২৯ জুলাই, অমিতা নন্দী, রবীন্দ্রনগর, মহেশতলা#
কয়েকদিন ধরেই শুনছিলাম গার্ডেনরীচের রামদাসহাটি অঞ্চলে একটা সাম্প্রদায়িক ঝামেলা চলছে। ব্যাপারটা কী জানতে বুঝতে চাইছিলাম। কর্মসূত্রে প্রায় প্রতিদিন রামদাসহাটির মধ্যে দিয়ে আমাকে যাতায়াত করতে হয়। সেদিন অটোয় চড়ে ফেরার পথে অটোচালকের কাছ থেকে ঘটনাটা শুনলাম।
ফতেপুর বাঁধাবটতলা থেকে রামদাসহাটির মধ্যে দিয়ে সন্তোষপুর স্টেশনের দিকে যে পথ সেটা একদম মিশ্র এলাকা — মাঝে মাঝেই মুসলমানপাড়া, আবার তার আগে বা পরেই হিন্দুপাড়া। প্রতি বছরই মুসলিম পরবের সময় — বিশেষত ঈদ-উল-ফিতরের সময় পাড়ায় পাড়ায় কয়েক হাত দূরে দূরে রাস্তার পাশে মঞ্চ তৈরি হয়, প্যান্ডেল হয়, সেখানে প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে অল্পবয়সি কিশোর-যুবকেরা নানারকম জলসা করে, গানবাজনা চলে। কিছু বয়স্ক লোকজনও সেখানে থাকে। এবার রামদাসহাটির কিছু ছেলে এমন একটি জায়গায় প্যান্ডেল বানায় যেটা নাকি হিন্দুদের জমি। ফলে স্থানীয় হিন্দুরা চটে যায়। থানা থেকে পুলিশ এসে মাইকে ঘোষণা করে, গত বছর যে যেখানে মঞ্চ করেছে, এবার তার থেকে আলাদা আর কোথাও কিছু করা যাবে না। তার পরদিন স্থানীয় মসজিদ কমিটির লোকেরা এসে ওই মঞ্চ ভেঙে দেন এবং তাঁরা ঘোষণা করেন, যদি এইসব পাড়ায় ছেলেপিলেরা পথচলতি কোনো মানুষের অসুবিধা করে কিংবা মেয়েদের টোন-টিটকারি দেয়, তাহলে যেন তারা মসজিদ কমিটিকে জানায়। তাঁরা বুঝে নেবেন।
শুনে তো আমার ভালোই লাগল। যাক্ বাবা, একটা ঝামেলা মিটল। বড়োসড়ো কিছু হল না। এভাবে যদি সমাজের মধ্য থেকেই বয়স্ক মানুষেরা এগিয়ে এসে উঠতি ছেলে-ছোকরাদের সামলে নেন তো ভালো কথা।
এই ঘটনাটা সেদিন বলছিলাম আমাদের বাড়িতে আসা দুই যুবকের কাছে। ওরা মুসলিম-অধ্যুষিত আকড়া অঞ্চলে থাকে। একজন জন্মসূত্রে হিন্দু, অন্যজন মুসলিম — দুজন খুব ভালো বন্ধু এবং অনেকটাই মুক্তমনের মানুষ। মুসলিম যুবকটি শুনেই বলল, এটা মোটেই ভালো কিছু নয়। এর মধ্যে যথেষ্ট খারাপ একটা ব্যাপার আছে।
— কী সেটা?
— এই যে পুলিশ-প্রশাসন অর্থাৎ রাষ্ট্র, তারা কেন দায়িত্ব নিয়ে বেআইনি মঞ্চটা ভাঙতে পারল না? তারা আসলে মনে করে তারা ‘হিন্দু’। এবং রাষ্ট্রের চোখে মুসলিমরা হল ‘অপর’ সম্প্রদায়ের। তাই মুসলিমদের মধ্যে কেউ কোনো অন্যায় করলে তাকে শাসন করা বা সামলানোর দায়িত্ব মুসলিম সমাজের মুরুব্বিদের। তাহলে, এই রাষ্ট্র কি ধর্ম-নিরপেক্ষ?
Leave a Reply