পুরস্কারের বাজারে যখন বেশ রমরমা চলছে, পশ্চিমবঙ্গে নিত্যনতুন পুরস্কারের ঢল নামছে, পুরস্কার প্রাপকদের নিয়ে আমাদের ছোটোবেলার সেই কৌতুহল আর নেই। মনেও রাখা যায় না কে কবে কোন পুরস্কার পাচ্ছে। তবে মিডিয়াতে এসব নিয়ে হইচইয়ের অন্ত নেই। তারই মধ্যে এখন শ্রেষ্ঠ শারদীয়া পূজার প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের ব্যাপারটা মফস্সল পাড়াগাঁ পর্যন্ত নেমে এসেছে। এব্যাপারে মিডিয়ার ভূমিকা (না উসকানি?) অনস্বীকার্য। মিডিয়ার এই ভূমিকা নিয়ে নোবেল পুরস্কার কবে চালু হবে?
এবছর নোবেল শান্তি পুরস্কার যুগ্মভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতে এসেছে। আনন্দের মাঝেও কারও কারও মনে একটু দুঃখ, পাকিস্তান না পেলেই ভালো হত! পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইকে এদেশে অনেকেই চেনে মিডিয়ার দৌলতে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে মালালা ৩৫টা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। তুলনায় কৈলাস সত্যার্থীকে কে চিনত! কিন্তু তাঁর ঝুলিতেও আন্তর্জাতিক পুরস্কার কম নেই। ১৯৯৪ সাল থেকে এক নাগাড়ে পুরস্কার জিতে পশ্চিমি জগতে নামকরা সমাজসেবী কৈলাস সত্যার্থী। এই দুজনকে কেন পুরস্কৃত করা হল? মালালা শিশুশিক্ষা (বিশেষত মেয়েদের শিক্ষা) এবং কৈলাস শিশুশ্রমের বিলোপ নিয়ে কাজ করছেন। তাই তাঁদের শান্তি পুরস্কার দেওয়া হল।
বহুকাল ধরেই নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকদের নির্বাচন নিয়ে কিছু সমালোচনা ওঠে। এবারও উঠতে শুরু করেছে। পশ্চিমি ণ্ণসবুজ বিপ্লব’-এর জনক নরম্যান ই বোরলাগ-কে ১৯৭০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। সেই সবুজ বিপ্লব এখন খাদ্য ও চাষের জগতে ভয়াবহ অশান্তি ডেকে এনেছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাকে তাঁর রাষ্ট্রপতিত্বের প্রথম বছরেই এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। তখনও তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কিছুই করবার সুযোগ পাননি, কিন্তু পুরস্কারের দৌলতে আন্তর্জাতিক শান্তির দূত বনে গেলেন। আর আজ সেই ওবামার নেতৃত্বে সিরিয়ার ওপর বোমাবর্ষণ চলছে, যার মূল কথাই হল চোখের বদলে চোখ, হিংসার বদলা প্রতিহিংসা।
পুরস্কার নিয়ে আমাদের ছোটো ছোটো সুখ আর দুঃখের আদিখ্যেতার আড়ালেও কিছু ঘটতে থাকে। যে তালিবান জমানার বিরুদ্ধে মালালা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁর সেই লড়াইকে প্রতীক করে পশ্চিমি সভ্যতা আর সংস্কৃতি নিজেদের দাদাগিরি চালিয়ে যেতে চাইছে। যে দাদাগিরি তালিবানের চেয়ে কম খতরনাক নয়। কৈলাসকে পুরস্কার দিয়ে শ্রমিক-শিশুদের নিয়ে দরদ দেখাতে চাইছে পশ্চিমি দাদারা। অথচ ভারত সরকারের ণ্ণমেক ইন ইন্ডিয়া’ শ্লোগানের আড়ালে কর্পোরেট দুনিয়া তাদের যাবতীয় প্রোডাকশন এদেশে সস্তায় করিয়ে নিতে খুবই তৎপর। পরিবেশ দূষণকারী যাবতীয় ঝঞ্ঝাটের কাজ এদেশে করিয়ে নেব, আবার শ্রমিক-শিশুদের নিয়ে দরদও দেখাব — এটাই হল পশ্চিমি দ্বিচারিতা। কৈলাস সত্যার্থীকে পুরস্কৃত করার মধ্যে ওই মনোবৃত্তির প্রতিফলন রয়েছে।
Leave a Reply