আজগর আলির কথা শুনে লিখেছেন -জয়নাল আবেদিন, মশালডাঙ্গা, কোচবিহার#
আমার বয়েস ১০৬ বছর। কিন্তু কোনও প্রমানপত্র নেই। কারন আমি কোনও দেশের নাগরিকই ছিলাম না। ছিটমহলে থাকতাম। গ্রামের নাম মধ্য মশালডাঙ্গা। এই গ্রামের বাইরে আমি কোঠাও যাইনি। লম্বা জীবনটা এখানেই কাটালাম। আমার ছেলের নাম আবু বকর সিদ্দিক। সে মাধ্যমিক পাস। তার স্কুলের নাম সার্টিফিকেটে লেখা আছে। বাবার নামও লেখা আছে আজগর আলি। ওটা আমার নাম হলেও লোকটা আমি না। নাজিরহটের অন্য এক আজগর আলি। তাঁকে ১০০০টাকা দিয়ে আমার ছেলের বাবা দেখানো হয়েছে। আমি যেহেতু ভারতের লোক নই, তাই আমার নাম লেখা যাবে না। আর শিক্ষাগ্রহন করতে গেলে বাবা ভাড়া করা ছাড়া আর কোনও উপায়ও ছিল না। এটা না করলে ছেলের লেখাপড়াও হত না। এট আমার সবথেকে বড় দুঃখ। আরও অনেক দুঃখ আছে আর সেগুলির জন্য এত ভাবি না। এই কথাটা এতদিন কাউকে বলিনি। আজ বলছি, জীবনের প্রায় শেষে এসে দাঁড়িয়েছি, কদিনই আর বাঁচব। এখন চোখেও দেখিনা ভালো । ফলে কাগজও পড়তে পারিনা। বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক আর নেই বললেই চলে। ছিটমহল নিয়ে কোনও আলোচনা হলে ভালো লাগে, শুনতে , মনে আশা জাগে।
আমি ভারতবর্ষ স্বাধীন হতে দেখেছি, পাকিস্তান আলাদা দেশ হতে দেখেছি। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দেখেছি। কিন্তু আমরা কোনওদিন স্বাধীন হতে পারিনি। আজ আমরা ছিটমহলবাসী মুক্তি লাভ করেছি। আমার এখন খুবই ভালো লাগছে যে আমি একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমার কবর একটা স্বাধীন দেশেই হবে। এইটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া।
Leave a Reply