অরুণ পাল, বালি, ১৫ আগস্ট#
বেলপাহাড়ির তৃণমূল কর্মী শিলাদিত্য চৌধুরির জন্য আমাদের সত্যিই মায়া হয়। বেচারা একেবারেই সরল, সাধাসিধে। ভারতবর্ষ নামক পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের যে খেলাটা চলছে তার নিয়মকানুন বেচারার একদম জানা ছিল না। নিয়মটা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী-নেতানেত্রীরা নিরাপত্তার বলয়বেষ্টিত হয়ে এসে অনেক উঁচুতে বাঁধা মাচায় উঠে বক্তৃতা দেবেন আর ণ্ণজনগণ’ দল বেঁধে, মিছিল করে এসে অনেক নিচুতে বসে মন্ত্রীর ভাষণ শুনে, প্রতিশ্রুতি শুনে হাততালি দেবে এবং বাড়ি ফিরে যাবে। ণ্ণনো কোয়েশ্চেন’। এটাই খেলার নিয়ম।
বেচারা শিলাদিত্য খেলার সেই নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করলেন। তাঁর মনে হয়েছিল দলের নেত্রী, মা-মাটি-মানুষের নেত্রী, অনেক আন্দোলন করে, অনেক মার খেয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন; সুতরাং সভায় দাঁড়িয়ে উঠে, ওই অনেক উঁচু মাচায় থাকা জনগণের মুখ্যমন্ত্রীকে চিৎকার করে তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিলে নিশ্চয়ই তিনি দেখবেন কেন তাঁর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এই ভেবেই গত ১০ আগস্ট বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় শিলাদিত্য নিচ থেকে চিৎকার করে মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে চেয়েছিলেন যে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো ২ টাকা কেজি দরে চাল পাচ্ছেন না, তিনি জানাতে চেয়েছিলেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হোমগার্ডের চাকরি তিনি পাননি, কমদামের সার তিনি পাচ্ছেন না।
বেচারা শিলাদিত্যকে গণতন্ত্রের নিয়ম ভাঙ্গার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। সভায় তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর ণ্ণমাওবাদী’ গালাগাল শুনতে তো হলই, এখন ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৭, ৩৩২, ৩৫৩ এবং ৫০৬ ধারায় ণ্ণসরকারি কর্মচারীকে তার কাজে বাধা দেওয়া’, ণ্ণভয় দেখানো’ ইত্যাদি চারটি ণ্ণঅভিযোগে’ — যার মধ্যে আবার দুটি জামিন অযোগ্য — মহামান্য আদালতের নির্দেশে ১৪ দিন জেল হাজতে থাকতে হচ্ছে। জয় হোক ভারতীয় গণতন্ত্রের!
Leave a Reply