সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ২৫ এপ্রিল#
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল ২০১৩) সকাল ৯টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রানা প্লাজা ধসে পড়ে। লাশ হস্তান্তরের দায়িত্বে থাকা সাভার থানার এসআই সাইফুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ২৩১ টি লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আর জীবিত মানুষ উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১১০০। এর মধ্যে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ১৭০ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ভবনটিতে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন। ৩৬ ঘন্টা অতিবাহিত, উদ্ধারকাজ এখনও চলছে। যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধারকার্য সমাধা করার কাজে বাধা অপ্রতুল আলো, কংক্রিট কাটার মেশিন, গ্রিল কাটার মেশিন। যারা ধ্বংসস্তুপে আটকা পড়ে এখনও বেঁচে আছেন, তাদের অক্সিজেনেও দরকার।
এক উদ্ধারকারীর একটি করুণ বয়ান সামহোয়ারইনব্লগে দিয়েছেন এক ব্লগার :
ও বাপজান, ও মা ফোন রিসিভ কর। আমি তোদের দেখতি পাচ্ছি না।’ দিনাজপুরের ফাতেমা বেগম বারবার মোবাইলফোন টিপে এভাবেই আহাজারি করছেন সাভারে ধসে পড়া ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে। সকাল থেকে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তার। দুই সন্তান আটকে রয়েছে এ ধসে পড়া ভবনের ভেতর। ফাতেমা বেগমের এক ছেলে ও এক মেয়ে ৫ম তলার প্যান্টস এ্যাপারেলস লিমিটেডে কাজ করে। ছেলে নূর করিম ও মেয়ে আরিফা। ভবন ধসের খবর শুনেই পার্শ্ববর্তী বাসা থেকে মা ছুটে এসেছেন প্রিয় সন্তানদের খোঁজ নিতে। ভাইবোন দুজনকেই ফোন দিচ্ছেন। রিংটোন বেজেই চলেছে। কিন্তু কোন সাড়া নেই নূর ও আরিফার। ঘটনার পর থেকে অসংখ্যবার ফোন দিয়েছেন ফাতেমা বেগম। ফাতেমা বেগমের সন্তানদের মতো আরও অনেকই আছে চাপা পড়া অবস্থায়। এখন সবাই মিলে আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া কিছুই করার নাই, তাই সবাই একসাথে বলি পরম করুণাময় আল্লাহ্ আপনি তো সাহায্য কারিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সাহায্য কারি। আমাদের কে সাহায্য করুন যাতে খুব তাড়াতাড়ি আমরা এই উদ্ধার কাজ শেষ করতে পারি- আমিন।
‘শহীদ রুমি স্কোয়াড’ নামে যে সংগঠনটি শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল গণ জাগরণ মঞ্চ-র মধ্যে থেকে, তারা গতকাল রাত থেকে ফেসবুকে নিরন্তর প্রচার চালিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রাদি সংগ্রহ করে উদ্ধারকার্যে এগিয়ে এসেছে। আজ ২৫ এপ্রিল রাত ১১টায় তাদের ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট :
শহীদ রুমী স্কোয়াড এর একটি দল আজ সন্ধ্যায় উদ্ধার কাজে সহযোগীতার সাভারে গিয়ে পৌছায়। তাদের সঙ্গে ছিলো সহৃদয় অনেক মানুষের স্বতপ্রণোদিত হয়ে দেওয়া প্রায় ৩৩ হাজার টাকায় কেনা দুটি গ্রিল কাটার, দুটি কনক্রিট কাটার, প্রচুর ব্লেড, ১০ টা টর্চ, ১৫ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬০ লিটার পানি এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের যোগান। উদ্ধার কাজে কাটার, ব্লেড এবং টর্চগুলো পুরোদমে কাজে লাগছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো এরইমধ্যে আটকে পড়াদের কাছে সরবরাহ করা হয়ে গেছে। ওষুধ এবং পানি কর্তব্যরত মেডিকেল টিমগুলোকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কোয়াডের চার সদস্য এখনো ওখানে আছেন এবং সার্বক্ষণিকভাবে উদ্ধারকাজে সহায়তা করছেন। আগামীকাল খুব ভোরে আরো একটি দল আরো কিছু সাপ্লাই নিয়ে রওনা হবে সাভারের উদ্দেশ্যে।
