নবজাতক পরিচর্যা
আমাদের দেশে বেশিরভাগ মায়ের কমজোরি শিশু জন্মায় আন্ডারওয়েট অর্থাৎ বাস্তব প্রয়োজনের চেয়ে ছোটো (২.৫-২.৮ কেজি)। কিন্তু যারা জন্মাচ্ছে — বেশিরভাগ ক্ষীণকায়, বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের লড়াই করার ক্ষমতা কম। জন্মালেই যাতে তার শরীর গরম থাকে তার ব্যবস্থা করা অতি সহজ। কাপড়ে জড়িয়ে মায়ের বুকের ওপর দিয়ে আরেকটা ঢাকা দিলেই মায়ের শরীরের তাপেই শিশু গরম থাকবে। আগে আমরা বাচ্চা হলেই চান করাতাম। এখন ৪৮ ঘন্টা চান দেওয়া হয় না। তেল মাখানো হয় না, সাধারণভাবে কাপড় বদলে রাখা হয়, বাইরের জল দেওয়া হয় না। জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই মাতৃস্তন ধরিয়ে দেওয়া উচিত — অনেক বাচ্চাই বেশ টানে। এইভাবে একটি মাকে দেখভাল করা ও পরামর্শ দেওয়ার লোকের অভাব। গত বছর একটি বাতানুকূল ঘরে, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, কী করে প্রসবকালীন জননী-মৃত্যুর হার কমানো যায় তার জন্য একটা আলোচনা সভা করেছিল। সেখানে আলোচনা, বই, প্যাম্পলেট — সবেরই ছড়াছড়ি। চকচকে খাওয়াদাওয়া — এনজিও ছেলেমেয়েদের জন্য ‘অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম’। সেখানে একজন বিদেশি ধাত্রীবিদ্যা বিশারদের কথা শুনলাম। তিনি বললেন, প্রসবের জন্য চাই একজন দক্ষ ধাত্রী; আধুনিক টেকনোলজিতে তৈরি যন্ত্রপাতি না হলেও চলে।
আমরা পারি না —- শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন প্রসূতির পাশে বসে থাকবে, সাহস দেবে, ব্যথায় সমবেদনা জানাবে, সে যাতে সুস্থ এবং আরামে থাকে সেটা দেখবে। প্রসব ভালোভাবে হয়ে গেলেও কাজ শেষ হয় না, প্রসবের পরে অন্তত ছয় ঘন্টা প্রসূতিকে নজরে রাখতে হবে। রক্তক্ষরণেই মায়েদের মৃত্যু বেশি হয় — সেটা যাতে না হয় এবং হবার সম্ভাবনা দেখলে ওষুধ দেওয়ার বন্দোবস্ত করা যাতে হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
শিশুরা কথা বলে না, তার অসুবিধে হলে কাঁদে। মা নজর রাখবে শিশুর প্রতি —- শিশুদের চনমনে ভাবটা ঝিমিয়ে এলেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার। প্রসূতি ও শিশুর কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, তা পাশে বসে নিরীক্ষণ করা দরকার — এর জন্য সময় দিতে হবে। সময় নেই বললে চলবে না। চলবে
প্রসূতি ও সদ্যোজাত শিশুর পরিচর্যা, পরিষেবা ও পুষ্টি বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ ধাত্রীবিদ্যা-বিশারদের কিছু মতামত। এবার দ্বিতীয় পর্ব
Leave a Reply