• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

পুড়ে যাওয়া ষোলোবিঘা বস্তির জন্য মানবিক বিচার-বিবেচনার প্রয়োজন

December 1, 2012 admin Leave a Comment

জিতেন নন্দী, ৩০ নভেম্বর#

আমি আগে থাকতাম মেটিয়াব্রুজে। মহেশতলায় আসার পর গত বারো-চোদ্দ বছর ধরে ষোলোবিঘা বস্তির পাশ দিয়ে যাতায়াত করছি। ট্রেনে যখন সন্তোষপুর থেকে শিয়ালদায় যাই, ফিরি, তখন বস্তিটা চোখে পড়ে। সামনে দেখা যায় খাটাল, পিছনে বিশাল এক বস্তি। পচা জলের ওপর বাঁশের খুঁটির মাচা করে সারি সারি কাঁচা ঘর, আবার পাকা ঘরও আছে।
দু-বছর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে যেদিন আগুন লেগেছিল, তার পরদিন প্রথম ওই বস্তিতে গিয়েছিলাম। আগুন লেগেছিল রেললাইন লাগোয়া ঘরগুলোতে। চারটে বাচ্চা তখন মারা গিয়েছিল। কীভাবে আগুন লাগল? কেউই স্পষ্ট বলতে পারেনি। নাকি বলতে চায়নি? তিন ভাই-বোন আর ওদের বারো বছরের ছোট্ট পিসি ঘরে ঘুমোচ্ছিল। ঘরের শিকল তুলে দিয়ে ওদের বাবা-মা সন্তোষপুর স্টেশনের ২নং প্ল্যাটফর্মের ওপর চায়ের দোকান সামলাচ্ছিলেন। ঘর খোলা ছিল না। কারণ তার মাসখানেক আগে ওদের বড়ো পিসির ছেলে রেলে কাটা পড়েছিল। ঘরের পাশেই ছিল প্লাস্টিকের ডাঁই।


