কুশল বসু, কলকাতা, ৩০ নভেম্বর#
আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের ফার্গুসন শহরে কালো মানুষরা ফের একবার বিক্ষোভ দেখাল হাজারে হাজারে।
২০১৪ সালের আগস্ট মাসে উইলসন নামে এক শ্বেতকায় যুবক পুলিশ অফিসার গুলি করে মেরে দেয় ১৮ বছর বয়সি কৃষ্ণাঙ্গ মাইকেল ব্রাউনকে। বিনা প্ররোচনায় কেবল সন্দেহের বশে কথা কাটাকাটির মধ্যে এই খুনকে বর্ণবিদ্বেষী খুন ধরে নিয়ে শহরের হাজার হাজার কৃষ্ণাঙ্গ রাস্তায় নেমেছিল। এতে ইন্ধন জোগায় ফার্গুসন পুলিশ বিভাগ, ব্রাউনের একটি অস্থায়ী স্মারক ভেঙে দিয়ে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ থেকে শুরু করে পুলিশকে লক্ষ্য করে মলোটভ ককটেল নিক্ষেপ — প্রায় পনেরো দিন উত্তপ্ত ছিল ফার্গুসন। পুলিশও দমন চালায়, মিলিটারি সাজে সজ্জিত হয়ে। পুলিশের মিলিটারি মেজাজের সমালোচনা হয় তুমুল। এমনকী স্বয়ং বারাক ওবামা সমালোচনা করেন। এরই মধ্যে কিছু পুলিশ অফিসার শ্বেতকায় পুলিশ অফিসারের নাম নিজেদের হস্তবন্ধনীতে লিখে ‘খুনী’ উইলসনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে। পরে অবশ্য মার্কিন রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে তা বন্ধ করে। মূলত কৃষ্ণাঙ্গ যুবকদের এই প্রতিবাদ থেকে অনেকে গ্রেপ্তার হয়।
জনজোয়ার কমে গেলেও এদিক ওদিক প্রতিবাদ চলছিলই। সেই প্রতিবাদেই ফের জোয়ার এসেছে, যখন ২৪ নভেম্বর শহরের বিচারকরা পুলিশ অফিসার উইলসনকে বেকসুর ঘোষণা করে। প্রতিক্রিয়া আন্দাজ করে মিসৌরি প্রদেশের গভর্নর সাতদিন আগে থেকেই জরুরি অবস্থা জারি করে রেখেছিল। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ শুরু হয় ফার্গুসনে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয় গোটা আমেরিকা। এখনও সেই প্রতিবাদ চলছে।
ফার্গুসন শহরে গরিব কৃষ্ণকায়দের ওপর প্রশাসনের জুলুমের ইতিহাস অনেকদিনের। সামান্য ট্রাফিক আইন ভাঙলেই বিশাল অঙ্কের জরিমানা এবং সেই জরিমানা ঠিক সময়ে কোর্টে গিয়ে জমা না দিতে পারলে ফের জরিমানা — এইভাবে কুণ্ডলী পাকিয়ে ওঠা জরিমানা, পরবর্তীতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি — এই ছিল শহরের মূলত শ্বেতকায় প্রশাসন এবং কৃষ্ণাঙ্গ বসতিগুলোর সম্পর্ক। কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা হল শহরের আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস। বিক্ষোভের মাঝেই তা প্রশমনের জন্য ১ অক্টোবর ফার্গুসন শহরটি যে কাউন্টিতে — সেই সেন্ট লুইসের প্রশাসন দু-লক্ষ কুড়ি হাজার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল করে দেয় এবং আদালতে জরিমানা দেওয়ার সময়সীমা তিন মাস বাড়িয়ে দেয়।
Leave a Reply