সংকলক শমিত আচার্য, শান্তিপুর#
গত ৪ এপ্রিল ভারতসভা হলে অনীক পত্রিকার সম্পাদক প্রয়াত শ্রী দীপঙ্কর চক্রবর্তীর প্রথম বার্ষিক স্মারক বক্তৃতা দিলেন শ্রী আনু মহম্মদ। কথার শুরুতেই তিনি জানালেন, বর্তমানে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় দুশো কোটি মানুষের বাস। একদিকে দারিদ্র অপুষ্টি বঞ্চনা অন্যদিকে প্রাচুর্যের বৈপরীত্য নিয়েই চলছে আমাদের দক্ষিণ এশিয়া। ঢাকা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মহাম্মদ বললেন, দক্ষিণ এশিয়া বলতে আফগানিস্তান থেকে মায়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকেই বোঝায়। এই অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলির মধ্যে মায়ানমারে সবথেকে বেশি সময় ধরে সামরিক শাসন চলেছে। আফগানিস্তান দীর্ঘদিন মার্কিন কবলে আছে। রাষ্ট্রের নানা দমনমূলক শাসন দেখা যাচ্ছে গোটা দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই। এখানকার অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি সহ সবকিছুই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে ওপরকার চমক ও জৌলুস তৈরি হচ্ছে। অপরদিকে রাষ্ট্রের দখল লুণ্ঠন সন্ত্রাস সহ পুঁজির আগ্রাসন ও স্বার্থরক্ষার জন্য নতুন নতুন মানুষ উচ্ছেদ হচ্ছে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে। যদি প্রতিদিন ২ ডলার ধরে দারিদ্র পরিমাপ করা হয়, তাহলে জাতিপুঞ্জের হিসেব অনুযায়ী এই অঞ্চলে শতকরা প্রায় ৭৭ ভাগ মানুষই দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। বাসস্থান চিকিৎসা শিক্ষা বিশুদ্ধ পানি — এসব থেকেই বঞ্চিত হয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ মানুষ। বর্ণগত জাতিগত শ্রেণীগত ধর্মীয় লিঙ্গবৈষম্য নিপীড়নে জর্জরিত ক্ষতবিক্ষত শতকোটি মানুষ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র শ্রীলঙ্কা ছাড়া আর সবগুলো দেশের মানব উন্নয়ন সূচক ১২০-র নিচে। আবার এই সব অঞ্চলের মধ্যেই খুব অল্প অংশের মধ্যে প্রাচুর্য্যের ছড়াছড়ি, নির্লজ্জভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ভোগ-বিলাস। বিপুল সম্পদ ব্যয় হয় ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ উন্মাদনার কারণে, দুটো দেশই এখন পারমাণবিক বোমা বানিয়ে গর্বিত এবং সেই উন্মাদনা আর গর্ব সকল জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত। সমান পাল্লা দিয়ে এশিয়ার বুকে বাড়ছে ড্রোন (মনু্ষ্যচালকবিহীন যুদ্ধবিমান) হামলাও। সব দেশের শাসকদেরই এখন একমাত্র কৌশল, সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ। কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের শাসকদের যুদ্ধ যুদ্ধ মনোভাব ও পারস্পরিক শত্রুতা। যেন দুই দেশের মধ্যে একটা পার্মানেন্ট আর্মস ইকনমি কমবেশি অঙ্গীভূত। সন্ত্রাস ঠেকানোর অজুহাতে সীমান্ত জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে।
অপরদিকে লড়াই চলছে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই। সে লড়াই বঞ্চিত অত্যাচারিত নিপীড়িত মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই। জল জমি জঙ্গলের ওপর নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে সব দেখেই কর্পোরেট আগ্রাসন বিরোধী সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে সবদেশেই জনগণের বিভিন্ন লড়াই আছে। এসব লড়াইয়ের মধ্যে যে ঐক্যমূল আছে তা থেকেই আমরা এক মুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন দেখতে পারি। এ সংগ্রামকে জাতীয় সংগ্রাম, শ্রেণী সংগ্রাম যা কিছুই বলা যেতে পারে। মানুষের মুক্তির লড়াইয়ের কোনো সীমান্ত নেই। আনু জানান — আমাদের মুক্ত চিন্তায় ঘাটতি আছে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের স্বার্থে আমাদের চিন্তা ও সক্রিয়তার ঘাটতি দূর করা অতীব দরকার।
Leave a Reply