সাভার বিপর্যয়ে ধ্বংসস্তুপের ভেতর আটকে পড়া মানুষদের জন্য এখনো দরকার প্রচুর অক্সিজেন সিলিন্ডার। এছাড়াও হাসপাতালগুলোতে আহতদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, তাদেরকে বাঁচাতেও দরকার
Inj. Seftriaxon
Inj. Ketorolac
Inj. Omeprazole
Inj. TT
Inj. TIG
IV Saline
IV Hartman Solution
Thread Silkলাজ ফার্মা সহ ঢাকার বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে এইসব ওষুধ কিংবা এগুলো কেনার মতো অর্থ সাহায্য কেউ যদি স্কোয়াডকে দিতে চান, তাহলে যোগাযোগ করুন-
নদী – ০১৭৬২১৫৮৯১৯
আনন্দ – ০১৬৮০৫৮৭১০১দেশের সর্বকালের নিকৃষ্টতম এই মানবিক বিপর্যয়ে এগিয়ে আসুন, মানুষ বাচান।
কিন্তু এই দুটি কাটার আর কয়েকটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বড্ড কম প্রয়োজনের তুলনায়। তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই বদলে যায় শহীদ রুমি স্কোয়াডের স্ট্যাটাস :
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৃথিবী… ক্ষমতাবানদের জন্য স্রেফ বুকভরা ঘৃণা…
আমাদের দুই ফোঁটা অক্সিজেন টিউব আর ইলেকট্রিক রড-সিমেন্ট কাটার দুটো এখানে বড়ই ক্ষুদ্র… বড়ই অসহায়… ঠিক যেমন অসহায় আমরা…
গণজাগরণমঞ্চ একটি অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তুলেছে সাভারের আহতদের চিকিৎসার জন্য। সামহোয়ারইনব্লগে উদ্ধারকার্যের আপডেট দেওয়া হচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষ যারা সাহায্যে এগিয়ে আসছে তারা প্রয়োজনীয় জিনিস উদ্ধারকারীদের (পুলিশ, সেনাবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক) হাতে পৌঁছে দিতে পারে। জরুরি আপডেটগুলো নিচে দেওয়া হলো :
জরুরী আপডেট # ০৪ [২৫ এপ্রিল : সময় রাত ১০ বেজে ৩০ মিনিট]
“উদ্ধার এলাকা থেকে বন্ধু Alok Shiqder জানালেন, এই মুহুর্তে আবশ্যিক দরকার ছোট অক্সিজেন এবং কাপড়ের হাতগ্লাভস। দয়া করে এগুলোর একটু ব্যাবস্থা করেন, নাহলে আজ রাতেই মারা যাবেন অনেকে; যাদের হয়ত বাঁচানো সম্ভব হোত। অক্সিজেন স্প্রে (ফার্মেসিতে পাওয়া যায় ২০০টাকা দাম।)
হাটখোলা’র বিএমএ সেন্টারে ৬০০ টাকা করে পাওয়া যাচ্ছে …
লাজ ফার্মাতে।
দাম? সাধারন মূল্য ১০০০ টাকা। সাভারের কথা বললে উনারা ৮৩০ টাকায় দিয়ে দিচ্ছে।”জরুরী আপডেট # ০৪ [সময় রাত ১০ বেজে ৩০ মিনিট]
আপনারা যারা আজকে রাতে সাভার যাচ্ছেন দয়াকরে টর্চ লাইট কিনে নিয়ে যান সেখানে। আমি এই মাত্র সেখানকার রেডক্রিসেন্ট এর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এই মূহুর্তে টর্চলাইটের জরুরী দরকার।জরুরী আপডেট # ০৪ [সময় রাত ৯ বেজে ৩০ মিনিট]
এই মাত্র শিপু ভাইয় জনাল যে তার কাছে জমাকৃত টাকা থেকে ৫০ টি অক্সিজেন, ২ টি মাস্ক ও ২ ব্যাগ গলভস কিনে সাভারে রওনা দিচ্ছেন।জরুরী আপডেট # ০৩ [সময় রাত ৯ টা]
ব্লগার অনির্বাণ রায় সাভার থেকে জানাচ্ছেন যে এই মূহুর্তে যে কোন কিছুর চাইতে সবচেয়ে বেশি দরকার অক্সিজেন। ইতোমধ্যে ৩০০০০ টাকার অক্সিজেন কেনা হয়েছে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় খুবি অপ্রতুল। সবাইকে অনুরোধ করি তারা যেন আরো আরো অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেন।জরুরী আপডেট # ০২ :
নেগেটিভ গ্রুপের ব্লাড না পেয়ে অনেক জীবন ধুঁকে ধুঁকে মরছে ! নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত দেওয়ার ঠিকান নিচে বিস্তারিত।জরুরী আপডেট # ০১ :
উদ্ধারকৃত লাশগুলোতে প্রচন্ড গরমে পচন ধরছে। লাশ পচা গন্ধে উদ্ধার কাজ ব্যহত হচ্ছে। তাই অধর চন্দ্র স্কুলে প্রচুর বরফ সরবরাহ জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
Leave a Reply