মিডিয়া বলতে আমরা সাদা চোখে বুঝি খবরের কাগজ বা টিভি, যারা আমাদের দেশ-দুনিয়ার অজানা খবর দেয়। কিন্তু তারা যে এমন নির্মমভাবে খবর চেপে রাখতে পারে, খবর দেওয়ার নাম করে মানুষের অধিকারের ওপর নাক গলাতে পারে, সেটা দেখা গেল হালফিল দুটো জলজ্যান্ত ঘটনায়।
১১ সেপ্টেম্বর থেকে টানা বারোদিন পরমাণু প্রকল্প চালু করার বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ আন্দোলন করল তামিলনাড়ুর কুদানকুলামে। মিডিয়া, বিশেষত বাংলা কাগজ ও টিভি চ্যানেল, নির্লজ্জের মতো তা ব্ল্যাকআউট করল। ইংরেজি মিডিয়া অবশ্য কিছুটা কভার করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ ইন্টারনেটের দৌলতে তা ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে গিয়েছিল। অবশেষে যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী এই আন্দোলনের কাছে আপাতত নতিস্বীকার করে নিলেন, তখন সামান্য খবর হল এই গণআন্দোলনের ঘটনাটি।
২১ সেপ্টেম্বর ঝাড়গ্রামের শিলদা ক্যাম্পে আইআরবি জওয়ানেরা (ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন) তাদের শিবিরের অবর্ণনীয় অবস্থা ও টানা ডিউটির প্রতিবাদে বিদ্রোহ করে। ভুখ হরতালের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আন্দোলন। সেই বিদ্রোহে সাড়া দেয় বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর ছাপিয়ে দুর্গাপুর, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, কাটোয়ার সঙ্গী আইআরবি জওয়ানেরা। অবশেষে প্রশাসন এই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের কাছে আপাতত নতিস্বীকার করে। কিন্তু মিডিয়া লাগাতারভাবে এই আন্দোলনের নিন্দা করেছে। তারা এটাই প্রচার করার চেষ্টা করেছে, পুলিশের আন্দোলন করা অনুচিত। প্রশাসন যদি তার অন্যায় নিজে থেকে শুধরে না নেয়, তাহলে আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা থাকে কি? তাছাড়া, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ তো যে কোনো বয়স বা পেশার মানুষের, এমনকী যে কোনো জীবের, ন্যায়সঙ্গত অধিকার। মিডিয়া-কর্মী বা সাংবাদিকরা কি তাদের ওপর অন্যায় হলে প্রতিবাদ করবে না?
এই দুটি গণআন্দোলনেরই খবর হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল দুটি কারণে। ১. কুদানকুলামের গ্রামবাসীরা এবং পশ্চিমবাংলার আইআরবি জওয়ানেরা নিজেদের লড়াই নিজেরাই করেছে; ২. উভয় আন্দোলনই ছিল শান্তিপূর্ণ এবং অহিংস। একই সময়ে অন্য হিংসাত্মক ঘটনার খবর কিন্তু মিডিয়ায় ভয়ানক গুরুত্ব পেয়েছে।
আসলে বড়ো মিডিয়া বিপজ্জনকভাবে কর্পোরেট অর্থের ওপর নির্ভরশীল এবং তারা রাষ্ট্র ও তাবৎ হিংস্র ক্ষমতার তল্পিবাহক (মধ্যস্থতাকারী!) হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্রের পক্ষে, আপামর সমাজের পক্ষে এ এক দুর্দিন। এর নিন্দা আমাদের করতেই হবে।
Leave a Reply