সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, কলকাতা, ৩০ সেপ্টম্বর#
ফলতা স্পেশাল ইকনমিক জোনের লেবারদের মিনিমাম ১৭০ টাকা দিতে হবে এরকম একটা কথা বাজারে চাউর হতে থাকে এই বছরের প্রথম দিক থেকেই। একই সঙ্গে বাইরের সমস্ত কাগজেও একথা প্রচার হয়ে যায়। কিন্তু ডেল্টমল আর সীমল এই দুটি কোম্পানিতে নানা ঝুটঝামেলা করে লেবাররা। তাই এই কোম্পানিগুলো নতুন রেট দিতে শুরু করলেও অন্যান্য কোম্পানিগুলি তা দেয়নি।
এই বর্ধিত মজুরি না দেওয়া নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অসন্তুষ্টি ছিল। কিন্তু কেউ সরাসরি তা প্রকাশ করেনি। ১৩ আগস্ট সকালে LTS কোম্পানির লেবাররা অন্যান্য দিনের মতোই কাজে ঢোকার পর সকলে একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, আজ আর কেউ কাজ করবে না। সবাই কারখানা গেটের বাইরে চলে আসে। অবস্থান করতে থাকে। তারপর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত করে DC অফিসে যায়। সেখানে লেবারদের প্রতিনিধি হিসাবে অলোক এবং অন্যান্য কিছু লেবার কথা বলতে যায়। সেদিন কথাবার্তা তেমন একটা এগোয়নি, লেবাররা বিকেলে যে-যার মতো ঘরে চলে যায়। ১৪ তারিখে সেই একই অবস্থা চলতে থাকে। এর মধ্যে মালিকের লোকজন এই কথা ছড়াতে থাকে যে, এখন এই সব নিয়ে ভাবলে চলবে না, কারখানার ভেতর কাজে ঢোকা মুশকিল হবে, তাড়াতাড়ি কাজে ঢুকে যাওয়া ভাল।
এইভাবে ১৪ তারিখ কেটে যায়। কিন্তু প্রায় ৫০০ জন কাজে যোগ দেয়নি। যদিও যারা গরিব (এখানকার স্থানীয় লোক অনেকেই এখানে কাজ করত) তাদের অনেকেরই বাড়িতে এমন অবস্থা যে, এখানে টাকা না পেলে সংসার চলবে না। তাই এরা চাইছিল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সমস্যাটা মিটে যায়। অন্যদিকে লেবাররা সবাই মিলে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করে কারখানার সামনে। এরপর ১৬ তারিখে দেখা যায়, একটা কন্টেনার ভর্তি করার দরকার হয়ে পরে, কোম্পানিও লেবারদের ওপর কাজ শুরু করার জন্য চাপ বাড়ায়। কিছু লেবার কাজে যোগ দেয়। আবার কয়েকজন বলে খাবার আনিনি, কাল থেকে কাজ শুরু করব। পরদিন গিয়ে তারা শোনে তাদের আর কাজে দরকার নেই, সিকিউরিটি বলে ভিতরে অ্যালাও নেই। কারণ জানতে চাইলে বলে, তা বলতে পারব না।
এইরকম জনাছয়েক লেবার আছে, যারা লেবারদের ওই কয়দিনের আন্দোলনে ভূমিকা নিয়েছিল। আবার এটাও ঠিক যে ওরা যে স্টোর ডিপার্টমেন্টে ছিল তার ঠিকাদার চেঞ্জ হয়েছে, নতুন ঠিকাদার তার লোক দিয়ে কাজ করাবে।
এদের ছ-জনকে কাজ থেকে বাদ দেবার পর আবার পরে এদের মধ্যে দু-জনকে লেবার কন্ট্রাক্টর ডেকে পাঠায়। যে যে কাজ করতে আগ্রহী, তা লিখে তাদেরকে একটা অ্যাপ্লিকেশন দিতে বলে। ওদের মধ্যে দুজন সেইভাবে অ্যাপ্লিকেশন দেয়। বাকিরা দেয়নি। প্রথমে তারা বলে তারা এটার খবর পায়নি। একজন পরে বলে, ওই কারখানায় ডেলি ১২ ঘন্টা ডিউটি, আবার মাসে ২৪টা ডিউটি না হলে এখন বাকি দিনগুলির জন্য প্রত্যেক দিনের মজুরি ২০ টাকা কম দেয়। তার মধ্যে আবার কাজের একটু এদিক ওদিক হলেই সুপারভাইজাররা বাপ মা তুলে কথা বলে। তাই আর কাজ করতে ঘেন্না এসে গেছে। ওই কোম্পানিতে তারা আর কাজ করবে না। মজার ব্যাপার হল এদের মধ্যেই একজন আবার তার দাদার চ্যানেল ব্যবহার করে অন্য কোম্পানিতে কাজে ঢুকেছে। তবে যেখানে এই ঘটনার আগে কোম্পানি পার ডে, না ১৪৫ টাকার বেশি দিত, না সেখানে ২৪টা ডিউটিতে ১৬০ দিচ্ছে। আর ২৪টার কম ডিউটিতে ১৪০ করে দিচ্ছে। যারা বাদ গেছে, তাদের মতে, ওয়ার্কাররা যদি একতা হয়ে কারখানায় কাজে না ঢুকত, তাহলেও কোম্পানি বাধ্য হত ১৬০-এর চেয়ে বেশি দিতে। এইসব কথা যখন হচ্ছিল, তখন অন্য কারখানার একজন লেবার বললেন, নেতা ধরতে হয়। কিন্তু তাতে এঁরা বললেন — নেতা ধরে কিছু হবে না।
Leave a Reply