এবছর ২০ নভেম্বর দুপুর একটা নাগাদ আগুন লাগল। ওইসময় আমি ছিলাম ১২এডি বাসে। বাসটা যখন ষোলোবিঘা পেরিয়ে তারাতলা রোডে উঠল, তখনও আকাশ জুড়ে দেখা যাচ্ছিল কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। পরদিন থেকে বেশ কয়েকবার ওখানে গেলাম। এখনও পুরো বস্তি সম্পর্কে কিছু বলার মতো সম্যক ধারণা আমার গড়ে ওঠেনি। দুটো কারণ। প্রথমত, বস্তিটা বেশ বড়ো এবং এক বহুবিচিত্র জীবন ও জীবিকার সমাবেশ। বস্তির লোকেরাও সকলকে ঠিক মতো চেনে না। চেনবার ফুরসতও কারো নেই। দ্বিতীয়ত, এখানকার লোক বাইরের লোককে মন খুলে কথা বলে না। অনেক অভাবে-অনটনের সঙ্গেই রেখে-ঢেকে বলার বিদ্যেটা বস্তিবাসীদের যথেষ্ট রয়েছে। আর যারা পদিরহাটি, রামদাসহাটি, সন্তোষপুর, রামপুর বা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা, তারা ওদের সম্পর্কে নাক সিঁটকায়। বলে, ‘ওরা তো সব বাইরের লোক।’ কেউ বলে, ‘ওখানে সবাই ক্রিমিনাল’ ইত্যাদি। একটা বাচ্চা ছেলে একটু অন্যরকম বলেছিল, ‘ওখানে বাজে লোক আর ভালো লোক দুরকমই আছে’। ছেলেটা আমাদের পাড়ায় মুরগির মাংসের দোকানে কাজ করে, থাকে বস্তির পাশেই ১১নং ওয়ার্ডে।
গত বৃহস্পতিবার ২৭ তারিখ দুপুরে যখন গেলাম, দেখলাম স্কুলের সামনে বড়ো বড়ো উনুনে ফুলকপির তরকারি রান্না হচ্ছে। স্কুলঘরের ভিতরে লম্বা কাপড় পেতে ভাত ডাঁই করে রাখা হয়েছে। স্কুলের সামনে থেকে শুরু হয়েছে কয়েকশো থালা-বাটি-কড়াইয়ের লাইন। একটু পরেই ত্রাণের খাবার বিতরণ শুরু হবে। শুনলাম, জেলা প্রশাসন থেকে পুড়ে যাওয়া ঘরের বাসিন্দাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ত্রিপল আর কম্বলও বিতরণ হয়েছে। এরকমই নাকি হয়ে থাকে! এবার বস্তি পুড়ে যাওয়ার পর এক বস্তিবাসী নির্লিপ্তভাবে বলছিলেন, ‘এই পর্যন্ত বস্তি পুড়ল পাঁচবার। ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে। জবা নস্কর যখন কাউন্সিলার ছিলেন তখন একবার পুড়েছে; দুলাল দাস যখন কাউন্সিলার ছিলেন তখন একবার পুড়েছে; ২০১০ সালে একবার পুড়েছে; পুকুরের ওপাশে একবার পুড়েছে; এবার একবার পুড়ল। ১৯৯৯ সালে বাচ্চু ব্যানার্জি মারা গেল। সেটাকে কেন্দ্র করে বস্তি পুড়িয়ে দেওয়া হল কালীনগর থেকে এসে। ২০১০ সালে যখন পুড়ে গেল তিনটে পার্টির লোক এসে ত্রিপল, শাড়িকাপড় আর খাওয়াদাওয়া দিয়েছে কদিন। ওই খেয়েদেয়ে শেষ। আজকেও যারা আসছে সব ইমেজ রক্ষা করার জন্য। আমাদের বন্ধু হিসেবে কেউ নেই। …’
এই বাচ্চু ব্যানার্জি কে? বস্তির সেক্রেটারি বলে পরিচিত ইদ্রিস আলি মিঞা বলেন, ‘আমি ১৯৯০ সালের পরে এখানে এসেছি। তখন চল্লিশ-বিয়াল্লিশ ঘর লোক ছিল। এখানে এসে আমি ধান চাষ করেছি। আমার কাগজ আছে। কাশীনাথ ব্যানার্জির (তখনকার পঞ্চায়েত প্রধান) ভাই বাচ্চু ব্যানার্জি আমাদের বস্তির দেখভাল করত। সে আমাকে জায়গা দিয়েছিল ঘর বাঁধার জন্য। ওনার নেতৃত্বে বাবাজিরা বসত চায়ের দোকানে। দোকানটা ছিল বস্তির মুখে। সাত হাজার টাকা দিয়ে জায়গা নিয়েছিলাম। টাকা নিয়েছিল বাজারপাড়ার আমজাদ আলি শেখ ওরফে সালু। লোকে ওকে সেক্রেটারি বলত। বর্তমানে আমি সেক্রেটারি (২০০১ সাল থেকে আরজি পার্টির সেক্রেটারি)। এই যত লোক বস্তিতে বাস করছে, প্রত্যেকের টাকা দিয়ে কেনা সম্পত্তি। কেউ সোনার কাছ থেকে কিনেছে ওই সোনার বাগানে। তার আগে আমি থাকতাম পদিরহাটি বাদামতলায় লিল্লা বা আলাউদ্দিন মিঞার বাড়িতে।’
এর মধ্যেই একদিন চলে গেলাম প্রয়াত বাচ্চু ব্যানার্জির দাদা কাশীনাথ ব্যানার্জির বাড়িতে। কাশীনাথ ব্যানার্জি ১৯৮৮ সালে রামদাসহাটি ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। ১৯৯৩ সালে মহেশতলা মিউনিসিপ্যালিটি হওয়ার পর তিনি কাউন্সিলার হয়েছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমার ভাই বাচ্চু কলকাতার মাঠে ফার্স্ট ডিভিসনে ফুটবল খেলত। আসামে খেলতে গিয়েছিল ওএনজিসি-র হয়ে। যেদিন চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেবে, তার আগের দিন ‘আসু’ বলল, এখান থেকে চলে যাও। ওর হাতে টিকিট ধরিয়ে দিল। ও চলে আসার পরে ডিমরালাইজড হয়ে গেল। খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে ও ষোলোবিঘায় গেল। ওখানেই থাকত। আমাদের বাড়ির সঙ্গে কোনো সম্পর্কই রাখত না। বাচ্চু ওখানে লোক বসায়নি।’
কিন্তু ষোলোবিঘায় লোক বসানো হয়। যারা বসায়, তারা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাবান মানুষ। যারা বসে, তারা অভাবি মানুষ। ঘরভাড়া নেওয়ার সামর্থ্য তাদের অনেকেরই নেই। দূর-দূরান্ত থেকে, এমনকী বঙ্গোপসাগরের কোলে সুন্দরবনের দ্বীপগুলো থেকে মানুষ এখানে এসে ঘর বেঁধেছে।
সরকারিভাবে ষোলোবিঘা ‘অবৈধ’ বস্তি। মহেশতলা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান কালী ভাণ্ডারির আমলে এখানে ১৩৬টা বস্তিকে বৈধ হিসেবে চিহ্নিত করে উন্নয়নের কর্মসূচি (জহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন-এর প্রকল্পে) নেওয়া হয়েছিল। বাদ পড়েছিল ষোলোবিঘা সমেত ১৮টা বস্তি; যেমন, খালপাড় বরাবর বস্তি, আকড়া ফটকের বাজার এলাকার ঘরবাড়ি, নয়াবস্তি, লালবস্তি, ডিপো, ফুলতলা বস্তি ইত্যাদি। ‘রাইট ট্র্যাক’ এনজিও-র প্রতিনিধি মহম্মদ ইসরাফিলের বক্তব্য, এই বস্তিগুলোর প্রত্যেকটিতে ৬০০০ থেকে ১০০০০ পর্যন্ত মানুষ বাস করে। তাহলে আমরা আন্দাজ করে নিতে পারি, মহেশতলায় সরকারি ভাষায় ‘অবৈধ’ বস্তিবাসীর সংখ্যা দেড় লক্ষের কম নয়। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী মহেশতলার ‘বৈধ’ জনসংখ্যা সাড়ে চার লক্ষের কাছাকাছি। এর মধ্যে ‘বৈধ’ বস্তিগুলোর মোট জনসংখ্যা সত্তর লক্ষের সামান্য বেশি। তাহলে যে বস্তিগুলোকে আমরা ‘অবৈধ’ বলে কালো তালিকাভুক্ত করছি, তারা এখানকার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি। আর ‘বৈধ’ বাসিন্দাদের মধ্যে অন্তত কয়েক হাজার মানুষ আকড়া ফটক থেকে সন্তোষপুর হয়ে পাহাড়পুর পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে সরকারি জমিতে দোকানপাট করে জীবিকা অর্জন করছে। এদেরও কি কালো তালিকাভুক্ত করা হবে? তা কখনোই সম্ভব নয়।
তাহলে প্রশ্নটা ‘বৈধ’ আর ‘অবৈধ’ ভাগাভাগির নয়। প্রশ্নটা মানবিক বিচার-বিবেচনার। সেখানে কোনো ভাগাভাগি চলে না।

মানবাধিকার উচ্ছেদ, বস্তি, মহেশতলা, ষোলোবিঘা

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in