শমিত, ২৬ জুলাই, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শতবার্ষিকী হল#
প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর ও বিষমুক্ত চাষ আবাদের কাজ কীভাবে বাংলাদেশে ক্রমশ চাষিদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তা বলতে গিয়ে ‘উবিনিগ’ বাংলাদেশের নেত্রী ফরিদা আখতার জানান — বর্তমানে বাংলাদেশে রাসায়নিক সার কীটনাশক ব্যবহার হয় না। বিজ্ঞান ও কারিগরি চর্চা যেভাবে কর্পোরেট বহুজাতিক কোম্পানিদের স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, তার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে বাংলাদেশে। মনসান্টো ও মাহিকোর বিটি বেগুন, যা বাংলাদেশে ‘সরকারি বেগুন’ নামে পরিচিতি পেয়েছে — তা বাংলাদেশে মোট ২০ জন কৃষক ১ বিঘা করে জমিতে চাষ করছেন। মেধাসত্ত্ব দখল করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির বিটি বেগুন চাষ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গবেষণাগারে ঢুকে কীভাবে কাজ করছে তা জানালেন পরিবেশ-বিকল্প কৃষি-নারী অধিকার ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মুখ্য নেত্রী ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, কৃষি-প্রধান দেশ বলে বাংলাদেশকে অনুন্নত দেশ বলা হয়। এই উন্নয়নের ধারণার মধ্যে বিকৃতি রয়েছে। ভারত ও ফিলিপাইনসে বিটি বেগুন নিষিদ্ধ ঘোষিত হবার পরেও তা থেকে শিক্ষা নেয়নি বাংলাদেশ, বরং উল্টো পথে চলেছে। এর পেছনে রয়েছে সুস্পষ্টভাবে বহুজাতিক কর্পোরেট কোম্পানিগুলির পণ্য বিক্রি ও বাজার সম্প্রসারণের উদগ্র তাগিদ। যেখানে কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের ৮০% মানুষ কৃষক ছিল, বর্তমানে তা ৪৭\%-এ নেমে এসেছে। শুধুমাত্র ঢাকা শহরে ৬৭% রিক্সাচালক রয়েছে, যারা এসেছে কৃষিকাজ ছেড়ে। বহুজাতিকদের এই মিথ্যাকে সর্বসমক্ষে উন্মোচিত করে কৃষকদের সার্থক প্রতিরোধ ও প্রকৃত উন্নতির বিকল্প পথ খুঁজে নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। ফরিদা বলেন, বিজ্ঞানের শক্তি যুক্তিতে নয়, কল্যাণে।
ভূপাল ‘সম্ভাবনা ট্রাস্ট’- এর ডিরেক্টর সতীনাথ সারেঙ্গি, কীভাবে কর্পোরেটরা ভারত, ব্রাজিল ও চীনের মতো দেশে উন্নয়নের বিষক্রিয়ার থাবা বসিয়ে চলেছে, তা তথ্য পরিসংখ্যানসহ উল্লেখ করেন। বর্তমানে মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রায় শীর্ষে উঠে এসেছে শিল্পজাত দূষণ। ২০১২ সালের রাষ্ট্রসংঘের ইউ.এন.ই.পি. রিপোর্ট জানাচ্ছে, প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর একটির কারণ উন্নয়নের বিষ, শিল্পজাত দূষণ। সতীনাথ জানান — বর্তমান ভারতে রাসায়নিক বিষক্রিয়া এখনই আতঙ্কজনক অবস্থায় পৌঁছেছে এবং তা প্রতিহত করার আগ্রহ বা দক্ষতা সরকারি বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। এটা খুব উদ্বেগের বিষয়।
একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চ (ফামা) আয়োজিত ‘অভী দত্ত মজুমদার স্মারক বক্তৃতা’র বিষয় ছিল ‘উন্নয়নের নামে স্বৈরাচার এবং উন্নয়নের বিষক্রিয়া’। তাতে আমন্ত্রিত বক্তা ছিলেন এই দুই সমাজকর্মী। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন কল্যাণ রুদ্র।
Leave a Reply