লাথি মারতে থাকে। ওরা চিৎকার করে করে কোদাল আনার কথা বলতে থাকে যা দিয়ে দরজা ভেঙে ওরা আমাকে বের করবে। মা আমাকে দোতলায় পাঠিয়ে দেয়। দরজায় খিল এঁটে আমি পুলিশকে ফোন করার চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু ১০০ ডায়াল করে কোনো সাড়া না পেয়ে আমি আমার সহকর্মী এবং বড়োদের ফোন করতে শুরু করি। তারা পুলিশকে ফোন করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত পুলিশ এসে ওদের হটিয়ে দেয়। যাবার সময় হুমকি দিয়ে যায়, রাতে আবার আসবে।’
ঊর্মি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস-এ কাজ করে, তার বাবা মা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ওরা ওই এলাকায় আছে আজ বাইশ বছর। এলাকায় ওদের সবাই চেনে জানে।
২৩ জুন ঊর্মিরা কলকাতায় চলে আসে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। ঊর্মির কথায়, ‘আমি বাবা মা এই যন্ত্রণাটা আর সইতে পারছিলাম না।’ কলকাতায় বসেই তারা খবর পায়, যারা হামলা করেছিল, তারাই তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনতে চলেছে। স্থানীয় থানাকে জানানো হলে তারা জানায় সবকিছু ঠিকঠাক আছে, ওনারা যেন চলে আসেন। কিন্তু কয়েকদিন পরে বাড়ি গিয়ে ঊর্মিরা দেখে, আরো জানলার কাঁচ ভাঙা হয়েছে তাদের অনুপস্থিতিতে।
২২ জুন বর্ধমান সদর থানায় এফআইআর রুজু করানো হয় (কেস নং ৫৮১) এবং তাতে কাউন্সিলর বশির আহমেদ সহ আরো তিন চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়। এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। উপরন্তু, এফআইআর করার পরদিনই দেখা যায়, পাঁচিল টপকে ড্রেনটা কেউ বুঁজিয়ে দিয়ে গেছে।
এমতাবস্থায় ঊর্মির প্রশ্ন, এখন করণীয় কী?
poulomi says
abilombe proshashonke er birudhdhe byabostha neoar dabi janachchi…ei nigroher ebong jola bojanor birudhdhe joto sighri samvhob byabosta nite hobe…
Krishna Prasad Guha says
What can we expect in the rule of mad & goon combinrd.