রিখিয়া রায়, কলকাতা, ১৪ ডিসেম্বর#
টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্টে পাশ করার ফলে ইন্টার্ভিউয়ে ডাক পড়ল। সকাল ৯-৩০টায় লাইন দিয়ে অসংখ্য চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে ভেতরে ঢুকলাম আমি। কীভাবে একসঙ্গে অতজনের ইন্টার্ভিউ হবে কেউই ভেবে পাচ্ছিল না। যাইহোক, ব্যবস্থা খারাপ নয়, মানে অতগুলো লোককে একদিনে ডাকলে যা সমস্যা হওয়ার কথা তার খানিক হয়েছে বটে, তবে সবাই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে আসার ফলে কষ্ট অতোটাও গায়ে লাগেনি। শাড়ি পরায় অনভ্যস্ত মেয়ে আমরা সবাই সবাইকে সাহায্য করছিলাম। কোন কোন ডকুমেন্ট, কটা ফোটোকপি লাগবে ইত্যাদি নিয়ে বিস্তর জল্পনা কল্পনা এবং চাপা উত্তেজনা আর দুশ্চিন্তার জেরে কেউ খিদে টেরই পাচ্ছিল না। আর পেলেই বা কি, গেট তো বন্ধ, ভবিষ্যতের উপোস রুখতে একদিন একবেলা না খেয়ে থাকা তো হাসি মুখে মেনে নেওয়া যায়।
এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটির জন্য ৫ নম্বর বরাদ্দ। সবাই এনেছে গুছিয়ে তাদের গানের গলা, নাচের ছন্দ, কথা বলার দক্ষতার টুকরো টুকরো প্রমাণপত্র। কিন্তু গান ভালোবেসে গান কিনা, কলমের জোরে কখোনো বন্দুকের নলকে পরাস্ত করেছেন কিনা, তার কোন খবরই কেউ নেবে না। রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় নাম না লেখালে সেসব কিছুরই কোন মূল্য নেই। এমনকী ৪ বছর ধরে বাচ্চাদের পড়িয়েছেন এমন একজনের এই অভিজ্ঞতারও কোন দাম নেই, শুধুমাত্র প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন এই অজুহাতে। আমি বেশ কিছুদিন হল সংবাদমন্থনে কাজ করি। আমাকে এই কাগজের সম্পাদক একটি সার্টিফিকেট দেন আমার এই কাজের কথা ঘোষণা করে। সেটিও গ্রাহ্য হয়নি – ‘বড়ো কাগজ’ নয় তাই। এখন প্রশ্ন হল বড়ো কাগজ কাকে বলে? যদি ধরে নিই সার্কুলেশন সংখ্যার উপর নির্ভরশীল এই ধারণা তবে একসঙ্গে অনেক প্রশ্ন ওঠে। প্রাথমিক প্রশ্ন – এই সংখ্যা কত হলে কাগজটি ‘বড়ো’ হিসেবে গণ্য হবে? সে কথা ঘোষণা করা হয়নি কেন? দ্বিতীয়ত, আদৌ কাজের মান বা নিষ্ঠা বা অভিজ্ঞতার দাম অগ্রাহ্য করার পেছনে ‘বড়ো’ কাগজ বা রাজ্যস্তরের কাজ নয়, এটা কোন যুক্তি হতে পারে কি না। সবাই আমরা চাকরির আশায় গেছিলাম, কেউই মুখ ফুটে বিশেষ কিছু বলে উঠতে পারিনি। এমনকি ন্যায্য প্রশ্নগুলো করতেও ভয় পাচ্ছিলাম। বলা তো যায় না কিসের থেকে কি হয়ে যায়, চাকরি হাতছাড়া হওয়ার চেয়ে ৫ নম্বর হাতছাড়া হওয়া ভালো।
যাঁরা আমার ইন্টারভিউ নিলেন তাঁরা অবশ্য আমার শখ, পড়াশুনার পাশাপাশি অন্যান্য কাজকর্ম বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি সব কথা। তাঁরা মন দিয়ে শোনেন এবং বিশ্বাস করেন বলেই মনে হয়। তবে বোর্ড ছিল ৭-৮টা, সব বোর্ডের পরীক্ষকেরাই এইরকম প্রশ্ন করবেন কিনা জানা নেই। যোগ্যতার মূল্যায়ণ কীভাবে সম্ভব এই পদ্ধতিতে তা হাজার ভেবেও মাথায় ঢুকলো না। চাকরি পাবো কিনা জানি না, পেলে কেন পাবো আর যারা পাবে না তারা কেন পাবে না তাও জানি না। ঠিক যেমন জানি না সোয়া তিনটে নাগাদ আমি ছাড়া পেয়ে যখন খাবার দোকানে ঢুকে গোগ্রাসে খাচ্ছিলাম, তখন আমার পেছনে থাকা মেয়েগুলি কী করছিল। তাদের মধ্যে হয়ত কারুর পেটের সমস্যা বা লো প্রেশার আছে, হয়ত ৫টার সময় বেরিয়ে অসুস্থই হয়ে পড়ল, কে জানে!
Leave a Reply