শমিত আচার্য, কালীনারায়ণপুর, নদীয়া, ২১ ফেব্রুয়ারি#
চূর্ণী নদী বাংলার নদী মানচিত্রে একটি দীর্ঘ নদী হিসাবে চিহ্নিত। পশ্চিমবাংলার অন্যান্য নদীর মতো চূর্ণীও নানা রকম দূষণের কবলে জর্জরিত। দীর্ঘদিন ধরে এই নদীটিতে একটি চিনি কলের নির্গত নোংরা জল ও ক্ষতিকর তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতদিন বছরে একবারই এই চিনি কলের বর্জ্য ছাড়া হত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বছরে অন্তত চার থেকে পাঁচবার বাংলাদেশের দর্শনা সীমান্তের একটি চিনি কলের জমা নোংরা জল ও তৈলাক্ত বর্জ্য গোটা নদীটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। বর্জ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এ ব্যাপারে নির্বিকার। বর্তমানে নদীর জল সম্পূর্ণ কালো এবং তৈলাক্ত বর্জ্য ভাসছে। নদী সংলগ্ন রানাঘাট ২নং ব্লকের কালীনারায়ণপুর, চককৃষ্ণপুর, আইশতলা, নন্দীঘাট, কায়েতপাড়া, বলাগড়, রাবণবোড় এবং রানাঘাট ২নং ব্লকের উত্তরপাড়া, জাফরনগর, রঘুনাথপুর, হালালপুর, হিজুলী, বরেন্দ্রনগর, শান্তিনগর, আড়ংঘাটা, বাগানবাড়ি ইত্যাদি চূর্ণী নদী সংলগ্ন গ্রামগুলিও এই দূষণে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।\par
চিনিকলের বর্জ্য জলে মেশার পর থেকেই প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়ায় যার ফলে নদীর আশেপাশের গ্রামের মানুষের বসবাস করতে অসুবিধা হচ্ছে। আবার নানা কারণে নদীর তীরের গ্রামগুলির মানুষ দৈনন্দিন বহুমুখী অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। নদীর জলের রঙ এখন কালো এবং ভীষণ দুর্গন্ধযুক্ত। নদীর মাছসহ সমস্ত জলজ প্রাণী এই বর্জ্যের দূষণে মরে ভাসছে। আগে বছরে একবার চিনিকলগুলি বর্জ্য ফেলত। এখন তা বছরে চার-পাঁচবার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা যাচ্ছে নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষ জল ব্যবহার করতে পারছে না। এইসময়টা বোরো ধানের চাষের সময়, অথচ চাষের কাজের জন্য নদীর জল ব্যবহার করা যাচ্ছে না। চূর্ণী নদীর পাড়ের কয়েক হাজার মানুষের জীবনযাপন নির্ভর করে এই নদীর ওপর। এই অবস্থায় একটি রাজনৈতিক দল এই চূর্ণী নদীর বাঁচানোর জন্য বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছিল এবং সেইমতো কিছু প্রচার ও সচেতনা সভাও তারা করে। কিন্তু এইসব করার পরও তার কিছুদিনের মধ্যেই আবার চূর্ণী নদীর মধ্যে সেই বর্জ্য ফেলা শুরু হয়। চূর্ণী নদীর এই ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করেও সকলেই নীরব এবং নিস্ক্রিয়। প্রশাসনের নীরবতাও চোখে পড়ার মতো। ঘটা করে পরিবেশ দিবস পালনই সার, সারা বছর তারা চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা ঘরে বসে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। প্রশাসন ও জনসমাজের একাংশের এই নীরবতাই হয়তো চূর্ণী নদীর জলপ্রবাহকে সম্পূর্ণ মজিয়ে দেবে এই দূষণ।
Leave a Reply