শমীক সরকার, কলকাতা, ২২ জুলাই, তথ্যসূত্র ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক#
বিপর্যস্ত ফুকুশিমা পরমাণু চুল্লি থেকে তেজস্ক্রিয় জল গিয়ে মিশছে ভূ-গর্ভস্থ জলের উৎসেও। ২০১১ সালের বিপর্যয়ের সময় থেকেই প্ল্যান্টের ফুটো দিয়ে গিয়ে ভূগর্ভস্থ জলের উৎসে তেজস্ক্রিয় জল মিশছিল। এতদিন সেকথা স্বীকার করেনি প্রকল্পটির মালিক শক্তি-কর্পোরেট টেপকো। তারা বলে আসছিল, ভূ-গর্ভস্থ জলে নয়, প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে মিশছিল। কিন্তু ১১ জুলাই খোদ জাপান সরকার স্বীকার করে, প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে সাথে ভূ-গর্ভস্থ জলের উৎসেও মিশছিল প্রকল্পের তেজস্ক্রিয় জল। ২২ জুলাই টেপকোও সেকথা স্বীকার করে।
কেন এই স্বীকারোক্তি? চুল্লিগুলির আশেপাশের ভূ-গর্ভস্থ জলে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরিমাপক কিছু যন্ত্রে ৯ জুলাই অস্বাভাবিক বেশি মাত্রার সিজিয়াম পাওয়া যায়। এমনকি ৬ জুলাই যে পরিমাণ সিজিয়াম পাওয়া যায়, তার তুলনায় ৯০ গুণ বেশি পাওয়া ৯ জুলাই (প্রতি লিটার জলে ৯০০০ বেকারেল সিজিয়াম-১৩৪ এবং ১৮,০০০ বেকারেল সিজিয়াম-১৩৭)। মে মাস থেকে ফুকুশিমার পরের যে বন্দর সেখানকার সমুদ্রের জলেও ট্রিটিয়াম পাওয়া যাচ্ছিল। ৩ জুলাই সেখানে পাওয়া যায় এক লিটার জলে ২৩০০ বেকারেল ট্রিটিয়াম।
পরমাণু প্রক্রিয়া, অর্থাৎ তেজস্ক্রিয় জ্বালানির পূর্ণাঙ্গ জ্বলন (গলন বা মেল্টডাউন) একবার শুরু হয়ে গেলে তাকে থামানো যায় না। তখন ঠান্ডা করে রাখতে হয় তাকে। সুনামিতে জ্বলন নিয়ন্ত্রণের বন্দোবস্ত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ফুকুশিমার একাধিক চুল্লিতে মেল্টডাউন শুরু হয়ে যায়। তাকে ঠাণ্ডা করার জন্য জল স্প্রে করা ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু ওই স্প্রে করা জল তো প্রকল্পের তেজস্ক্রিয়তা এবং জ্বালানির সংস্পর্শে এসে নিজেও ভয়ানকভাবে তেজস্ক্রিয়। তার কী হবে? প্রথমে ওই জল সমুদ্রেই ফেলছিল কোম্পানি, কিন্তু সমুদ্রের মাধ্যমে এই আবিশ্ব দূষণে প্রভাবশালী দেশগুলি পর্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে। তখন টেপকো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য গোটা প্রকল্প এলাকা জুড়ে ১০০০ তেজস্ক্রিয় জল জমানোর ট্যাঙ্ক বানায় টেপকো কোম্পানি। এই ট্যাঙ্কগুলোর মধ্যে রয়েছে মারাত্মক তেজস্ক্রিয় জল। টেপকো জানায়, এই তেজস্ক্রিয় জল জমানোর ট্যাঙ্কগুলোর বেশির ভাগই স্টিল ওয়েল্ডিং করে বানানো, লিক করার ভয় নেই। কিন্তু পরের দিকে তাড়াহুড়ো করে বানানো ৩৫০টি ট্যাঙ্ক স্টিলের সঙ্গে প্লাস্টিকের জোড় দিয়ে বানানো হয়েছিল। সেগুলো থেকেই অন্তত চারবার লিক করেছে তেজস্ক্রিয় জল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ে যাওয়ায় বড়ো কোনও বিপর্যয় হয়নি। কিন্তু এবারে প্রায় মাসাধিক কাল জুড়ে লিক হলেও কেউ টের পায়নি। ফলে এই এক মাস ধরে দিনে অন্তত ১০ টন ভয়ঙ্কর তেজস্ক্রিয় জল ভূ-গর্ভস্থ জলের সঙ্গে মিশেছে, এবং সাথে সাথে কাছেই যেহেতু সমুদ্র, তাই সমুদ্রের জলে গিয়েও পড়েছে।
জাপান তথা সারা বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন পড়ে যায় এই স্বীকারোক্তিতে। জাপান সরকার এই নয়া বিপর্যয়কে তিন মাত্রার পরমাণু বিপর্যয় বলে চিহ্নিত করে। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের মার্চ মাসে সুনামিতে ফুকুশিমা চুল্লিগুলির ধ্বংস হয়ে যাওয়াকে সাত বা সর্বোচ্চ মাত্রার পরমাণু বিপর্যয় বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
এখনও ফুটো কোথায় হয়েছে, তা খুঁজে পায়নি টেপকো, কিন্তু ফুটো হওয়া ট্যাঙ্কটি চিহ্নিত করা গেছে। সেটি খালি করা হয়েছে।
Leave a Reply