সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ১ জুলাই#
দুই ম্যানেজারের মাসিক বেতন কোম্পানির বাকি লেবারদের মোট মাইনের চেয়ে বেশি
পিছু হটছে সেজ
আমাদের দেশের সেজ বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গুলি থেকে রপ্তানি কমছে। সরকারি পরিসংখ্যান তেমনই বলছে। তাই সরকার থেকে এই অঞ্চলগুলি, যেগুলি এখনই প্রায় কোম্পানিগুলির রামরাজত্ব, সেখানে কোম্পানিগুলিকে আরও বেশি সুযোগসুবিধা দেওয়া যায় সে বিষয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে। বেশ কিছু সেজ স্বীকৃতি পেলেও কাজ শুরু করেনি কোম্পানি। কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মা সম্প্রতি এরকমই জানিয়েছেন। করবিহীন এইরকম ১৫৩টি সেজ থেকে ২০১০-১১ সালে রপ্তানি হয়েছিল দেশের মোট রপ্তানির তিরিশ শতাংশ, এবছর তা কমে দাঁড়িয়েছে দেশের মোট রপ্তানির বারো শতাংশে। এই সেজগুলিতে প্রায় সাড়ে আট লক্ষ লোক কাজ করে বলে সরকারি পরিসংখ্যান জানাচ্ছে। |
দেড় মাস আগে প্ল্যাস্টিক কারখানায় প্রথম ঝামেলা শুরু হয়। যে প্রোমোজিনে লেবাররা প্রথম বিক্ষোভ দেখায় সেখানে জুন মাসে বেতন দেবার সময় মালিকপক্ষ আবার ১৪৫ টাকাই হাতে দিতে চায়। এবারেও অনেকে নেয়নি। তাতে কিছুটা বাধ্য হয়েই ১৬০ টাকা দিয়েছে, যদিও নকশা করতে ছাড়েনি,বলেছিল অন্য কোম্পানি দিক, তবে দেব। শেষ পর্যন্ত ১৬০ টাকা দিয়েছে। অথচ এই ফলতাতেই মাঠের কাজে কলাতলাহাট অঞ্চলে মজুরি পড়ছে ১৭০-১৮০ টাকা করে।
এই স্পেশাল ইকনমিক জোনের আরেকটা কারখানা দাত্রে করপোরেশন। কাস্টিং-এর কাজ হয়, গত ২ মাস ধরে কাজ বন্ধ। এখানকার (দক্ষ) লেবারদের কথা অনুযায়ী তাদের পাওয়ার কথা ১৯৪ টাকা, কিন্তু দেওয়া হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা। এরা যেহেতু দক্ষ অর্থাৎ আইটিআই পাস আর মেশিন অপারেট করতে করতে আরও দক্ষতা বেড়েছে তাই কোম্পানিও জানে দুম করে এদের বাদ দিয়ে কাজ চালানো সহজ নয়। এদের সাথে কন্ট্রাক্টে কাজ করে এমন লেবারদের একটা অংশও আছে। এরা মূলত অদক্ষ শ্রমিক, তাই তাদের জোরের জায়গাটাও কম। এদের কয়েকজন বেকারিত্ব সইতে না পেরে কাজে যোগ দিয়েছেন। এরা সবাই আইএনটিটিইউসি-র ব্যানারেই আছে। এরকম কারখানায় কাজ করেন এমন একজন অদক্ষ শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা গেল, মাঝে ডায়মন্ড হারবারে লেবার কমিশনারের অফিসে মিটিং হয়েছে, কিন্তু লেবার কমিশনারের বক্তব্য হল, আমি বললেও কিছু হচ্ছে না। এখন শোনা যাচ্ছে দোলা সেন (আইএনটিটিইউসি-র) এই সমস্যাটা দেখবেন। অদক্ষ শ্রমিকরা চাইছে ১৭০ কিন্তু কোম্পানি ১৫০ পর্যন্ত দিতে রাজি।
যাঁর বাড়িতে বসে এসব কথা হচ্ছিল তাঁর ঘরের পাশ দিয়েই হুগলী নদী বয়ে চলেছে। যখন কথা চলছে, পাশেই তখন বোটঘাটের কাজ চলছে। ইনিও একসময় বোটের কাজে যুক্ত ছিলেন, তাতে ঝড়-জলে রিস্ক বেশি তার তুলনায় মাছ সেরকম পড়ে না, তাই প্রথমে আইসিআই কোম্পানিতে ঢোকেন, বেশ কয়েকবছর কাজ করার পর কারখানাটা বন্ধ হতে আবার বোটের কাজ, মাঠের কাজে নামেন, এরপর এলপি কোম্পানিতে আবার কাজে ঢোকা আবার বছর কয়েক বাদে তা বন্ধ হয়ে যায়, আবার আগের কাজে ফিরে যাওয়া, তার পরে এই কোম্পানিতে কাজে ঢোকা। এই কোম্পানিটায় দুটো ম্যানেজার আছে যাদের মাইনে নাকি ৬০,০০০/৭০,০০০ টাকা, এই দুই ম্যানেজারের মোট মাইনে বাকি লেবারদের মোট মাইনের থেকে নাকি বেশি। গতবছর খোরোতে চাষ করেছিলেন লাল স্বর্ণ, তার আগের বছরের কেনা ধান, তা থেকেই বীজ তৈরি করে চাষ করে এমন লস খেলেন এবারে আর ওমুখো হননি। তার মধ্যে কারখানা বন্ধ হল। এখন এবারে আর থাকতে না পেরে স্ত্রী এই জোনে অভ্র তৈরি করে এমন একটা কারখানায় ঢুকেছেন। ১২০ টাকা রোজ, সবচেয়ে ভালো ব্যাপার যেটা তাহল, এরা সপ্তাহের রোজের টাকাটা সপ্তাহেই দিয়ে দেয়। এইসব কথা যেখানে চলছে তার পাশেই বোটের কাজ চলছে,তার ঠুকঠাক আওয়াজ শোনা যাচ্ছে আর এদিকে এই লেবারটির বাচ্চা ছেলে আর মেয়েটি একটি শোলার বোট তৈরি করে তার মেরামতিতে ব্যস্ত হয়ে রয়েছে।
Leave a Reply